ক্রেডিট স্কোর (Credit Score) হল একটি তিন অঙ্কের সংখ্যা, যা একজন ব্যক্তির আর্থিক বিশ্বাসযোগ্যতা বা ক্রেডিট যোগ্যতার পরিমাপ করে। এটি নির্দেশ করে যে একজন ব্যক্তি সময়মতো ঋণ বা ক্রেডিট পরিশোধ করতে সক্ষম কিনা।
৩০০ থেকে ৯০০-এর মধ্যে থাকা এই স্কোর (Credit Score) যত বেশি হয়, তত শক্তিশালী হয় ব্যক্তির ক্রেডিট প্রোফাইল। উচ্চ ক্রেডিট স্কোর থাকলে ব্যক্তিরা সহজে ঋণ বা ক্রেডিট পেতে পারেন, এমনকি কম সুদের হারে অনুকূল শর্তে অনুমোদন পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। এটি দায়িত্বশীল আর্থিক ব্যবস্থাপনা এবং সঠিক ক্রেডিট আচরণের প্রতিফলন ঘটায়।
এই স্কোর (Credit Score) তৈরি হয় একজন ব্যক্তির ক্রেডিট তথ্যের গভীর বিশ্লেষণের মাধ্যমে, যেখানে শক্তিশালী ডেটা অ্যানালিটিক্স এবং অ্যালগরিদম ব্যবহার করা হয়। ভারতে ট্রান্সইউনিয়ন সিবিল, এক্সপেরিয়ান, ইকুইফ্যাক্স এবং সিআরআইএফ হাই মার্ক-এর মতো সংস্থাগুলি ব্যক্তিদের ক্রেডিট স্কোর প্রদানের জন্য অনুমোদিত।
কম বা কোনো ক্রেডিট ইতিহাস থাকলে কীভাবে শক্তিশালী প্রোফাইল তৈরি করবেন?
এক্সপেরিয়ান ইন্ডিয়ার কান্ট্রি ম্যানেজিং ডিরেক্টর মনীশ জৈন নিউজ১৮ ইংলিশকে জানিয়েছেন কীভাবে কম বা কোনো ক্রেডিট ইতিহাস থাকা ব্যক্তিরা তাদের ক্রেডিট প্রোফাইল শক্তিশালী করতে পারেন।
ক্রেডিট ইতিহাস না থাকলে শুরু কীভাবে?
জৈন বলেন, যাদের কোনো ক্রেডিট ইতিহাস নেই, তাদের জন্য একটি সিকিউরড ক্রেডিট কার্ড বা ছোট ঋণ শুরুর জন্য কার্যকর হতে পারে। সিকিউরড ক্রেডিট কার্ডের জন্য একটি ফিক্সড ডিপোজিট জামানত হিসেবে জমা দিতে হয়। এটি দায়িত্বশীলভাবে ব্যবহার করা—অর্থাৎ কম ব্যালেন্স রাখা এবং সময়মতো পরিশোধ করা—একটি ইতিবাচক ক্রেডিট পদচিহ্ন তৈরি করতে সাহায্য করে। “এটি আপনার ক্রেডিট যাত্রার প্রথম ধাপ হতে পারে,” তিনি যোগ করেন।
কম ক্রেডিট স্কোর (Credit Score) কীভাবে উন্নত করবেন?
কম ক্রেডিট স্কোর (Credit Score) উন্নত করা সম্ভব, তবে এর জন্য দীর্ঘস্থায়ী আর্থিক শৃঙ্খলা প্রয়োজন। জৈন বলেন, “প্রথমে কম স্কোরের মূল কারণ চিহ্নিত করতে হবে—এটি হতে পারে পরিশোধে বিলম্ব, রিপোর্টিংয়ে ভুল, বা অতীতের ডিফল্ট। এরপর, পরিশোধের আচরণ উন্নত করা, বকেয়া ব্যালেন্স কমানো এবং উচ্চ ক্রেডিট ব্যবহার এড়ানো গুরুত্বপূর্ণ।” তিনি আরও জানান, এই পদক্ষেপগুলি ধীরে ধীরে স্কোর বাড়াতে সাহায্য করে।
জৈনের মতে, নিয়মিত ক্রেডিট রিপোর্ট পর্যালোচনা করাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। এটি অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করতে, কোনো ভুল বা অননুমোদিত কার্যকলাপ শনাক্ত করতে এবং সংশোধন করতে সহায়ক। “ধারাবাহিক প্রচেষ্টা এবং সচেতন আর্থিক অভ্যাসের মাধ্যমে ব্যক্তিরা তাদের ক্রেডিট প্রোফাইল শক্তিশালী করতে পারেন এবং আনুষ্ঠানিক ক্রেডিটে প্রবেশাধিকার বাড়াতে পারেন,” তিনি বলেন।
ক্রেডিট স্কোর (Credit Score) নির্ধারণে বেশ কয়েকটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এর মধ্যে প্রধান হল:
পরিশোধের ইতিহাস: ঋণ এবং ক্রেডিট কার্ডের পেমেন্ট সময়মতো করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। বিলম্ব বা পেমেন্ট মিস করলে স্কোরের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
ক্রেডিট মিক্স বা লিভারেজ: সুরক্ষিত (যেমন হোম বা অটো লোন) এবং অসুরক্ষিত (যেমন ক্রেডিট কার্ড) ঋণের একটি সুষম মিশ্রণ বজায় রাখা দায়িত্বশীল আর্থিক ব্যবস্থাপনা প্রদর্শন করে। এটি স্কোরের জন্য ইতিবাচক।
ক্রেডিট ইতিহাসের দৈর্ঘ্য: দীর্ঘমেয়াদী ক্রেডিট ইতিহাস ঋণদাতাদের কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি করে। তবে, অল্প সময়ের মধ্যে ঘন ঘন নতুন ক্রেডিট নেওয়া স্কোরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
কেন গুরুত্বপূর্ণ ক্রেডিট স্কোর?
আধুনিক আর্থিক জগতে ক্রেডিট স্কোর একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। এটি শুধু ঋণ পাওয়ার সম্ভাবনাই নির্ধারণ করে না, বরং সুদের হার এবং শর্তাবলীও নির্ধারণ করে। একটি ভালো স্কোর থাকলে ব্যক্তিরা কম খরচে ঋণ পেতে পারেন, যা তাদের আর্থিক পরিকল্পনায় সহায়ক। বিপরীতে, কম স্কোর থাকলে ঋণ প্রত্যাখ্যান বা উচ্চ সুদের হারের মতো সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।
মনীশ জৈনের পরামর্শ অনুসারে, যারা এখনও ক্রেডিট জগতে পা রাখেননি বা কম স্কোর নিয়ে চিন্তিত, তাদের জন্য ছোট থেকে শুরু করা গুরুত্বপূর্ণ। একটি সিকিউরড ক্রেডিট কার্ড দিয়ে শুরু করে ধীরে ধীরে নিয়মিত পেমেন্টের অভ্যাস গড়ে তুললে স্কোর বাড়ানো সম্ভব। এছাড়া, ক্রেডিট রিপোর্টে নজর রাখা এবং অতিরিক্ত ঋণ এড়ানো দীর্ঘমেয়াদে সুবিধা দেবে।
ভারতে ক্রেডিট সচেতনতা ক্রমশ বাড়ছে। তবে, অনেকেই এখনও এর গুরুত্ব সম্পর্কে অবগত নন। জৈনের মতে, আর্থিক শিক্ষা এবং সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে যে কেউ একটি শক্তিশালী ক্রেডিট প্রোফাইল তৈরি করতে পারেন। এটি না শুধু ব্যক্তিগত আর্থিক স্বাধীনতা বাড়ায়, বরং দেশের আর্থিক ব্যবস্থায়ও ইতিবাচক অবদান রাখে।