বাজারে প্রবেশ করলেই যেন ক্রেতাদের মাথায় হাত পড়ছে। একেবারে লাগামছাড়া সবজির দাম (Vegetable Price)। সপ্তাহের শুরুতেই আকাশছোঁয়া দরে সাধারণ মানুষ নাজেহাল। প্রতিদিনের রান্নাঘরের খরচ সামলাতে গিয়ে মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর হাঁসফাঁস অবস্থা।
কলকাতা ও শহরতলির একাধিক বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় সব ধরনের সবজিতেই লাফিয়ে লাফিয়ে দাম বাড়ছে। টমেটো, ফুলকপি, পটল, ঝিঙে, বেগুন, এমনকি সাধারণত সস্তায় পাওয়া যায় এমন লাউ কিংবা কুমড়োতেও চড়া দর। টমেটোর দাম কেজি প্রতি ৮০ থেকে ১০০ (Vegetable Price) টাকায় দাঁড়িয়েছে। বেগুন ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি, ফুলকপি একেকটা বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। পেঁয়াজের দামও ৪০ টাকার (Vegetable Price) নিচে নামছে না। আলু—যা সাধারণত মধ্যবিত্তের ভরসা—তার দামও বেড়ে হয়েছে কেজি প্রতি ৩০-৩৫ টাকা।
সবজির দরে (Vegetable Price) এই অস্বাভাবিক উত্থানের পেছনে একাধিক কারণ রয়েছে। ব্যবসায়ীদের একাংশের দাবি, বর্ষার অতিরিক্ত বৃষ্টির ফলে অনেক জেলায় ক্ষেতের ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। টানা জল জমে থাকার কারণে অনেক সবজি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সেই ঘাটতি সরাসরি বাজারে প্রভাব ফেলছে। উপরন্তু, পরিবহণ খরচও বেড়েছে, যার বোঝা গিয়ে পড়ছে ক্রেতাদের উপরেই।
অন্যদিকে, ক্রেতাদের অভিযোগ, ব্যবসায়ীরা কৃত্রিমভাবে দাম বাড়াচ্ছে। পাইকারি বাজারে সবজির দাম তুলনামূলকভাবে কিছুটা কম হলেও খুচরো বাজারে এসে দ্বিগুণ হয়ে যাচ্ছে। ফলে সাধারণ ক্রেতারা মনে করছেন, লকডাউন বা উৎসবের মরসুমের মতো সময়ে যেমন দাম বাড়ানো হয়, তেমনি সুযোগ বুঝেই এখন ব্যবসায়ীরা দাম বাড়াচ্ছে।
গৃহিণীরা বলছেন, প্রতিদিনের রান্না এখন যেন অগ্নিপরীক্ষা। “আগে যেখানে ৫০০ টাকায় সপ্তাহের বাজার হয়ে যেত, এখন সেখানে অন্তত ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা(Vegetable Price) লাগছে। প্রতিদিনই হিসেব কষে কিনতে হচ্ছে। কোনও সবজি নিলে অন্যটা বাদ দিতে হচ্ছে।”—অভিযোগ এক গৃহবধূর।
অন্যদিকে, নিম্নবিত্ত পরিবারের জন্য অবস্থা আরও শোচনীয়। দৈনিক আয়ে চলা শ্রমজীবী মানুষদের পক্ষে এই দরে সবজি কেনা কার্যত অসম্ভব হয়ে দাঁড়াচ্ছে। অনেকেই তাই বিকল্প হিসাবে ডাল বা ডিমের দিকে ঝুঁকছেন। কিন্তু সেখানেও চড়া দাম। ফলে সংসারের রান্নার থালা থেকে সবজির রঙিন বৈচিত্র্য যেন ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে।
অর্থনীতিবিদরা জানাচ্ছেন, কেবল মৌসুমি সমস্যাই নয়, জোগান শৃঙ্খলেও বড়সড় ত্রুটি রয়েছে। ফসল মাঠ থেকে বাজারে পৌঁছোনোর পথে নানা স্তরে দাম বেড়ে যাচ্ছে। সেই কাঠামোগত সমস্যার সমাধান না হলে এভাবে দাম নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়।
সরকারি তরফে এখনও পর্যন্ত কোনও কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। তবে কৃষি দফতরের দাবি, কয়েক সপ্তাহের মধ্যে নতুন ফসল বাজারে এলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে। ততদিন পর্যন্ত ক্রেতাদের ধৈর্য ধরতে হবে। কিন্তু সাধারণ মানুষের প্রশ্ন, প্রতিদিনের সংসার চালানোই যখন দায় হয়ে পড়েছে, তখন কিভাবে ধৈর্য ধরা সম্ভব?
সবমিলিয়ে, সপ্তাহের শুরুতেই সাধারণ মানুষের একমাত্র আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠেছে সবজির দাম। বাজারে গিয়ে মাথায় হাত পড়ছে প্রত্যেকের। চড়া দরের কারণে গৃহস্থালির বাজেট একেবারে উল্টে যাচ্ছে। প্রতিদিনের রান্না এখন এক অনিবার্য চিন্তার কারণ।