ক্ষুদ্র শিল্পে এগিয়ে! আধুনিক বৃহৎ শিল্পে এখনও পিছিয়ে বাংলা

ভারত সরকার ২০২৪–২৫ অর্থবর্ষে দেশের মোট বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ (FDI) পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। সরকারি তথ্যে দেখা যাচ্ছে, ভারত চলতি অর্থবর্ষে মোট $৮১.০৪ বিলিয়ন FDI আকর্ষণ…

Foreign investment, Bengal industrial growth

ভারত সরকার ২০২৪–২৫ অর্থবর্ষে দেশের মোট বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ (FDI) পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। সরকারি তথ্যে দেখা যাচ্ছে, ভারত চলতি অর্থবর্ষে মোট $৮১.০৪ বিলিয়ন FDI আকর্ষণ করেছে। তবে এই বিপুল অঙ্কের বিনিয়োগের কেন্দ্রীকরণ হয়েছে কয়েকটি নির্দিষ্ট রাজ্যে।

শীর্ষ পাঁচ রাজ্য যেখানে সর্বাধিক বিদেশি বিনিয়োগ প্রবাহ ঘটেছে, সেগুলি হল —
১. মহারাষ্ট্র: $১৯.৫৮ বিলিয়ন
২. কর্ণাটক: $৬.৬১ বিলিয়ন
৩. দিল্লি: $৬.০৯ বিলিয়ন
৪. গুজরাট: $৫.৭১ বিলিয়ন
৫. তামিলনাড়ু: $৩.৬৮ বিলিয়ন

   

এই তালিকায় পশ্চিমবঙ্গের নাম অনুপস্থিত। যদিও বাংলার অর্থনীতি একাধিক খাতে অগ্রগতি দেখিয়েছে, বিশেষত MSME বা ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে, তথাপি বড় মাপের আধুনিক শিল্পে বিনিয়োগের অভাব চোখে পড়ার মতো। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটাই বাংলার অর্থনীতির পরিকাঠামোগত সীমাবদ্ধতার পরিচায়ক।

বাংলার শক্তি: MSME খাত
পশ্চিমবঙ্গ সরকার ও রাজ্যের বাণিজ্যিক মহল দীর্ঘদিন ধরেই MSME সেক্টরকে উৎসাহ দিয়ে এসেছে। হুগলি, হাওড়া, বর্ধমান, নদীয়া, মালদহ সহ বিভিন্ন জেলায় গড়ে উঠেছে ছোট ও মাঝারি শিল্পের হাব। হস্তশিল্প, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, পোশাক শিল্প, চামড়া শিল্প, জুতো প্রস্তুতকারক সংস্থা, এমনকি রুরাল ইন্ডাস্ট্রি গুলিও এই রাজ্যে সফলভাবে চলছে।
রাজ্য সরকার জানায়, বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গে প্রায় ৮৯ লক্ষ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প সংস্থা সক্রিয়। এই খাত প্রায় ১.৪ কোটি মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি করেছে। এমনকি MSME-তে নারী উদ্যোক্তাদের অংশগ্রহণও উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।

কিন্তু আধুনিক বৃহৎ শিল্প?
বিপরীতে, বড় শিল্প গড়ে তোলার ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ এখনও অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় পিছিয়ে। মহারাষ্ট্র ও গুজরাটে যেমন অটোমোবাইল, ফার্মা, প্রযুক্তিনির্ভর উৎপাদন সংস্থা গড়ে উঠেছে, তেমন আধুনিক শিল্প বাংলায় দেখা যায় না। রাজ্যে এখনও পর্যন্ত টেসলা, অ্যাপল, গুগলের মতো বহুজাতিক প্রযুক্তি সংস্থাগুলির কোনো লগ্নি হয়নি।

Advertisements

বিশেষজ্ঞদের মতে, এর পিছনে রয়েছে কিছু মূল কারণ —

  • জমি সমস্যার ইতিহাস
  • রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ঘাটতি
  • উপযুক্ত অবকাঠামোর অভাব (বিশেষত শিল্পাঞ্চলে বিদ্যুৎ, রেল ও রোড কানেক্টিভিটি)
  • দক্ষ মানবসম্পদের ঘাটতি

তবে রাজ্য সরকার এই সীমাবদ্ধতা দূর করতে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে। শিল্প নীতিতে নতুন সংশোধন, এক-জানালা পদ্ধতির বাস্তবায়ন, কর ছাড় ও জমির হ্রাসমূল্যে বরাদ্দের মতো নীতিগত সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।

ভবিষ্যতের দিশা
বিশ্ব অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি দেখলে বোঝা যায়, আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর শিল্প এবং সবুজ শক্তি খাত আগামী দিনের বিনিয়োগ আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হবে। পশ্চিমবঙ্গ যদি দক্ষ জনবল তৈরি, অবকাঠামো উন্নয়ন ও স্থিতিশীল নীতিনির্ধারণ করতে পারে, তাহলে বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত খুলতে পারে।

তবে আপাতত চিত্র বলছে, পশ্চিমবঙ্গ তার MSME খাতের শক্তির উপর দাঁড়িয়ে থাকলেও, FDI আকর্ষণের দৌড়ে দেশের প্রথম সারিতে জায়গা করে নিতে পারেনি। তাই নীতিনির্ধারকদের জন্য এ এক বড় চ্যালেঞ্জ — কীভাবে এই ব্যবধান কমানো যায় এবং পশ্চিমবঙ্গকে FDI ম্যাপে দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করা যায়।