ভারতের করদাতাদের জন্য আয়কর রিটার্ন (Income Tax Return বা ITR) সময়মতো ফাইল করা শুধু মাত্র আইনি বাধ্যবাধকতা নয়, বরং আর্থিকভাবে বুদ্ধিদীপ্ত পদক্ষেপও বটে। অনেক সময় দেখা যায়, নির্দিষ্ট সময়সীমা পেরিয়ে গেলে শুধুমাত্র বিলম্বজনিত জরিমানাই নয়, বরং আরও বড় ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। বিশেষ করে ব্যবসায়িক ক্ষতি বা ক্যাপিটাল লসের ক্ষেত্রে “সেট-অফ” এবং “ক্যারি ফরওয়ার্ড”-এর সুযোগ হারিয়ে যায়। ফলে করযোগ্য আয়ের পরিমাণ বেড়ে যায় এবং করের বোঝা ভারী হয়ে ওঠে।
কেন সময়মতো ITR ফাইল করা জরুরি?
আয়কর আইন অনুযায়ী (Income Tax Act, 1961), একজন করদাতা তার ক্ষতিগুলো নির্দিষ্ট শর্তে আয় থেকে বাদ দিয়ে করযোগ্য আয়ের পরিমাণ কমাতে পারেন। এটিই “সেট-অফ” নামে পরিচিত। আবার, যদি সেই ক্ষতি চলতি অর্থবছরে পুরোপুরি সমন্বয় করা সম্ভব না হয়, তবে তা ভবিষ্যতের আর্থিক বছরে নিয়ে যাওয়া যায় — যাকে বলা হয় “ক্যারি ফরওয়ার্ড”।
তবে এর জন্য একটি মৌলিক শর্ত রয়েছে: ITR নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে ফাইল করতে হবে। যদি নির্দিষ্ট তারিখ পেরিয়ে যায়, তবে Section 80 এবং Section 139 অনুযায়ী ব্যবসায়িক ক্ষতি ও ক্যাপিটাল লস ভবিষ্যতের জন্য বহন করা যায় না। শুধু মাত্র হাউস প্রপার্টি (House Property) থেকে ক্ষতির ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম রাখা হয়েছে।
একটি কল্পিত চরিত্র সুদেশ (Suresh) এই ব্যাপারটি ভালোভাবে বোঝায়।
সুদেশ একজন ফিউচারস অ্যান্ড অপশনস (F&O) ট্রেডার। অর্থবছরে তার মোট আয় ছিল ১০ লক্ষ টাকা। এর মধ্যে ৬ লক্ষ টাকার ব্যবসায়িক ক্ষতি হয়েছিল। অন্যদিকে, শেয়ার থেকে স্বল্পমেয়াদী ক্যাপিটাল গেইন (STCG) হয়েছিল ৪ লক্ষ টাকা, কিন্তু সেইসঙ্গে ৩ লক্ষ টাকার ক্যাপিটাল লস (STCL) হয়েছিল।
যদি সুদেশ সময়মতো রিটার্ন ফাইল করতেন, তবে তিনি তার ব্যবসায়িক ক্ষতি ও ক্যাপিটাল লসকে আয়ের বিপরীতে সেট-অফ করতে পারতেন। এতে তার করযোগ্য আয় দাঁড়াত মাত্র ৫ লক্ষ টাকা, এবং কর দিতে হতো প্রায় ২০,৮০০ টাকা।
কিন্তু যেহেতু তিনি নির্দিষ্ট তারিখের পরে রিটার্ন জমা দিয়েছিলেন, তাই আইন অনুসারে কোনো সেট-অফ বা ক্যারি ফরওয়ার্ড সুবিধা পাননি। ফলে তার করযোগ্য আয় দাঁড়াল ১৪ লক্ষ টাকা, এবং তাকে কর দিতে হলো ১.১৪ লক্ষ টাকা। অর্থাৎ, কেবল বিলম্বের কারণে ২.২৮ লক্ষ টাকার অতিরিক্ত ক্ষতির বোঝা চাপল।
কোন কোন ক্ষতি সেট-অফ ও ক্যারি ফরওয়ার্ড করা যায়?
১. ব্যবসায়িক ক্ষতি (Business Loss):
সময়মতো ITR ফাইল করলে এটি ভবিষ্যতের আয়ের বিপরীতে সেট-অফ করা যায়।
দেরিতে ফাইল করলে শুধু একই বছরের মধ্যে ব্যবসায়িক আয়ের বিপরীতে কিছুটা সমন্বয় সম্ভব, তবে পরবর্তী বছরে বহন করা যায় না।
২. ক্যাপিটাল লস (Capital Loss):
স্বল্পমেয়াদী ক্যাপিটাল লস (STCL) স্বল্পমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী গেইনের বিপরীতে সেট-অফ করা যায়।
দীর্ঘমেয়াদী ক্যাপিটাল লস (LTCL) শুধু দীর্ঘমেয়াদী গেইনের বিপরীতে সেট-অফ হয়।
কিন্তু ITR দেরিতে ফাইল করলে এগুলো ভবিষ্যতে বহন করার সুবিধা হারিয়ে যায়।
৩. হাউস প্রপার্টি থেকে ক্ষতি (Loss from House Property):
এটি একমাত্র ব্যতিক্রম। সময়সীমা পেরিয়ে গেলেও এই ক্ষতি প্রতি বছর ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত সেট-অফ করা যায় এবং পরবর্তী ৮ বছর পর্যন্ত বহন করা যায়।
Section 71: একই বছরের মধ্যে আয়ের বিপরীতে ক্ষতির ইনট্রা-হেড সেট-অফ অনুমোদন করে, এমনকি দেরি হলেও।
Section 80: ভবিষ্যতের জন্য ক্ষতি বহন করতে হলে নির্ধারিত সময়ে ITR জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক।
Section 139(3): ক্ষতি বহন করার জন্য করদাতাকে সময়মতো রিটার্ন দাখিল করতে হবে।
যেসব ব্যক্তির আয় নিরীক্ষার আওতায় পড়ে না, তাদের জন্য ২০২৫ অর্থবছরের রিটার্ন জমা দেওয়ার শেষ তারিখ হলো ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫। এই সময়ের মধ্যে ফাইল করলে করদাতা শুধু জরিমানাই এড়াতে পারবেন না, বরং নিজের ক্ষতিকে ভবিষ্যতে ট্যাক্স প্ল্যানিংয়ের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন। অন্যদিকে, তারিখ পেরিয়ে গেলে কেবল ৫,০০০ টাকা পর্যন্ত জরিমানাই নয়, বরং হাজার হাজার টাকার কর ক্ষতির বোঝাও বইতে হবে।
আইটিআর সময়মতো ফাইল করা শুধুমাত্র একটি আইনি বাধ্যবাধকতা নয়, বরং আর্থিক পরিকল্পনার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বিশেষ করে ব্যবসা, শেয়ার বাজার বা ক্যাপিটাল অ্যাসেটে যুক্ত করদাতাদের জন্য এটি আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। একবার সময়সীমা পেরিয়ে গেলে “সেট-অফ” ও “ক্যারি ফরওয়ার্ড”-এর সুযোগ চিরতরে হারিয়ে যায়।
অতএব, করদাতাদের উচিত শেষ মুহূর্তে না রেখে যথাসময়ে ITR ফাইল করা। এতে শুধু করের দায় কমবে না, বরং ভবিষ্যতের জন্যও আর্থিক সুবিধা তৈরি হবে। সময়সীমা মেনে চলা মানেই আর্থিক ক্ষতি এড়ানো এবং সঠিক ট্যাক্স প্ল্যানিং করা।