বৃষ্টির অভাবে সপ্তাহান্তে উর্ধমুখী সবজির দাম

পশ্চিমবঙ্গের বাজারে সবজির দাম (vegetable prices) আজও উর্ধ্বমুখী। সাধারণ মানুষের রান্নাঘরে প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় এই উপকরণগুলোর দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় গৃহস্থের মাথায় হাত পড়েছে। আজকের বাজারদর অনুযায়ী,…

vegetable prices increase

পশ্চিমবঙ্গের বাজারে সবজির দাম (vegetable prices) আজও উর্ধ্বমুখী। সাধারণ মানুষের রান্নাঘরে প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় এই উপকরণগুলোর দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় গৃহস্থের মাথায় হাত পড়েছে। আজকের বাজারদর অনুযায়ী, কলকাতা ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় সবজির দামে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে। সরকারি হস্তক্ষেপের প্রতিশ্রুতি থাকলেও, বাজারে এখনও স্বস্তির ছোঁয়া মেলেনি।

   

বাজারে সবজির দামের (vegetable prices)চিত্র

আজ সকালে কলকাতার পাইকারি ও খুচরো বাজারে সবজির দামের তালিকা পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, টমেটোর দাম প্রতি কেজিতে ১০০ থেকে ১২০ টাকার মধ্যে ঘোরাফেরা করছে। গত সপ্তাহের তুলনায় এটি প্রায় ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। আলুর দাম অবশ্য তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল, প্রতি কেজি ৩২ থেকে ৩৫ টাকার মধ্যে রয়েছে। তবে, বেগুনের দাম দ্বিগুণ হয়ে ৭০ থেকে ৮০ টাকা প্রতি কেজি হয়েছে। ঝিঙ্গে ও পটলের মতো সবজির দামও বেড়ে ৮০ থেকে ১০০ টাকার আশপাশে পৌঁছেছে। সবুজ শাকসবজি যেমন পালংশাক বা কচুশাকের দামও বৃদ্ধি পেয়ে ৪০ থেকে ৫০ টাকা প্রতি আঁটি হয়েছে।

Advertisements

পেঁয়াজের দামে ৮০ শতাংশ বৃদ্ধি দেখা গেছে, যা এখন ৪৫ টাকা প্রতি কেজি। সবচেয়ে উদ্বেগজনক হলো কাঁচা লঙ্কার দাম, যা ২০০ টাকা প্রতি কেজিতে পৌঁছে গেছে। এই দাম বৃদ্ধির ফলে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় পরিবর্তন আনতে বাধ্য হচ্ছে। অনেকে সবজির পরিবর্তে আলু বা সস্তা বিকল্পের উপর নির্ভর করছেন।

আরো দেখুনরেশন গ্রাহকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা! ডিলারদের ক্ষোভ, প্রতিবাদে নামছে সংগঠন

দাম বৃদ্ধির কারণ

বাজার বিশ্লেষকদের মতে, এই দাম (vegetable prices) বৃদ্ধির পিছনে একাধিক কারণ রয়েছে। গত বছরের শেষে ঘূর্ণিঝড় ও ভারী বৃষ্টির কারণে দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর ও হাওড়ার মতো উৎপাদনক্ষেত্রে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জলাবদ্ধতার কারণে ফসল নষ্ট হয়েছে, যার ফলে সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এছাড়া, তাপপ্রবাহ ও বৃষ্টির অভাবে কৃষি উৎপাদন কমে গেছে। পশ্চিমবঙ্গ ভেন্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কমল দে জানিয়েছেন, “ফসল শুকিয়ে গেছে, উৎপাদন ৪০-৫০ শতাংশ কমে গেছে। বাজারে সরবরাহ কম থাকায় দাম বাড়ছে।”

অন্যদিকে, পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি ও অন্যান্য রাজ্য থেকে আমদানির উপর নির্ভরতাও দাম বৃদ্ধির একটি বড় কারণ। উদাহরণস্বরূপ, টমেটোর বেশিরভাগ সরবরাহ এখন দক্ষিণ ভারত থেকে আসছে, যা পরিবহন খরচ বাড়িয়ে দিয়েছে।

সরকারি পদক্ষেপ

রাজ্য সরকার এই পরিস্থিতির উপর নজর রাখছে। সরকারের গঠিত টাস্ক ফোর্সের সদস্য রবীন্দ্রনাথ কোলে জানিয়েছেন, “আমরা শীঘ্রই বাজারে অভিযান চালাবো। আশা করছি, মৌসুমি বৃষ্টি শুরু হলে দাম কিছুটা কমবে।” এছাড়া, সরকারি উদ্যোগে পরিচালিত ‘সুফল বাংলা’ নেটওয়ার্ক ন্যায্য মূল্যে সবজি বিক্রির চেষ্টা করছে। আজ সুফল বাংলার স্টলে টমেটো ১১৫ টাকা ও কাঁচা লঙ্কা ২৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। তবে, এই উদ্যোগ এখনও ব্যাপক চাহিদা মেটাতে পারছে না।

ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

বিশেষজ্ঞদের মতে, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে বৃষ্টি না হলে দাম আরও বাড়তে পারে। তবে, মৌসুমি বৃষ্টি শুরু হলে উৎপাদন বাড়বে এবং বাজারে সরবরাহ বৃদ্ধি পাবে। ততক্ষণ পর্যন্ত, গৃহস্থদের ধৈর্য ধরে বাজেট সামলাতে হবে।
পশ্চিমবঙ্গে সবজির দাম নিয়ে এই সংকট কবে কাটবে, তা এখনও অনিশ্চিত। সরকার ও কৃষকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই এই সমস্যার সমাধান করতে পারে।