বিজেপি-তৃণমূলের রাজনৈতিক তরজা মেট্রো উদ্বোধন ঘিরে, মমতাকে আমন্ত্রণ রেলমন্ত্রীর

কলকাতার পরিবহণ ব্যবস্থায় এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হতে চলেছে আগামী ২২ আগস্ট।  এই দিনই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী উদ্বোধন করবেন শহরের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ মেট্রো প্রকল্প— ১.…

Kolkata Metro

কলকাতার পরিবহণ ব্যবস্থায় এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হতে চলেছে আগামী ২২ আগস্ট।  এই দিনই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী উদ্বোধন করবেন শহরের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ মেট্রো প্রকল্প—
১. শিয়ালদহ–এস্প্ল্যানেড সেকশন (গ্রীন লাইন)
২. হেমন্ত মুখোপাধ্যায় (রুবি ক্রসিং)–বেলেঘাটা সেকশন (অরেঞ্জ লাইন)
৩. নোয়াপাড়া–জয় হিন্দ বিমানবন্দর সেকশন (ইয়েলো লাইন)

রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে একটি আনুষ্ঠানিক চিঠি পাঠিয়ে এই অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেছেন, “আপনাকে সাদর নিমন্ত্রণ জানাচ্ছি জেসোর রোড মেট্রো স্টেশনে এই গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচিতে উপস্থিত থাকার জন্য।”

   

তবে মুখ্যমন্ত্রী বা রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করা হয়নি তিনি অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন কিনা। এই নিয়ে রাজনৈতিক অন্দরে ইতিমধ্যেই চাপানউতোর শুরু হয়েছে।

কলকাতার যাত্রীদের জন্য এ এক ঐতিহাসিক খবর। বিশেষত গ্রীন লাইন, যেটি ভারতের প্রথম আন্ডারওয়াটার মেট্রো হিসেবে পরিচিত, এখন থেকে পুরোপুরি চালু হবে। এই লাইনটি হাওড়া ময়দান থেকে সল্টলেক সেক্টর ৫ পর্যন্ত সংযোগ দেবে। যাত্রীদের জন্য এটি সময় ও সুবিধার এক নতুন অধ্যায় খুলে দেবে।

অন্যদিকে, অরেঞ্জ লাইনের উদ্বোধন হলে রুবি ক্রসিং থেকে বেলেঘাটা পর্যন্ত নতুন মেট্রো সুবিধা মিলবে। ইয়েলো লাইন চালু হলে বহু প্রতীক্ষিত বিমানবন্দর মেট্রো সংযোগও চালু হবে, যা শহর ও বিমান যাত্রীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সময় নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। তাদের দাবি, দীর্ঘদিন ধরে আটকে থাকা প্রকল্পগুলি হঠাৎ করেই চালু করা হচ্ছে শুধু আগামী বছরের বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার জন্য।

তৃণমূল নেতাদের মতে, কেন্দ্র ইচ্ছাকৃতভাবে এই প্রকল্পগুলির গতি কমিয়ে রেখেছিল। ভোটের আগে হঠাৎ করে উদ্বোধন করে সরকারকে বড় প্রাপ্তি দেখাতে চাইছে বিজেপি।

Advertisements

তবে রাজ্য বিজেপির সভাপতি সমীক ভট্টাচার্য এই অভিযোগকে সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন। তাঁর বক্তব্য, “বঙ্গের ৪৩টি রেল প্রকল্প, যার মধ্যে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোও রয়েছে, আটকে আছে মূলত জমি অধিগ্রহণ সমস্যা এবং রাজ্য সরকারের সহযোগিতার অভাবে। চিঙ্গরিঘাটায় জমির জট না হলে অরেঞ্জ লাইন বহু আগেই সল্টলেক সেক্টর ৫-এর সঙ্গে যুক্ত হত।”

তিনি আরও বলেন, মুখ্যমন্ত্রী যদি এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকেন তাহলে তা রাজ্যের মানুষের জন্য ইতিবাচক বার্তা বহন করবে।
এখনও পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রীর পক্ষ থেকে স্পষ্ট কোনও বার্তা আসেনি। রাজনৈতিক মহলের একাংশ মনে করছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই অনুষ্ঠানে যোগ দিলে কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে একটি সদ্ভাবের ছবি তৈরি হবে। তবে তিনি না গেলে বিরোধীরা আবারও রাজ্য সরকারের ‘বাধার রাজনীতি’ নিয়ে সরব হবে।

এই তিনটি মেট্রো লাইনের উদ্বোধন শুধু কলকাতা নয়, গোটা দক্ষিণবঙ্গের যাত্রীদের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনবে।
গ্রীন লাইন: আন্ডারওয়াটার টানেল পার হয়ে হাওড়া ও কলকাতার সংযোগ আরও মজবুত করবে।
অরেঞ্জ লাইন: EM বাইপাস অঞ্চলের ক্রমবর্ধমান চাপ কমাবে, বিশেষত হাসপাতাল ও আইটি করিডরের যাত্রীদের সুবিধা দেবে।
ইয়েলো লাইন: বিমানবন্দরে সরাসরি মেট্রো সংযোগ শহরের পর্যটন, বাণিজ্য ও যাত্রীসেবায় বিপুল সুবিধা আনবে।
যাত্রী বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিদিন কয়েক লক্ষ মানুষ এই পরিষেবা থেকে উপকৃত হবেন এবং সড়কপথে যানজট অনেকটা কমে আসবে।

প্রকল্পগুলির উদ্বোধন ঘিরে কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে রাজনৈতিক টানাপড়েন থাকলেও সাধারণ মানুষ আশা করছে এর মধ্য দিয়ে নতুন কর্মসংস্থান, ব্যবসা ও পর্যটনের সুযোগ তৈরি হবে। বিশেষ করে বিমানবন্দর সংযোগ চালু হওয়ায় আন্তর্জাতিক পর্যটক ও ব্যবসায়ীদের কাছে কলকাতার গুরুত্ব আরও বাড়বে।

২২ আগস্ট শুধু একটি উদ্বোধনী অনুষ্ঠান নয়, এটি কলকাতার ভবিষ্যৎ যাতায়াতের পথকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করবে। রাজনীতি যাই হোক না কেন, শহরের মানুষ এই প্রকল্পগুলির জন্য বহু বছর অপেক্ষা করেছেন। এখন দেখার, এই ঐতিহাসিক দিনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উপস্থিত থাকেন কিনা।