ডিমের বাজারে অস্থিরতা, দাম রেকর্ড ছুঁই ছুঁই

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ডিমের দাম (Egg Prices) সর্বকালের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে, সাম্প্রতিক কনজিউমার প্রাইস ইনডেক্স (সিপিআই) অনুসারে প্রতি ডজনের দাম এখন USD ৬.২৩। এই মূল্যবৃদ্ধি ঘটেছে…

US Egg Prices girl

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ডিমের দাম (Egg Prices) সর্বকালের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে, সাম্প্রতিক কনজিউমার প্রাইস ইনডেক্স (সিপিআই) অনুসারে প্রতি ডজনের দাম এখন USD ৬.২৩। এই মূল্যবৃদ্ধি ঘটেছে যদিও পাইকারি দাম কমেছে এবং ডিম উৎপাদনকারী খামারগুলোতে সাম্প্রতিক কোনো বার্ড ফ্লু প্রকোপ দেখা যায়নি। ভোক্তা এবং ডিমের ওপর নির্ভরশীল ব্যবসায়ীদের জন্য অবিলম্বে দাম কমার কোনো সম্ভাবনা নেই, কারণ ইস্টার (২০ এপ্রিল) পর্যন্ত চাহিদা সাধারণত উচ্চ থাকে।

বার্ড ফ্লু কমলেও রেকর্ড দাম

শিল্প বিশ্লেষকরা মার্চ মাসে পাইকারি দামে উল্লেখযোগ্য হ্রাসের কারণে খুচরা ডিমের দাম কমার আশা করেছিলেন। কিন্তু সেই প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। এই বছরের শুরুতে, বার্ড ফ্লু প্রকোপের জন্য দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে দায়ী করা হয়েছিল, যখন রোগটি নিয়ন্ত্রণে ৩০ মিলিয়নেরও বেশি ডিম-পাড়া মুরগি মেরে ফেলা হয়েছিল। বর্তমানে প্রকোপ কমলেও, দাম এখনও উচ্চ পর্যায়ে রয়েছে, যা বাজারের জটিল গতিশীলতার ইঙ্গিত দেয়।

বার্ড ফ্লুর প্রভাব ডিম সরবরাহে

বর্তমান বার্ড ফ্লু প্রকোপ শুরু হওয়ার পর থেকে, ১৬৮ মিলিয়নেরও বেশি পাখি মেরে ফেলা হয়েছে, যার বেশিরভাগই ডিম-পাড়া মুরগি। এই রোগটি বন্য পাখিদের মলের মাধ্যমে সহজেই ছড়িয়ে পড়ে, যা নিয়ন্ত্রণ করা চ্যালেঞ্জিং। যখন একটি পাখি অসুস্থ হয়, তখন পুরো পালটিকে মেরে ফেলা হয় যাতে রোগটি আরও ছড়াতে না পারে। এটি ডিমের সরবরাহে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে।

গত শরৎকালে প্রকোপের সম্মুখীন হওয়া কিছু খামার এখন তাদের সুবিধাগুলো জীবাণুমুক্ত করে এবং নতুন পাল তৈরি করে উৎপাদন পুনরায় শুরু করেছে। তবে, এত বড় আকারে মুরগি মারার প্রভাব এখনও সরবরাহের ওপর উল্লেখযোগ্য রয়ে গেছে।

সরকারি প্রতিক্রিয়া এবং বাজারের গতিশীলতা

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি মার্কিন কৃষি বিভাগের রিপোর্টে পাইকারি ডিমের দাম কমার জন্য কৃতিত্ব দাবি করার চেষ্টা করেছেন। তবে, বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বার্ড ফ্লুর বিরুদ্ধে কৃষকদের প্রতিরক্ষা জোরদার করার তার কৌশল সম্ভবত দীর্ঘমেয়াদী সুবিধা দেবে, তাৎক্ষণিক স্বস্তি নয়।
বার্ড ফ্লু শুধু পাখিদেরই নয়, দুগ্ধজাত গবাদি পশুদেরও আক্রান্ত করেছে। রোগটির ব্যাপক প্রকৃতি নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টাকে জটিল করে তুলেছে এবং বাজারের গতিশীলতাকে প্রভাবিত করছে।

দামের প্রবণতা সময়ের সাথে

২০২৩ সালের জানুয়ারিতে ডিমের দাম প্রতি ডজনে USD ৪.৮২-এ পৌঁছেছিল, তারপর ২০২৩ সালের আগস্টে তা ধীরে ধীরে কমে USD ২.০৪-এ নেমে আসে। এরপর থেকে দাম আবার স্থিরভাবে বাড়তে শুরু করেছে। এই ওঠানামা রোগ প্রকোপ এবং বাজারের চাপের মধ্যে শিল্পটির চলমান চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরে।

বাজার ব্যবস্থাপনার জটিলতা

এই পরিস্থিতি রোগ প্রকোপ এবং চাহিদার চক্রের ওঠানামার মতো বাহ্যিক কারণে প্রভাবিত কৃষি বাজার পরিচালনার জটিলতাকে তুলে ধরে। খামারগুলো পুনরুদ্ধার এবং অভিযোজনের প্রক্রিয়ায় থাকলেও, সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো উন্নয়নের ওপর নিবিড়ভাবে নজর রাখছে।

Advertisements

ভোক্তাদের ওপর প্রভাব

এই অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধি ভোক্তাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ডিম যেহেতু অনেক পরিবারের নিত্যদিনের খাদ্যতালিকার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, তাই এর দাম বৃদ্ধি সাধারণ মানুষের বাজেটে চাপ সৃষ্টি করছে। বেকারি, রেস্তোরাঁ এবং অন্যান্য ব্যবসায়ীদের জন্যও এটি উৎপাদন খরচ বাড়িয়ে দিয়েছে।

দীর্ঘমেয়াদী সমাধানের প্রয়োজন

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, শুধুমাত্র প্রকোপ নিয়ন্ত্রণই যথেষ্ট নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদী সমাধানের জন্য গবেষণা এবং প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। কিছু দেশ ইতিমধ্যে বার্ড ফ্লুর বিরুদ্ধে টিকা প্রয়োগ শুরু করেছে, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্যও একটি সম্ভাব্য পথ হতে পারে। তবে, এই প্রক্রিয়া বাস্তবায়নে সময় এবং সম্পদের প্রয়োজন।

ভবিষ্যতের সম্ভাবনা

ইস্টারের পর চাহিদা কিছুটা কমতে পারে, যা দামের ওপর কিছুটা চাপ কমাতে পারে। তবে, যদি বার্ড ফ্লু আবার মাথাচাড়া দেয়, তাহলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে। খামারিরা এখন নতুন মুরগি পালন এবং জৈব নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের ক্ষতি এড়ানো যায়।

ডিমের দামের এই রেকর্ড বৃদ্ধি কৃষি শিল্প এবং ভোক্তা বাজারের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সংকেত। বার্ড ফ্লু প্রকোপ কমলেও, এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব এবং বাজারের চাহিদা দামকে উচ্চ পর্যায়ে রেখেছে। সরকার, কৃষক এবং বিজ্ঞানীদের সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান খুঁজতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতি এড়ানো যায় এবং ভোক্তারা সাশ্রয়ী মূল্যে ডিম পেতে পারেন