জামাইষষ্ঠীর আগেই সবজি থেকে ফলের দামে আগুন, মাথায় হাত ক্রেতা থেকে বিক্রেতার

বর্তমানে বাজারে সবজি ও ফলমূলের দাম (Vegetable Price) ক্রমাগত ঊর্ধ্বমুখী। প্রতিদিন বাজারে গিয়ে সাধারণ মানুষ বুঝতে পারছেন কীভাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ছে, আর তাতে তাঁদের…

Vegetable Prices in Kolkata Surge Amid Widening Supply-Demand Imbalance

বর্তমানে বাজারে সবজি ও ফলমূলের দাম (Vegetable Price) ক্রমাগত ঊর্ধ্বমুখী। প্রতিদিন বাজারে গিয়ে সাধারণ মানুষ বুঝতে পারছেন কীভাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ছে, আর তাতে তাঁদের দৈনন্দিন জীবনে কী ভয়াবহ প্রভাব পড়ছে। বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষদের জন্য এই মূল্যবৃদ্ধি একটি বড়সড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সংসার চালানো ক্রমশ কঠিন হয়ে পড়ছে।

যেসব সবজি প্রতিদিন রান্নার প্রয়োজন, সেগুলির দামেও লেগেছে আগুন। যেমন ধনেপাতা (Coriander Leaves) বর্তমানে বাজারে ১২ টাকা দরে পাওয়া যাচ্ছে, যা আগে ছিল অনেক কম। কারি পাতা (Curry Leaves) আগে সাধারণভাবে কম দামে পাওয়া যেত, কিন্তু এখন এর দাম ৩০ টাকা প্রতি কেজি থেকে বেড়ে খুচরো বাজারে ৫০ টাকা পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছে। ছোট ছোট পাতার জন্য এত মূল্য সাধারণ মানুষের কাছে অবাক করার মতো।

   

যদিও কুমড়ো, বাঁধাকপি ও করলা (Ash Gourd, Cabbage, Bitter Gourd)–এই তিনটি সবজির দাম এখনও কিছুটা সহনীয় বলা যায়, তবে সেগুলিও ধীরে ধীরে বাড়ছে। প্রতিটি পণ্যেই ৫ থেকে ১০ টাকার হেরফের হচ্ছে প্রতি সপ্তাহে। বাজার বিশেষজ্ঞদের মতে, এই দাম আরও বাড়তে পারে বর্ষার প্রাক্কালে।

অন্যদিকে কিছু প্রিমিয়াম সবজি যেমন বেবি কর্ন, ক্যাপসিকাম, বাটার বিনস ও বেগুন (Brinjal)—এই সবজিগুলির দাম ৪৫ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে ঘোরাফেরা করছে। আগে যে সবজিগুলি ৩০-৩৫ টাকার মধ্যে পাওয়া যেত, সেগুলিই এখন এক ধাক্কায় প্রায় দ্বিগুণ দামে পৌঁছে গিয়েছে। বিশেষ করে ক্যাপসিকামের দাম শহরের বাজারে ₹৭০ পর্যন্ত গিয়েছে কিছু এলাকায়।

শুধু সবজি নয়, ফলমূলের দামও সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। আপেল, আঙ্গুর, কমলা—সব কিছুর দামই এখন ২০-৩০ শতাংশ বেশি। স্থানীয় হকাররা জানাচ্ছেন, পাইকারি বাজারেই দাম বেশি হওয়ায় খুচরো বিক্রেতারাও সেই দামেই বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। ফলে শেষমেশ ক্রেতারাই চাপে পড়ছেন।

Advertisements

এই পরিস্থিতির পিছনে একাধিক কারণ রয়েছে। আবহাওয়ার পরিবর্তন, পরিবহণ খরচ বৃদ্ধি, চাষের খরচ বৃদ্ধি, এবং মধ্যস্বত্বভোগীদের ভূমিকা—সব মিলিয়ে এই দাম বৃদ্ধির হোতা। বহু চাষিই জানাচ্ছেন, বীজ, সার ও সেচের খরচ বাড়ায় তাঁদের উৎপাদন খরচও বেড়েছে, ফলে ফসলের দাম না বাড়িয়ে উপায় নেই।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সরকার যদি পর্যাপ্ত মনিটরিং না করে, তাহলে এই মূল্যবৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। কৃষিপণ্য সরবরাহ ব্যবস্থার মধ্যে আরও স্বচ্ছতা আনা প্রয়োজন, যাতে কৃষক ন্যায্য মূল্য পান এবং সাধারণ মানুষও সাশ্রয়ী দামে পণ্য কিনতে পারেন।

অর্থনীতিবিদদের মতে, এই মূল্যবৃদ্ধির প্রবণতা যদি চলতেই থাকে, তাহলে এর প্রভাব সামগ্রিক অর্থনীতিতেও পড়বে। সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমবে, এবং এতে অর্থনীতির চাকা ধীরে চলবে।

সব মিলিয়ে, সবজি ও ফলমূলের দাম বাড়ায় সাধারণ মানুষ যে চরম চাপে পড়েছেন, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। যদি দ্রুত ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তাহলে এই মূল্যবৃদ্ধি ভবিষ্যতে আরও বড় সংকট ডেকে আনতে পারে। তাই এখনই সময় সঠিক নীতি ও উদ্যোগ নেওয়ার—যাতে নিত্যপণ্যের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে থাকে।