‘বিবাদ সে বিশ্বাস’ স্কিম আবেদনের ডেডলাইন ৩০ এপ্রিল, জানাল সরকার

আয়কর সংক্রান্ত দীর্ঘদিনের বিবাদ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে কেন্দ্র সরকার ঘোষিত ‘ডিরেক্ট ট্যাক্স বিবাদ সে বিশ্বাস স্কিম, ২০২৪’-এর (Vivad Se Vishwas Scheme) ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ৩০ এপ্রিল,…

Vivad Se Vishwas Scheme

আয়কর সংক্রান্ত দীর্ঘদিনের বিবাদ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে কেন্দ্র সরকার ঘোষিত ‘ডিরেক্ট ট্যাক্স বিবাদ সে বিশ্বাস স্কিম, ২০২৪’-এর (Vivad Se Vishwas Scheme) ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ৩০ এপ্রিল, ২০২৫ এই স্কিমে আবেদন করার শেষ তারিখ হিসেবে নির্ধারিত হয়েছে। কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক মঙ্গলবার এই বিষয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে।

২০২৪ সালের কেন্দ্রীয় বাজেটে ঘোষিত এই স্কিম কার্যকর হয়েছে ১ অক্টোবর, ২০২৪ থেকে, তবে এতদিন পর্যন্ত কোনও নির্দিষ্ট সময়সীমা জানানো হয়নি। এবার স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, ৩০ এপ্রিলের পর আর কোনও আবেদন গ্রহণ করা হবে না।

এই স্কিমের অধীনে করদাতারা সম্পূর্ণ বিবাদিত করের অর্থ জমা দিয়ে সুদ ও জরিমানার ছাড় পেতে পারেন। অর্থাৎ, যে সমস্ত করদাতার বিরুদ্ধে আয়কর সংক্রান্ত মামলাগুলি বিভিন্ন স্তরের আদালত বা ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন রয়েছে, তারা এই স্কিমের মাধ্যমে সহজে সমস্যার সমাধান করতে পারবেন।

অ্যাডভান্টএজ কনসাল্টিং-এর পার্টনার চেতন ডাগা বলেন, “যাদের মামলা আপিলে বিচারাধীন এবং যেখানে রায় করদাতার অনুকূলে আসার সম্ভাবনা কম, তাদের জন্য এটি একটি অত্যন্ত আকর্ষণীয় সুযোগ। সুদ ও জরিমানা যেহেতু মাসিক ভিত্তিতে ধার্য হয়, তাই সময় থাকতে স্কিমে আবেদন করা অত্যন্ত বুদ্ধিমানের কাজ হবে।”

অর্থ মন্ত্রকের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের অর্থ আইনের ৯০ ধারা অনুযায়ী বিতর্ক নিষ্পত্তির জন্য নির্ধারিত কর্তৃপক্ষের কাছে একটি ঘোষণাপত্র (ডিক্লারেশন) দাখিল করতে হবে।

এপিটি অ্যান্ড কো এলএলপি-র পার্টনার অবিনাশ গুপ্তা বলেন, “যাদের মামলা কমিশনার অফ ইনকাম ট্যাক্স (আপিল), ইনকাম ট্যাক্স অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনাল (ITAT), হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট অথবা ডিসপুট রেজোলিউশন প্যানেল (DRP)-এর সামনে বিচারাধীন রয়েছে, তারা ৩০ এপ্রিলের মধ্যে স্কিমে আবেদন করতে পারবেন।”

তিনি আরও জানান, “যদি কোনও করদাতা এই সুযোগ হাতছাড়া করেন, তাহলে তাদের অ্যাপিলেট আদেশের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। এবং যদি রায় বিরূপ হয়, তাহলে কর ছাড়াও অতিরিক্ত সুদ ও জরিমানা গুনতে হবে।”

ভারতের ইনস্টিটিউট অফ চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস (ICAI)-এর প্রাক্তন সভাপতি ও বিশিষ্ট কর বিশেষজ্ঞ বেদ জৈন বলেন, “যেসব করদাতা এখনও ফর্ম নম্বর ১ জমা দেননি এবং এই স্কিমে অংশ নিতে চান, তাদের আগামী ৩০ এপ্রিল, ২০২৫-এর মধ্যে এটি জমা দিতেই হবে।”
তিনি আরও ব্যাখ্যা করে বলেন, “ফর্ম নম্বর ১ জমা দেওয়ার পরে কর্তৃপক্ষ ফর্ম নম্বর ২ পাঠাবে, যার উত্তরে নির্ধারিত করের অর্থ ১৫ দিনের মধ্যে জমা দিতে হবে।”

Advertisements

এই স্কিম মূলত আয়কর দপ্তরের সঙ্গে বিচারাধীন পুরোনো মামলাগুলির দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে তৈরি। বহু বছরের বিচারাধীন মামলায় করদাতারা যেমন মানসিক চাপের মধ্যে থাকেন, তেমনি সরকারও আদায়ের ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ে। এই ধরনের অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতেই এই স্কিম চালু করা হয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, করদাতাদের উচিত দ্রুত কর পরামর্শদাতার সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের বিচারাধীন মামলার পর্যালোচনা করা এবং সম্ভাব্য ক্ষেত্রে স্কিমের সুযোগ গ্রহণ করা। কেননা, সরকার এই স্কিমে এখনও পর্যন্ত কোনও সময়সীমা বৃদ্ধির ইঙ্গিত দেয়নি।
এছাড়া, স্কিমের আওতায় কোনো করদাতার বিরুদ্ধে থাকা অতিরিক্ত জরিমানা, সুদ এবং মামলা সংক্রান্ত খরচও মাফ হতে পারে, যা একটি বড় সুবিধা।
অতএব, যাদের বিরুদ্ধে আয়কর বিভাগে মামলা চলছে এবং যারা বিষয়টি দ্রুত নিষ্পত্তি করতে চান, তাদের জন্য ভিবাদ সে বিশ্বাস স্কিম ২০২৪

একটি সুবর্ণ সুযোগ। তবে সময়সীমার বিষয়টি মাথায় রেখে এখনই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।

মূল পয়েন্টস:

  • বিবাদ সে বিশ্বাস স্কিমে আবেদন করার শেষ তারিখ: ৩০ এপ্রিল, ২০২৫
  • ফর্ম নম্বর ১ জমা দিতে হবে এই তারিখের মধ্যে।
  • ফর্ম নম্বর ২ পাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে কর পরিশোধ করতে হবে।
  • সুদ, জরিমানা ও মামলা সংক্রান্ত খরচে ছাড়।
  • সময়সীমা বাড়ানোর কোনও ঘোষণা এখনও পর্যন্ত নেই।

এই স্কিমকে কেন্দ্র করে আগামী কয়েক মাসে করদাতাদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট মহল।