নিয়মিত আয়ের জন্য ডিভিডেন্ড ফান্ড কেন অপরিহার্য? জেনে নিন ৫টি কারণ

অর্থ বিনিয়োগের জগতে ডিভিডেন্ড (Dividend Yield Funds) একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শেয়ার বাজারে সরাসরি বিনিয়োগ হোক বা মিউচুয়াল ফান্ডের মাধ্যমে—ডিভিডেন্ডের মাধ্যমে আয় পাওয়া…

Why Dividend Yield Funds Are Essential for Regular Income: 5 Key Reasons

অর্থ বিনিয়োগের জগতে ডিভিডেন্ড (Dividend Yield Funds) একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শেয়ার বাজারে সরাসরি বিনিয়োগ হোক বা মিউচুয়াল ফান্ডের মাধ্যমে—ডিভিডেন্ডের মাধ্যমে আয় পাওয়া যায়। অনেক কোম্পানি তাদের মুনাফার একটি অংশ শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে বণ্টন করে ডিভিডেন্ড আকারে। অনুরূপভাবে, অনেক মিউচুয়াল ফান্ডও ডিভিডেন্ড প্রদানের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের আয় তৈরি করে। এই ফান্ডগুলি সাধারণত উচ্চ ডিভিডেন্ড দেওয়া স্টক, সুদ-আধারিত বন্ড বা এই দুটির মিশ্রণে বিনিয়োগ করে এবং সেগুলির আয় সরাসরি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিতরণ করে।

এই ধরনের মিউচুয়াল ফান্ড বিশেষভাবে তাদের জন্য উপযুক্ত, যারা নিয়মিত আয়ের খোঁজ করছেন এবং ঝুঁকি কম রাখতে চান। চলুন দেখে নিই কীভাবে ডিভিডেন্ড ইয়েল্ড মিউচুয়াল ফান্ড কাজ করে এবং কারা এতে বিনিয়োগ করতে পারেন।

   

ডিভিডেন্ড ইয়েল্ড মিউচুয়াল ফান্ড কী?
ডিভিডেন্ড ইয়েল্ড মিউচুয়াল ফান্ড হল এক ধরনের ইকুইটি মিউচুয়াল ফান্ড যা এমন কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করে যারা নিয়মিত এবং তুলনামূলকভাবে বেশি হারে ডিভিডেন্ড দিয়ে থাকে। এই ফান্ডগুলির পোর্টফোলিওতে সাধারণত ব্লু-চিপ কোম্পানি, ইউটিলিটি কোম্পানি এবং রিয়েল এস্টেট কোম্পানির শেয়ার থাকে—যারা ধারাবাহিকভাবে ডিভিডেন্ড দিয়ে থাকে এবং আর্থিক দিক থেকে শক্তিশালী।

এই ফান্ডের মূল লক্ষ্য হল বিনিয়োগকারীদের নিয়মিত আয়ের ব্যবস্থা করা। একই সঙ্গে, এটি ইকুইটিতে কম ঝুঁকিতে বিনিয়োগের সুযোগ দেয়। পোর্টফোলিওতে বিভিন্ন সেক্টরের শেয়ার থাকায় ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়। কিছু ফান্ড এমনকি আন্তর্জাতিক ডিভিডেন্ড দেওয়া স্টকেও বিনিয়োগ করে, যা বৈশ্বিক বৈচিত্র্যও নিয়ে আসে।

মিউচুয়াল ফান্ড কীভাবে ডিভিডেন্ড দেয়?
উচ্চ ডিভিডেন্ড ইয়েল্ড ফান্ড সাধারণত দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগকারীদের কাছে আকর্ষণীয় হয়, যারা একটি স্থায়ী আয়ের ধারা তৈরি করতে চান। এই ফান্ডগুলি এমন শেয়ার এবং বন্ডে বিনিয়োগ করে যা নিয়মিত ডিভিডেন্ড বা সুদ প্রদান করে।
ডিভিডেন্ড ইয়েল্ড ফান্ডের স্ট্র্যাটেজি নির্ভর করে মূলত বিনিয়োগের লক্ষ্য এবং ফান্ড ম্যানেজারের কৌশলের ওপর। এর মাধ্যমে বিনিয়োগকারীরা দুইভাবে লাভবান হন—একদিকে নিয়মিত আয়ের সুবিধা, অন্যদিকে মূলধনের সম্ভাব্য বৃদ্ধি।

ডিভিডেন্ড ইয়েল্ড ফান্ডে বিনিয়োগের সুবিধা:
ডিভিডেন্ড ইয়েল্ড মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগের প্রধান সুবিধা হল পোর্টফোলিও বৈচিত্র্য। একটি নির্দিষ্ট শেয়ারের ওপর নির্ভর না করে বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার এবং বন্ডে বিনিয়োগ করা হয়। এর ফলে ঝুঁকি কমে এবং আয়ের ধারাবাহিকতা বজায় থাকে।

এই ধরনের ফান্ড মূলত স্থিতিশীল কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে, যারা আর্থিক দিক থেকে শক্তিশালী এবং নিয়মিত ডিভিডেন্ড প্রদান করে। ফলে, বিনিয়োগকারীরা তুলনামূলকভাবে নিরাপদ পরিবেশে ইকুইটিতে বিনিয়োগ করতে পারেন।

Advertisements

ডিভিডেন্ড ইয়েল্ড ফান্ড নতুন বিনিয়োগকারীদের জন্যও আদর্শ। যারা সরাসরি শেয়ার বাজারের অনিশ্চয়তা থেকে বাঁচতে চান এবং একইসঙ্গে নিয়মিত আয়ের সুযোগ খুঁজছেন, তাদের জন্য এটি ভালো বিকল্প।

কারা বিনিয়োগ করবেন?
যেসব বিনিয়োগকারী ইকুইটি মার্কেটে বিনিয়োগ করতে চান, কিন্তু উচ্চ ভোলাটিলিটি পছন্দ করেন না, তাদের জন্য ডিভিডেন্ড ইয়েল্ড ফান্ড একটি চমৎকার উপায়। এই ফান্ডের বিনিয়োগ করা হয় এমন কোম্পানিতে, যারা আর্থিকভাবে শক্তিশালী এবং ধারাবাহিকভাবে ডিভিডেন্ড দিয়ে থাকে। ফলে, নিয়মিত আয় পাওয়ার পাশাপাশি মূলধনেরও বৃদ্ধি হতে পারে।

অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের জন্যও এই ফান্ড একটি ভালো বিকল্প হতে পারে। নিয়মিত আয়ের চাহিদা মেটানোর জন্য ডিভিডেন্ড একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস হিসেবে কাজ করে। একইসঙ্গে, পোর্টফোলিওতে ইকুইটির উপস্থিতি মূলধনের মূল্যবৃদ্ধির সুযোগও রাখে।

বর্তমান সময়ে যখন শেয়ার বাজারের ওঠানামা বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কিত করে, তখন ডিভিডেন্ড ইয়েল্ড মিউচুয়াল ফান্ড নিরাপদ ও স্থিতিশীল আয়ের নিশ্চয়তা দিতে পারে। যারা দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগ করে ধীরে ধীরে আয় বৃদ্ধি করতে চান এবং ঝুঁকি সীমিত রাখতে চান, তাদের জন্য এই ধরনের ফান্ড একটি আকর্ষণীয় বিকল্প।

তবে বিনিয়োগের আগে অবশ্যই নিজের আর্থিক লক্ষ্য, ঝুঁকির ক্ষমতা এবং বাজার বিশ্লেষণ করে নেওয়া উচিত। উপযুক্ত আর্থিক উপদেষ্টার পরামর্শ নেওয়াও বুদ্ধিমানের কাজ। সঠিক পরিকল্পনা এবং তথ্যের ভিত্তিতে বিনিয়োগ করলে ডিভিডেন্ড ইয়েল্ড ফান্ড আপনার আর্থিক ভবিষ্যতকে আরও মজবুত ও সুরক্ষিত করতে পারে।