এক চরম সঙ্কটে পড়েছেন ঝাড়গ্রামের ব্রয়লার মুরগি ব্যবসায়ীরা। পরিবহণ দপ্তরের ‘অন্যায়’ জরিমানার অভিযোগ তুলে তারা এখন কার্যত রাস্তায় নামতে বাধ্য হচ্ছেন। ব্যবসায়ীদের দাবি, সম্প্রতি রাস্তায় পরিবহণ দপ্তরের চেকিং অভিযানে বেশ কিছু মুরগি বোঝাই গাড়িকে ধরপাকড় করে মোটা অঙ্কের টাকা জরিমানা করা হচ্ছে। অনেক সময়ই সেই জরিমানা তাৎক্ষণিকভাবে পরিশোধ না করতে পারার কারণে গাড়ি আটকে রাখা হচ্ছে দীর্ঘ সময় ধরে।
এই কারণে একদিকে যেমন মুরগিগুলি দীর্ঘ সময় গরমে, খাদ্য ও জলের অভাবে মারা যাচ্ছে, অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা পড়ছেন বিপুল আর্থিক ক্ষতির মুখে। প্রতি গাড়িতে প্রায় ১২০০ থেকে ১৫০০টি ব্রয়লার মুরগি থাকে। সেই মুরগিগুলি গন্তব্যে পৌঁছতে না পারলে তাদের মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী হয়ে দাঁড়ায়। ফলে, প্রতিটি গাড়িতে ব্যবসায়ীদের লাখ টাকারও বেশি লোকসান গুনতে হচ্ছে।
ব্রয়লার মুরগি ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, পরিবহণ দপ্তরের তরফে নির্দিষ্ট কিছু কাগজপত্রের অভাব দেখিয়ে অতিরিক্তভাবে জরিমানা চাপানো হচ্ছে। যদিও তাদের দাবি, গাড়িগুলির প্রয়োজনীয় নথিপত্র ঠিকঠাক থাকলেও নানা খুঁটিনাটি অজুহাতে হয়রানি করা হচ্ছে। কখনও ওজনের অজুহাত, কখনও গাড়ির রুট পারমিট, আবার কখনও পণ্য পরিবহণের লাইসেন্স—এইসব কারণ দেখিয়ে হাজার হাজার টাকা জরিমানা করা হচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে ঝাড়গ্রামের ব্রয়লার মুরগি সরবরাহকারী এবং পাইকারি ব্যবসায়ীদের তরফে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে—এই হয়রানি বন্ধ না হলে তারা আগামী দিনে কলকাতা সহ দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় মুরগি পাঠানো সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেবেন। এর ফলে সরাসরি প্রভাব পড়বে রাজ্যের মুরগির বাজারে।
বিশেষত, কলকাতা শহরের মুরগির চাহিদার বড় একটি অংশ ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুর এবং পুরুলিয়া জেলার উপর নির্ভর করে। ঝাড়গ্রাম থেকেই প্রতিদিন কয়েক হাজার কেজি ব্রয়লার মুরগি পৌঁছায় কলকাতার বাজারে। এই জেলাগুলিতে ব্রয়লার চাষ এবং সরবরাহ একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্প হিসেবে দাঁড়িয়েছে। ফলে, এই অঞ্চল থেকে সরবরাহ বন্ধ হলে একদিকে যেমন সাধারণ মানুষের পাতে মুরগির জোগানে টান পড়বে, অন্যদিকে বাজারে দামও হঠাৎ করে বেড়ে যেতে পারে।
ইতিমধ্যে কলকাতার বেশ কিছু পাইকারি বাজারে মুরগির দামে অল্প হলেও উর্ধ্বগতি দেখা গেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ব্রয়লার মুরগির জোগান কমে গেলে প্রতি কেজিতে দাম ২০-৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে। ফলে সাধারন ভোক্তার উপরও এই সঙ্কটের প্রভাব পড়বে।
ব্রয়লার ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে প্রশাসনের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে, যাতে মুরগি পরিবহণে কোনও অপ্রয়োজনীয় বাধা সৃষ্টি না করা হয় এবং যৌক্তিকতার ভিত্তিতে পরিবহণ নিয়ম মেনে চলা যায়।
এই পরিস্থিতি সামাল দিতে না পারলে শুধু ব্যবসায়ী নয়, সমস্যায় পড়বেন রাজ্যের লাখ লাখ ভোক্তাও। খাদ্যসামগ্রী হিসেবে মুরগি যেমন মধ্যবিত্তের পাতে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রোটিন উৎস, তেমনই তা একটি রোজগার ও জীবিকার মাধ্যম বহু মানুষে জন্য।
তাই পরিবহণ দপ্তর এবং জেলা প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপ এখন সময়ের দাবি। না হলে এই সঙ্কট শুধু ঝাড়গ্রামে আটকে থাকবে না, গোটা রাজ্যের মুরগি শিল্পে তার মারাত্মক প্রভাব পড়বে।