রফতানিতে দেশের মধ্যে প্রথম দশে পশ্চিমবঙ্গ

২০২৪-২৫ অর্থবছরে ভারতের রাজ্যভিত্তিক পণ্যের রফতানির পরিসংখ্যান (Export Ranking) অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গ (West Bengal) এবার রফতানি খাতে দেশের প্রথম দশটি রাজ্যের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে। কেন্দ্রীয়…

Export ,West Bengal

২০২৪-২৫ অর্থবছরে ভারতের রাজ্যভিত্তিক পণ্যের রফতানির পরিসংখ্যান (Export Ranking) অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গ (West Bengal) এবার রফতানি খাতে দেশের প্রথম দশটি রাজ্যের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে। কেন্দ্রীয় বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রকের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গের মোট রফতানি আয় হয়েছে ১২.৬৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা দেশের মোট রফতানির প্রায় ২.৯ শতাংশ।

এই পরিসংখ্যানে শীর্ষ স্থানে রয়েছে গুজরাট, যার রফতানি আয় দাঁড়িয়েছে ১১৬.৩৩ বিলিয়ন ডলার। এরপর রয়েছে মহারাষ্ট্র (৬৫.৮৫ বিলিয়ন), তামিলনাড়ু (৫২.০৭ বিলিয়ন), কর্ণাটক (৩০.৪৮ বিলিয়ন) ও উত্তরপ্রদেশ (২১.৯৮ বিলিয়ন)। ষষ্ঠ থেকে দশম স্থানে রয়েছে যথাক্রমে অন্ধ্রপ্রদেশ (২০.৭৮), তেলেঙ্গানা (১৯.১২), পশ্চিমবঙ্গ (১২.৬৬), ওড়িশা (১০.০৯) ও মধ্যপ্রদেশ (৭.৮২)।

   

এই অর্জনকে ঘিরে রাজ্য সরকার এবং বাণিজ্যিক মহলে যথেষ্ট উদ্দীপনা দেখা যাচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক বিবৃতিতে বলেন, “এই সাফল্য প্রমাণ করে, আমাদের রাজ্য শিল্প, উৎপাদন এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কতটা অগ্রসর হয়েছে। আমরা এই গতি বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”

বিশেষজ্ঞদের মতে, পশ্চিমবঙ্গের এই উত্থানের পেছনে একাধিক কারণ রয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাজ্য সরকার ম্যানুফ্যাকচারিং, কৃষিভিত্তিক শিল্প ও ক্ষুদ্র-মাঝারি শিল্পের উন্নয়নে ব্যাপক উদ্যোগ নিয়েছে। সেইসঙ্গে কলকাতা ও হলদিয়া বন্দর ব্যবস্থাপনা উন্নত করাও রফতানিতে সহায়ক হয়েছে।

বণিকসভার এক সদস্য জানান, “চর্ম শিল্প, জুট প্রোডাক্টস, ইলেকট্রিক্যাল যন্ত্রাংশ, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও চা— এই খাতগুলো পশ্চিমবঙ্গের রফতানি বৃদ্ধিতে মূল ভূমিকা নিয়েছে। বিদেশি বাজারে রাজ্যের পণ্যের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে।”

ভারতের মোট পণ্যের রফতানি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে হয়েছে ৪৩৭.৪২ বিলিয়ন ডলার। পশ্চিমবঙ্গ সেই রফতানির ১২.৬৬ বিলিয়ন ডলার অবদান রাখায়, রাজ্যটি এখন জাতীয় বাণিজ্যচিত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে পৌঁছেছে। এই বৃদ্ধি আগামীতেও অব্যাহত থাকবে বলে আশাবাদী শিল্প মহল।

তবে চ্যালেঞ্জও রয়েছে। অবকাঠামো উন্নয়ন, দক্ষ কর্মী গঠনের অভাব এবং রফতানির লজিস্টিক খরচ এখনো পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যগুলোর সামনে বড় প্রতিবন্ধক। তবু সরকার ও বেসরকারি উদ্যোগে সেই সমস্যাগুলো কাটিয়ে আরও উচ্চতায় পৌঁছানোর লক্ষ্যে কাজ চলছে।

সামগ্রিকভাবে, পশ্চিমবঙ্গের এই সাফল্য শুধু পরিসংখ্যান নয়, বরং রাজ্যের অর্থনৈতিক উন্নয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশক। কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের সমন্বিত উদ্যোগ, শিল্পপতিদের সক্রিয়তা এবং আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা— এই সবকিছু মিলে পশ্চিমবঙ্গকে ভবিষ্যতের রফতানি হাব হিসেবে গড়ে তুলতে পারে।