আজ, ২৫ মার্চ, ২০২৫, পশ্চিমবঙ্গে সবজির দাম (Vegetable Prices) নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে। গত কয়েক মাসে আবহাওয়ার অনিয়মিত আচরণ এবং উৎপাদনের ঘাটতির কারণে রাজ্যের বিভিন্ন বাজারে সবজির দাম উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগের তথ্য এবং বাজার সূত্রের ভিত্তিতে, এই প্রতিবেদনে পশ্চিমবঙ্গের উত্তর থেকে দক্ষিণ পর্যন্ত সবজির দামের একটি বিস্তারিত চিত্র তুলে ধরা হলো।
উত্তরবঙ্গে সবজির দাম
দার্জিলিং, কালিম্পং এবং জলপাইগুড়ির মতো পাহাড়ি ও সমতল অঞ্চলে সবজির দামে মিশ্র প্রভাব দেখা যাচ্ছে। দার্জিলিংয়ে আলু প্রতি কেজি ৩৫-৪০ টাকা, টমেটো ৮০-৯০ টাকা এবং সবুজ শাকসবজি যেমন পালংশাক ৫০-৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। পাহাড়ি এলাকায় পরিবহন খরচ বেশি হওয়ায় দাম কিছুটা বেশি। জলপাইগুড়িতে আলু ৩০-৩৫ টাকা, বেগুন ৬০-৭০ টাকা এবং ঝিঙে ৭০-৮০ টাকায় পৌঁছেছে। মালদা এবং দুই দিনাজপুরে গ্রীষ্মের তাপের কারণে সবজি উৎপাদন কমেছে। এখানে টমেটো ১০০-১২০ টাকা, পটল ৫০-৬০ টাকা এবং কাঁচা লঙ্কা ২০০-২৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বৃষ্টির অভাবে ফসল নষ্ট হওয়ায় সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিয়েছে।
আরো দেখুন একদিনে রেকর্ড বিক্রি ১০০০ গোল্ড কার্ড, প্রভাব মার্কিন অৰ্থনীতিতে
মধ্য পশ্চিমবঙ্গের বাজার
বীরভূম, মুর্শিদাবাদ এবং বর্ধমানের মতো জেলাগুলোতে সবজির দাম গত বছরের তুলনায় প্রায় ৩০-৪০% বেড়েছে। বীরভূমে আলু ৩২-৩৫ টাকা, ফুলকপি ৬০-৭০ টাকা এবং বেগুন ৭০-৮০ টাকা কেজি। মুর্শিদাবাদে টমেটো ১১০-১৩০ টাকা, লাউ ৫০-৬০ টাকা এবং ওলকপি ৮০-৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বর্ধমানে, যেখানে সবজি উৎপাদন সাধারণত বেশি হয়, সেখানেও দাম বেড়েছে। এখানে পেঁয়াজ ৪৫-৫০ টাকা, গাজর ৬০-৭০ টাকা এবং ধনেপাতা ১৫০-২০০ টাকা কেজি। ব্যবসায়ীদের মতে, গত মাসে অতিরিক্ত গরম এবং বৃষ্টির অভাবে ফসলের ক্ষতি হয়েছে, যা দাম বৃদ্ধির অন্যতম কারণ।
কলকাতা ও পার্শ্ববর্তী এলাকা
কলকাতা, হাওড়া এবং হুগলির বাজারে সবজির দাম সাধারণ মানুষের জন্য চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কলকাতায় আলু ৩৫-৪০ টাকা, টমেটো ১০০-১২০ টাকা, বেগুন ৭০-৮০ টাকা এবং কাঁচা লঙ্কা ২৫০-৩০০ টাকা কেজি। পেঁয়াজের দাম ৪৫-৫০ টাকা, যা গত বছরের তুলনায় ৮০% বেশি। হাওড়ার মান্ডিতে লাউ ৫০-৬০ টাকা, ফুলকপি ৬০-৭০ টাকা এবং ওলকপি ৮০-৯০ টাকা। হুগলিতে দাম প্রায় একই রকম, তবে পরিবহন খরচের কারণে কিছু এলাকায় দাম আরও বেশি। স্থানীয় বিক্রেতারা জানিয়েছেন, দক্ষিণ ভারত থেকে টমেটো আমদানি করা হচ্ছে, কিন্তু সরবরাহ কম থাকায় দাম নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না।
দক্ষিণবঙ্গের উপকূলীয় অঞ্চল
পূর্ব মেদিনীপুর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার উপকূলীয় এলাকায় আর্দ্রতা বেশি থাকলেও সবজির দামে স্বস্তি মিলছে না। পূর্ব মেদিনীপুরে আলু ৩৫-৪০ টাকা, টমেটো ১১০-১৩০ টাকা এবং পটল ৫৫-৬৫ টাকা কেজি। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় বেগুন ৭৫-৮৫ টাকা, লাউ ৫৫-৬৫ টাকা এবং কাঁচা লঙ্কা ২৫০-৩০০ টাকা। সুন্দরবনের কাছাকাছি এলাকায় বৃষ্টির অভাবে ফসলের উৎপাদন কমেছে, যা দাম বৃদ্ধির একটি বড় কারণ। বাজারে সরবরাহ কম থাকায় দিঘার মতো পর্যটন এলাকায়ও সবজির দাম বেশি।
পশ্চিমাঞ্চল: পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া
পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিমাঞ্চলে, যেমন পুরুলিয়া এবং বাঁকুড়ায়, শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে সবজির দাম তুলনামূলকভাবে বেশি। পুরুলিয়ায় আলু ৪০-৪৫ টাকা, টমেটো ১২০-১৪০ টাকা এবং বেগুন ৮০-৯০ টাকা কেজি। বাঁকুড়ায় পেঁয়াজ ৫০-৫৫ টাকা, ফুলকপি ৭০-৮০ টাকা এবং পটল ৬০-৭০ টাকা। এখানে জলের অভাবে সেচের সমস্যা ফসল উৎপাদন কমিয়েছে, যা দামের উপর প্রভাব ফেলেছে।
সরকারি হস্তক্ষেপ ও সুফল বাংলা
পশ্চিমবঙ্গ সরকার সবজির দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে সুফল বাংলার মাধ্যমে হস্তক্ষেপ করছে। সুফল বাংলার স্টলগুলোতে আলু ৩০-৩৫ টাকা, টমেটো ৯০-১০০ টাকা এবং পেঁয়াজ ৪০-৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে, এই স্টলগুলোর সংখ্যা সীমিত থাকায় সাধারণ বাজারে দাম কমানোর প্রভাব খুব বেশি পড়ছে না। রাজ্যের কৃষি বিভাগের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, “আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। আশা করা যাচ্ছে, বর্ষা শুরু হলে উৎপাদন বাড়বে এবং দাম কমবে।”
সমস্যা ও সমাধান
বিশেষজ্ঞদের মতে, অতিরিক্ত গরম, বৃষ্টির অভাব এবং পরিবহন খরচ বৃদ্ধি এই দাম বৃদ্ধির প্রধান কারণ। পশ্চিমবঙ্গ ভেজিটেবল ভেন্ডরস অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট কমল দে বলেন, “ফসল শুকিয়ে যাওয়ায় সরবরাহ কমেছে। বর্ষা না আসা পর্যন্ত এই পরিস্থিতি থাকতে পারে।” সরকারকে আরও স্টোরেজ সুবিধা এবং কৃষকদের জন্য সেচ ব্যবস্থা উন্নত করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
উপসংহার
পশ্চিমবঙ্গে সবজির দাম বর্তমানে গৃহস্থালির বাজেটে চাপ সৃষ্টি করছে। আলু, টমেটো, পেঁয়াজের মতো প্রতিদিনের সবজি থেকে শুরু করে কাঁচা লঙ্কা, বেগুনের মতো জনপ্রিয় সবজির দাম বৃদ্ধি সাধারণ মানুষের জন্য উদ্বেগের কারণ। আগামী দিনে বৃষ্টি এবং সরকারি পদক্ষেপ এই পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে পারে বলে আশা করা যাচ্ছে।