দুর্গাপুর শহরের বাজারে সাধারণ মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মধ্যে সবচেয়ে বড় ধাক্কা এসে পড়েছে সবজির দামে। টানা বৃষ্টি ও পরিবহণে সমস্যা তৈরি হওয়ায় পাইকারি বাজার থেকে খুচরো বাজারে সবজির (Vegetable Price) জোগান কমেছে। তার ফলেই খুচরো বাজারে প্রায় সবজি (Vegetable Price) প্রতি কেজিতে ১০-২০ টাকা পর্যন্ত বেশি দাম গুনতে হচ্ছে ক্রেতাদের। একদিকে যেমন মধ্যবিত্ত গৃহস্থের রান্নাঘর সামলানো মুশকিল হয়ে উঠেছে, তেমনি নিম্নবিত্ত পরিবারের উপর চাপ আরও বেড়েছে।
কোন সবজির কত দাম?
শনিবার ও রবিবারের বাজারে চোখ রাখলেই বোঝা যায় দাম কতটা বেড়েছে। বেগুন প্রতি কেজি ৫০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ঝিঙে ৪০ থেকে ৬০ টাকা, ভেন্ডি বা ঢেঁড়স ৬০ টাকা(Vegetable Price) কেজি। পটলও ৫০ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে উঠানামা করছে। করলা, গাজর, কিন্দুরি প্রায় ৪০ থেকে ৫০ টাকা(Vegetable Price) কেজি, কাঁকরোল ৭০ টাকা, মুলো ৫০ টাকা, বাঁধাকপি ও পেঁপে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে মিলছে। টম্যাটোর দাম সবচেয়ে বেশি চড়েছে— ৬০ থেকে ৮০ টাকা প্রতি কেজি। তবে সবথেকে বেশি সমস্যায় ফেলেছে কাঁচা আদা ও কাঁচা লঙ্কা। প্রতি কেজি লঙ্কা প্রায় ১৫০ টাকা (Vegetable Price) দরে বিক্রি হচ্ছে, আদার দামও লাগামছাড়া।
বৃষ্টির দাপটে বিপাকে চাষি ও ক্রেতা
বাজারে সবজির যোগান কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ হল অতিবৃষ্টি। দক্ষিণবঙ্গ ও সংলগ্ন এলাকার একাধিক মাঠজমি জলে ডুবে গিয়েছে। ফলে মাঠ থেকে সবজি ওঠানো সম্ভব হচ্ছে না। নতুন ফসল আসতে সময় লাগছে। অন্যদিকে, যেটুকু সবজি উঠছে, তা পাইকারি বাজারে পৌঁছতে গিয়ে খরচ বেড়ে যাচ্ছে। চাষিরাও ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না। একদিকে ফসল নষ্ট হচ্ছে, অন্যদিকে যে ফসল তুলতে পারছেন, তা উচ্চমূল্যে শহরে পৌঁছচ্ছে।
খুচরো বাজারে দিশেহারা ক্রেতারা
বিভিন্ন বাজারে দেখা গেল, ক্রেতারা অসন্তোষ প্রকাশ করছেন। এক গৃহবধূর বক্তব্য, “এতদিনে বেগুন, ঝিঙে, ভেন্ডি— এ সব সাধারণ সবজি। আগে ৩০-৪০ টাকায় কিনে নিতাম। এখন ৬০-৭০ টাকা কেজি দরে কিনতে হচ্ছে। প্রতিদিনের বাজার সামলানো খুবই কঠিন।” আরেক ক্রেতা জানালেন, “টম্যাটোর দাম একেবারে আকাশছোঁয়া। ৮০ টাকা দিয়ে এক কেজি টম্যাটো কেনা সম্ভব নয়। রান্নায় এখন টম্যাটো কমাতে হচ্ছে।”
কাঁচা লঙ্কার আগুন দাম
কাঁচা লঙ্কার দাম প্রায় ১৫০ টাকা(Vegetable Price) ছুঁয়েছে। যা সাধারণ মানুষের জন্য কার্যত দুঃস্বপ্নের সমান। দুর্গাপুরের এক বাজার বিক্রেতা জানালেন, “ঝাড়খণ্ড এবং নদীয়ার দিক থেকে লঙ্কা আসে। সেখানকার আবহাওয়া ও পরিবহণ সমস্যার কারণে জোগান কমেছে। তাই দাম বাড়ছে। আর এই মুহূর্তে দাম কমার সম্ভাবনাও কম।”
বিক্রেতাদের দাবি
খুচরো বিক্রেতারা বলছেন, তারা ইচ্ছে করে দাম(Vegetable Price) বাড়াচ্ছেন না। পাইকারি বাজার থেকেই সবজি বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। সেই দাম তুলতে গেলে খুচরো বাজারে বেশি দরে বিক্রি করতেই হচ্ছে। এক বিক্রেতার কথায়, “টম্যাটো আমরা পাইকারি বাজার থেকে ৫০-৬০ টাকা কেজি দরে আনছি। আমাদের উপর ভাড়া ও নষ্টের খরচ যোগ করলে ৭০-৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা ছাড়া উপায় নেই।”
সামনে আরও বাড়তে পারে চাপ
আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, আগামী ক’দিনে আরও বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। যদি মাঠে জল জমে থাকে, তাহলে নতুন করে সবজির জোগান স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে। অর্থাৎ দুর্গাপুরের বাজারে সবজির এই আগুন দাম আরও কিছুদিন স্থায়ী হতে পারে।
সব মিলিয়ে, দুর্গাপুরের বাজারে সাধারণ ক্রেতার হাঁসফাঁস পরিস্থিতি। প্রতিদিনের রান্নাঘর সামলাতে এখন বেছে বেছে কম পরিমাণ সবজি কিনছেন অনেকে। সবজি ছাড়া রান্না অসম্ভব হলেও দাম দেখে অনেকেরই এখন মনে হচ্ছে, মাছ-মাংসের চেয়ে সবজিই বেশি বিলাসী জিনিসে পরিণত হয়েছে।