Wealth Building Tips: অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারীরা জন্মগতভাবে তৈরি হন না, বরং সময়ের সাথে অভিজ্ঞতার মাধ্যমে গড়ে ওঠেন। তারা বহু বছর ধরে আর্থিক বাজারে সময় কাটিয়েছেন এবং শিখেছেন কিভাবে শৃঙ্খলা এবং স্পষ্টতা বজায় রেখে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিতে হয়, বিশেষ করে যখন বাজার অস্থির বা অনিশ্চিত অবস্থায় থাকে। তারা স্বল্পমেয়াদি “নয়েজ” বা হঠাৎ পরিবর্তনে প্রলুব্ধ হন না। বরং, তারা একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার সাথে অটল থাকেন এবং সময় ও শৃঙ্খলাকে তাদের পক্ষে কাজ করতে দেন।
একই বয়সের দুটি বিনিয়োগকারীর উদাহরণ ধরা যাক। মিস্টার হাইপ সবসময় বেশি রিটার্নের পেছনে ছোটেন। তিনি ট্রেন্ডের পেছনে ছুটে বেড়ান, বাজারের টাইমিং করার চেষ্টা করেন এবং সামান্য লাভ দেখলেই বেরিয়ে যান, আবার সেই চক্রে ঢোকেন। অন্যদিকে, মিস্টার স্টেডি হলেন লক্ষ্যভিত্তিক এবং শৃঙ্খলাবান। তিনি নিয়মিত বিনিয়োগ করেন, পরিকল্পনায় অটল থাকেন এবং দীর্ঘমেয়াদে লক্ষ্য অর্জনে মনোনিবেশ করেন।
সময়ের সাথে সাথে মিস্টার স্টেডি চক্রবৃদ্ধি (compounding)-এর জাদুতে উপকৃত হন এবং একটি বড় অর্থের ভান্ডার গড়ে তোলেন। অন্যদিকে মিস্টার হাইপ বুঝতে পারেন যে ছোটমেয়াদি বা অনিয়মিত বিনিয়োগে প্রকৃত অর্থবৃদ্ধি সম্ভব নয়।
একটি জনপ্রিয় প্রবাদ আছে, “জ্ঞানীরা নিজেদের ভুল থেকে শেখেন, কিন্তু সবচেয়ে জ্ঞানীরা অন্যের ভুল থেকেও শিখেন।” অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারীরা কীভাবে বাজারে প্রতিক্রিয়া জানায়, তা আমাদের সবার জন্যই বড় শিক্ষা।
তারা বিনিয়োগে স্থির থাকেন
গত দুই দশকে নিফটি ৫০ সূচক প্রায় ১৬ শতাংশ বার্ষিক যৌগিক রিটার্ন (CAGR) দিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, যদি কেউ ২০০৪ সালে প্রতি মাসে ১০,০০০ টাকা করে SIP শুরু করতেন এবং প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে সেই পরিমাণ বাড়াতেন, তাহলে আজ প্রায় ২.৩ কোটি টাকার একটি বড় ফান্ড তৈরি হত।
কিন্তু বাস্তবতা হলো, মাত্র ২ শতাংশের কম বিনিয়োগকারীই এই দীর্ঘ ২০ বছর ধরে বিনিয়োগে স্থির থেকেছেন। ফলে বাজার যে সুযোগ দিয়েছে, তার পুরো সুবিধা খুবই অল্প সংখ্যক মানুষই পেয়েছেন। এটিকেই বলা হয় ‘রিটার্নস গ্যাপ’ — অর্থাৎ, বাজারের দেওয়া রিটার্ন বনাম বিনিয়োগকারীর প্রাপ্ত রিটার্নের মধ্যে পার্থক্য।
অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারীরা জানেন, SIP-এর প্রকৃতি হলো বাজারের ওঠানামাকে কাজে লাগানো। বাজার যখন পড়ে, তখন এটি বিনিয়োগ বন্ধ করার সঙ্কেত নয়, বরং কম দামে ইউনিট কেনার সুযোগ। এইভাবে, তারা দীর্ঘমেয়াদে বেশি ইউনিট সংগ্রহ করে এবং বৃহৎ রিটার্ন পেতে সক্ষম হন।
তারা অস্থিরতাকে সুযোগ হিসেবে দেখেন
বাজারের পতন সাধারণ বিনিয়োগকারীর মনে ভীতি তৈরি করে। কিন্তু অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারীরা এটিকে দেখেন সোনার সুযোগ হিসেবে। তারা জানেন, ঝুঁকি গ্রহণ না করলে বড় মুনাফা সম্ভব নয়।
অনেকেই শুরুতে অতিরিক্ত রক্ষণশীল থাকেন এবং লক্ষ্য যখন কাছাকাছি আসে তখন বেশি ঝুঁকি নিতে চান, যা সম্পূর্ণ বিপরীত হওয়া উচিত। বরং, শুরুতে সঠিক ঝুঁকি নেওয়া এবং ধীরে ধীরে সেটি সামঞ্জস্য করা বুদ্ধিমানের কাজ।
তারা লক্ষ্যেই ফোকাস করেন
অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারীর মূল শক্তি হলো “কেন” বিনিয়োগ করছেন তা জানা। অবসরের জন্য, সন্তানের শিক্ষা, অথবা আর্থিক স্বাধীনতার জন্য — লক্ষ্য যা-ই হোক, সেটাই তাদের ধ্রুব নক্ষত্রের মতো নির্দেশনা দেয়।
মার্কেটের হেডলাইন এবং ক্ষণিকের ওঠানামা তাদের বিভ্রান্ত করতে পারে না, কারণ তারা জানেন তাদের লক্ষ্য বহু বছর পরের।
তারা রিটার্নের পেছনে ছোটেন না, লক্ষ্যকে অনুসরণ করেন
রিটার্নের পেছনে ছোটা মানে হলো আবেগের বশবর্তী হয়ে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া। এক মাসে ক্ষুদ্র শেয়ার, পরের মাসে সোনা, তারপরে বিদেশি ফান্ড — এইভাবে বিনিয়োগে স্থায়িত্ব আসে না।
অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারীরা রিটার্নের চেয়ে উদ্দেশ্যকে গুরুত্ব দেন। বাজারের শোরগোলের প্রতিক্রিয়ায় না গিয়ে তারা পরিকল্পিতভাবে এগোন।
দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ ও চক্রবৃদ্ধির শক্তি
তাদের বিশ্বাস থাকে দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগের সম্ভাবনায়। চক্রবৃদ্ধি কতটা শক্তিশালী, তা তারা ভালোভাবেই বোঝেন। উদাহরণ হিসেবে, ১২ শতাংশ বার্ষিক চক্রবৃদ্ধি হারে ২০ বছরে আপনার বিনিয়োগ প্রায় ১০ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে।
এই শক্তিকে কাজে লাগাতে হলে ধৈর্য এবং অটলতা অপরিহার্য।
তারা প্রক্রিয়ার উপর বিশ্বাস রাখেন
অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারীরা প্রক্রিয়ার উপর আস্থা রাখেন। এটি গড়ে ওঠে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, ব্যক্তিগতকরণ, ঝুঁকি এবং রিটার্নের মধ্যে সম্পর্ক বোঝা, এবং সর্বোপরি, রিটার্নের চেয়ে লক্ষ্যকে গুরুত্ব দেওয়ার মাধ্যমে।
তারা জানেন, ধারাবাহিকতা ও শৃঙ্খলাই শেষ পর্যন্ত প্রকৃত সম্পদ গড়ে তোলে। তাই অস্থির বাজারে মিস্টার স্টেডির মতো থাকুন — স্থির, শৃঙ্খলাবান ও প্রজ্ঞাবান।