ভারতের নিয়ন্ত্রক ও মহালেখা পরীক্ষক (CAG) সম্প্রতি প্রকাশিত একটি রিপোর্টে (CAG Report) দেশের বিভিন্ন রাজ্যের আর্থিক পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্লেষণ তুলে ধরেছে, যা আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরের এই রিপোর্ট অনুযায়ী, দেশে ১৬টি রাজ্য রাজস্ব উদ্বৃত্ত অর্জন করেছে, যেখানে ১২টি রাজ্য রাজস্ব ঘাটতির মুখোমুখি হয়েছে। এই ঘাটতির তালিকায় পশ্চিমবঙ্গ চতুর্থ স্থানে অবস্থান করছে, যা রাজ্যের জন্য এক গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রিপোর্ট অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গের রাজস্ব ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২৭,২৯৫ কোটি টাকা। রাজস্ব ঘাটতির তালিকায় প্রথম তিনটি রাজ্য হলো: আন্ধ্রপ্রদেশ (৪৩,৪৮৮ কোটি টাকা), তামিলনাড়ু (৩৬,২১৫ কোটি টাকা), এবং রাজস্থান (৩১,৪৯১ কোটি টাকা)। পশ্চিমবঙ্গের পরে পঞ্চম স্থানে রয়েছে পঞ্জাব, যার ঘাটতির পরিমাণ ২৬,০৪৫ কোটি টাকা।
বিশ্লেষকদের মতে, পশ্চিমবঙ্গের রাজস্ব ঘাটতির পেছনে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে। রাজ্যের নির্ধারিত ব্যয় যেমন — সরকারি কর্মচারীদের বেতন, পেনশন, সুদের বোঝা এবং বিভিন্ন সামাজিক সহায়তা প্রকল্পে ব্যয় উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এই ব্যয় বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে রাজস্ব আদায় বা আয়ের পরিমাণ বাড়েনি, যার ফলে রাজস্ব ঘাটতি ক্রমেই উদ্বেগজনক হয়ে উঠেছে।
আরও একটি গুরুতর দিক হলো রাজ্যের ঋণের পরিমাণ। রিপোর্ট অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গের মোট ঋণের পরিমাণ ২০১৩ সালের তুলনায় প্রায় তিন গুণ বেড়ে বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ৫৯.৬ লক্ষ কোটি টাকা। এই ঋণের বোঝা ভবিষ্যতে রাজ্যের উন্নয়নমূলক ব্যয় সংকোচনের আশঙ্কা বাড়াচ্ছে এবং রাজস্ব ঘাটতি আরও গভীরতর হওয়ার সম্ভাবনাও তৈরি করছে।
অপরদিকে, রাজস্ব উদ্বৃত্ত অর্জনকারী রাজ্যগুলির মধ্যে শীর্ষে রয়েছে উত্তর প্রদেশ (৩৭,০০০ কোটি টাকা), গুজরাট (১৯,৮৬৫ কোটি টাকা) এবং ওড়িশা (১৯,৪৫৬ কোটি টাকা)। এই রাজ্যগুলির অর্থনৈতিক সাফল্যের পেছনে কর সংগ্রহে দক্ষতা, উন্নত আর্থিক পরিকল্পনা এবং কেন্দ্রীয় সহায়তার যথাযথ ব্যবহারের কথা বলা হচ্ছে।
এই প্রসঙ্গে রাজনৈতিক বিতর্কও তীব্রতর হয়েছে। কিছু বিশেষজ্ঞের মতে, কেন্দ্রের তরফ থেকে রাজনৈতিকভাবে অনুগত রাজ্যগুলো বেশি সাহায্য পায়, যার ফলে তারা উন্নত আর্থিক অবস্থা বজায় রাখতে সক্ষম হচ্ছে। অন্যদিকে, বিরোধী রাজনৈতিক শাসিত রাজ্যগুলির ক্ষেত্রে কেন্দ্রের সাহায্যের ঘাটতির অভিযোগও উঠছে।
তবে সবশেষে, অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা একমত যে, রাজস্ব ঘাটতির মূল প্রতিকার লুকিয়ে রয়েছে দক্ষ আর্থিক ব্যবস্থাপনার মধ্যে। পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে রাজস্ব বাড়াতে কর নীতি পুনর্বিবেচনা, ব্যয় সংকোচন, এবং ঋণের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে আনার ওপর জোর দেওয়া প্রয়োজন। সিএজির রিপোর্ট স্পষ্ট করেছে যে, অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়া হলে রাজ্যের অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ দীর্ঘমেয়াদে সংকটে পড়তে পারে।
জনগণের মধ্যে এই আর্থিক চিত্র নিয়ে উদ্বেগ স্পষ্ট। বিশেষ করে আগামী বছরের বাজেট ও রাজনৈতিক পরিকল্পনার দিকনির্দেশে এই তথ্য যে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে, তা বলাই বাহুল্য। এখন দেখার বিষয়, রাজ্য সরকার এই সংকট থেকে বেরিয়ে আসার জন্য কী ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করে।

আমাদের Google News এ ফলো করুন
২৪ ঘণ্টার বাংলা নিউজ, ব্রেকিং আপডেট আর এক্সক্লুসিভ স্টোরি সবার আগে পেতে ফলো করুন।
