এনআরআইদের জন্য স্বস্তির খবর, মার্কিন সেনেটের রেমিট্যান্সে মাত্র ১% ট্যাক্স

মার্কিন সেনেট সম্প্রতি এমন একটি প্রস্তাব পেশ করেছে, যাতে রেমিট্যান্স ট্রান্সফার ট্যাক্স (NRI Remittance Tax) ৩.৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে মাত্র ১ শতাংশ করার কথা বলা…

NRI Remittance Tax, One Big Beautiful Bill,US Senate, Donald Trump

মার্কিন সেনেট সম্প্রতি এমন একটি প্রস্তাব পেশ করেছে, যাতে রেমিট্যান্স ট্রান্সফার ট্যাক্স (NRI Remittance Tax) ৩.৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে মাত্র ১ শতাংশ করার কথা বলা হয়েছে। এই প্রস্তাব কার্যকর হলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী বহু প্রবাসী ভারতীয় (NRI) বড় ধরনের আর্থিক স্বস্তি পাবে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের “ওয়ান বিগ বিউটিফুল বিল অ্যাক্ট”-এর সংশোধিত খসড়ায় এই পরিবর্তন অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। খসড়ায় বলা হয়েছে, মার্কিন ব্যাংক এবং অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানে থাকা অ্যাকাউন্ট থেকে সরাসরি করা রেমিট্যান্স ট্রান্সফারের উপর এই ট্যাক্স প্রযোজ্য হবে না। এমনকি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ইস্যু করা ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে করা লেনদেনও এই ট্যাক্সের বাইরে থাকবে। এর ফলে, প্রবাসীদের প্রতিদিনের বেশিরভাগ রেমিট্যান্স লেনদেন এই ট্যাক্সের আওতার বাইরে পড়বে।

   

প্রথমে, এই বিলের প্রস্তাবিত ট্যাক্স হার ছিল ৫ শতাংশ। পরে, হাউস রিপাবলিকানরা তা কমিয়ে ৩.৫ শতাংশে নিয়ে আসে। তবে, সাম্প্রতিক সেনেটের খসড়া প্রস্তাবে আরও এক ধাপ কমিয়ে তা ১ শতাংশ করার সুপারিশ করা হয়েছে।

গ্রান্ট থর্নটন ভারতের পার্টনার এবং মার্কিন ট্যাক্স বিশেষজ্ঞ লয়েড পিন্টো জানিয়েছেন, “সেনেট রিপাবলিকানরা ‘ওয়ান বিগ বিউটিফুল বিল অ্যাক্ট’-এর একটি আপডেটেড খসড়া প্রকাশ করেছে। তারা আগামী ৪ জুলাইয়ের মধ্যে এই বিল পাস করার লক্ষ্য স্থির করেছে। নতুন সেনেট খসড়ায় রেমিট্যান্স ট্রান্সফারের শর্তাবলী উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তন করা হয়েছে। এই খসড়া অনুযায়ী রেমিট্যান্স ট্রান্সফার ট্যাক্স ৩.৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশ করা হয়েছে।”

পিন্টো আরও বলেছেন, “এই প্রস্তাব অনুযায়ী, মার্কিন ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্ট থেকে সরাসরি করা রেমিট্যান্স এবং মার্কিন ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড দিয়ে করা লেনদেনের উপর কোনো ট্যাক্স প্রযোজ্য হবে না। ফলে, প্রবাসী ভারতীয়রা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বা কার্ড ব্যবহার করে টাকা পাঠালে কর মুকুবের সুবিধা পাবেন।”

যেসব রেমিট্যান্স ট্রান্সফারে প্রেরক নগদ টাকা, মানি অর্ডার, ক্যাশিয়ার্স চেক বা অন্য কোনো শারীরিক ইন্সট্রুমেন্ট ব্যবহার করবে, সেগুলির উপর এই ১ শতাংশ ট্যাক্স প্রযোজ্য হবে। নতুন এই ট্যাক্স বিধি ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৫-এর পরে কার্যকর হবে।

এই প্রস্তাব কার্যকর হলে, যুক্তরাষ্ট্রে থাকা প্রায় ৪০ লক্ষেরও বেশি ভারতীয় প্রবাসী সরাসরি উপকৃত হবেন। বিশেষ করে যারা পরিবারের জন্য নিয়মিত টাকা পাঠান, তাদের জন্য এটি বড় রকমের স্বস্তির খবর।

Advertisements

বর্তমানে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ফিলিপাইন, নেপালসহ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে প্রতি বছর কোটি কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠানো হয়। এই টাকা প্রাপকদের দেশে মূলত পরিবারের ভরণপোষণ, শিক্ষা, চিকিৎসা, বাড়ি নির্মাণ এবং অন্যান্য মৌলিক চাহিদা পূরণে ব্যবহার করা হয়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ট্যাক্স কমানোর সিদ্ধান্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রবাসী সম্প্রদায়ের আর্থিক প্রবাহে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। পিন্টো বলছেন, “এই প্রস্তাব এনআরআইদের উদ্বেগ কমাবে এবং ব্যাংকিং চ্যানেলগুলির মাধ্যমে লেনদেন বাড়াতে উৎসাহিত করবে। সরকারের রাজস্ব নীতি ও প্রবাসীদের আর্থিক স্বার্থের মধ্যে একটি ভারসাম্য তৈরি করা হয়েছে।”

তবে এখনও চূড়ান্তভাবে এই প্রস্তাব পাশ হয়নি। সেনেটের খসড়া নিয়ে আগামী দিনে আলোচনা হবে এবং ৪ জুলাইয়ের মধ্যে পাস করার পরিকল্পনা রয়েছে। পাস হয়ে গেলে, এটি হাউসে ফেরত যাবে এবং সেখানে চূড়ান্তভাবে অনুমোদন পেলে প্রেসিডেন্টের সইয়ের পর আইন হিসেবে কার্যকর হবে।

অনেক অর্থনীতিবিদ এই পরিবর্তনকে স্বাগত জানিয়ে বলছেন, এটি প্রবাসী ভারতীয়দের জন্য একটি ‘উইন-উইন সিচুয়েশন’। অর্থাৎ, প্রবাসীরা বেশি পরিমাণ অর্থ দেশে পাঠাতে পারবে এবং এতে করে ভারতের অর্থনৈতিক প্রবাহও বাড়বে।

অন্যদিকে, অনেকে আবার বলছেন, ব্যাংক এবং ডেবিট/ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রে কর অব্যাহতি দেয়ার ফলে কিছু লোক হয়তো ক্যাশ বা হাওয়ালা চ্যানেলের পরিবর্তে বৈধ ব্যাংকিং চ্যানেল ব্যবহার করবে। এর ফলে অর্থপাচার রোধ করা সম্ভব হবে এবং সরকারের নজরদারিও সহজ হবে।

মোটের উপর, মার্কিন সেনেটের এই প্রস্তাব ভারতের প্রবাসী কমিউনিটির জন্য একটি বড় সুখবর। এখন শুধু দেখা বাকি, এই প্রস্তাব চূড়ান্ত অনুমোদন পায় কি না। প্রবাসী ভারতীয়দের মধ্যে ইতিমধ্যে এই প্রস্তাব নিয়ে ব্যাপক উচ্ছ্বাস দেখা গেছে এবং অনেকেই আশা করছেন, খুব শীঘ্রই এটি কার্যকর হবে।