পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ, বাজারে দামি এবং লাভজনক চাষ—এই তিন বৈশিষ্ট্যের কারণে মাশরুম (Mushroom farming) এখন ভারতের কৃষি ক্ষেত্রে দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ন্যাশনাল হর্টিকালচার বোর্ড (NHB)-এর সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, দেশের মোট মাশরুম উৎপাদনের ৭৫ শতাংশেরও বেশি হয় মাত্র ১০টি রাজ্যে।
এই তালিকায় বিহার (১০.৮২%) শীর্ষে, এরপর রয়েছে মহারাষ্ট্র (৯.৮৯%), ওড়িশা (৯.৬৬%), হরিয়ানা (৮.১৯%), এবং উত্তরাখণ্ড (৭.৬৫%)। কিন্তু এই তালিকায় নেই পশ্চিমবঙ্গ।
মাশরুম: একটি সম্ভাবনাময় ফসল
মাশরুম এখন আর শুধু বিলাসী খাদ্য নয়। এটি এখন গ্রামীণ অর্থনীতিতে পরিবর্তনের এক নতুন চাবিকাঠি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। অত্যন্ত কম জায়গায়, অল্প সময়ে এবং সীমিত বিনিয়োগে মাশরুম চাষ করা যায়। ফলে ছোট ও প্রান্তিক কৃষকদের কাছেও এটি একটি আকর্ষণীয় বিকল্প।
বিশেষ করে শহরাঞ্চলে এর চাহিদা দ্রুত বাড়ছে, এবং দামও ভালো পাওয়া যায়। এমনকি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজেও একাধিকবার মাশরুমের পুষ্টিগুণ ও এর উপকারিতা নিয়ে মন্তব্য করেছেন, এবং জানিয়েছেন যে তাঁর দৈনন্দিন খাবারের তালিকায় মাশরুম থাকে।
তবুও পিছিয়ে বাংলা!
বাংলার অনেক জেলায় কিছু চাষি ও স্বনির্ভর গোষ্ঠী মাশরুম চাষে যুক্ত থাকলেও, তা এখনও ক্ষুদ্র পরিসরে সীমাবদ্ধ। NHB-এর তথ্য অনুযায়ী, রাজ্য এখনও শীর্ষ ১০ মাশরুম উৎপাদনকারী রাজ্যের তালিকায় জায়গা পায়নি।
অন্যদিকে বিহার, মহারাষ্ট্র, ওড়িশা, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, রাজস্থান, হিমাচল প্রদেশ, গুজরাট এবং ছত্তিশগড়ের মতো রাজ্য সক্রিয় পরিকল্পনা ও সরকারি সহায়তার মাধ্যমে এই খাতে অগ্রণী হয়ে উঠেছে।
বিশেষজ্ঞদের মত: পরিকল্পনার অভাবেই পিছিয়ে বাংলা
কৃষি বিশেষজ্ঞ ড. পার্থপ্রতিম সাহা বলেন, “বাংলার জলবায়ু এবং প্রাকৃতিক পরিবেশ মাশরুম চাষের জন্য যথেষ্ট উপযোগী। তবে এখানে প্রশিক্ষণ, সরকারি অনুদান এবং মার্কেট লিঙ্কেজের অভাবে কৃষকেরা ঝুঁকি নিতে চায় না।”
তিনি আরও বলেন, “অন্যান্য রাজ্যে চাষিদের জন্য নির্দিষ্ট প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, ইনকিউবেশন ল্যাব এবং কৃষি দপ্তরের প্রত্যক্ষ সহায়তা রয়েছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে তা এখনও সীমিত।”
চাষিরা কী বলছেন?
হুগলির এক মাশরুম চাষি মধুসূদন ঘোষ জানান, “মাশরুম চাষে লাভ আছে, কিন্তু বাজারে বিক্রি করা কঠিন। কলকাতার বাজারে বড় হোটেল ও ডিলাররা বাইরের রাজ্যের মাশরুম কেনে। আমাদের প্রোডাক্ট নেয় না, কারণ আমরা নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ দিতে পারি না।”
কি করা দরকার?
- সরকারি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন: প্রত্যন্ত অঞ্চলে চাষিদের মাশরুম চাষ শেখানো দরকার।
- বাজার সংযোগ তৈরি: কৃষিপণ্য বিপণনে আরও সক্রিয় হওয়া দরকার।
- অর্থনৈতিক সহায়তা: সাবসিডি ও ঋণের সহজ প্রাপ্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
- মহিলাদের অংশগ্রহণ: স্বনির্ভর গোষ্ঠী ও মহিলাদের মাশরুম চাষে উৎসাহিত করা গেলে গ্রামীণ অর্থনীতি আরও মজবুত হবে।
মাশরুম চাষ পশ্চিমবঙ্গে সম্ভাবনাময় হলেও, তা পূর্ণতা পাচ্ছে না পরিকল্পনার অভাবে। অন্য রাজ্যগুলি যেভাবে এই লাভজনক কৃষি খাতকে গুরুত্ব দিয়ে এগিয়ে চলেছে, পশ্চিমবঙ্গও যদি সেই পথে এগোয়, তবে রাজ্যের কৃষক ও যুব সমাজের জন্য এটি একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে।