মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি (US Economy) বর্তমানে একটি সম্ভাব্য মন্দার দ্বারপ্রান্তে রয়েছে বলে সতর্ক করেছেন মুডি’স অ্যানালিটিক্সের প্রধান অর্থনীতিবিদ মার্ক জান্ডি। তিনি জানিয়েছেন, দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রায় এক-তৃতীয়াংশ অবদান রাখা রাজ্যগুলি ইতিমধ্যেই মন্দার মধ্যে রয়েছে বা উল্লেখযোগ্য ঝুঁকির সম্মুখীন। ২০০৮ সালের আর্থিক সংকটের পূর্বাভাস দেওয়া এই অর্থনীতিবিদ সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যম প্ল্যাটফর্ম এক্স-এ এই তথ্য প্রকাশ করেছেন। নিউজউইকের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে জান্ডি সাধারণ আমেরিকানদের উপর এই ঝুঁকির প্রভাব সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। তিনি বলেন, “সাধারণ আমেরিকানদের জন্য এই ঝুঁকি দুটি উপায়ে প্রকাশ পায়। এর ফলে দোকানে পণ্যের দাম বৃদ্ধি পায় এবং খাদ্য, পণ্য ও পরিবহন শিল্পের সঙ্গে যুক্ত শিল্পগুলিতে কর্মসংস্থানে বিঘ্ন ঘটে।” দৈনন্দিন কেনাকাটায় মূল্যবৃদ্ধি ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠবে।
US Economy on Recession: মার্কিন অর্থনীতি মন্দার ঝুঁকিতে!
জান্ডি বিভিন্ন অর্থনৈতিক সূচক, যেমন ভোক্তা ব্যয়, কর্মসংস্থান এবং উৎপাদন তথ্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, যা মন্দার সম্ভাবনার দিকে ইঙ্গিত করে। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য নীতি, বিশেষত শুল্ক নীতির কারণে (US Economy) কোম্পানিগুলির মুনাফা হ্রাস এবং আবাসন বাজারের চলমান সমস্যা নিয়েও উদ্বিগ্ন। বর্তমানে মুদ্রাস্ফীতির হার ২.৭% থেকে বেড়ে আগামী বছরের মধ্যে ৩% এর উপরে, এমনকি ৪% এর কাছাকাছি পৌঁছতে পারে বলে তিনি পূর্বাভাস দিয়েছেন। এই মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধি ভোক্তাদের দৈনন্দিন ব্যয়ে আরও চাপ সৃষ্টি করবে।
দক্ষিণাঞ্চলের রাজ্যগুলি বর্তমানে তুলনামূলকভাবে শক্তিশালী অর্থনীতি প্রদর্শন করছে, তবে তাদের প্রবৃদ্ধির হার ধীর হয়ে আসছে। অন্যদিকে, ক্যালিফোর্নিয়া এবং নিউ ইয়র্কের মতো রাজ্যগুলি স্থিতিশীল রয়েছে, যা জাতীয় অর্থনীতির মন্দা এড়াতে গুরুত্বপূর্ণ। এই দুটি রাজ্য মার্কিন জিডিপির এক-পঞ্চমাংশেরও বেশি অবদান রাখে। জান্ডি উল্লেখ করেছেন যে ওয়াইমিং, মন্টানা, মিনেসোটা, মিসিসিপি, কানসাস এবং ম্যাসাচুসেটসের মতো রাজ্যগুলি মন্দার ঝুঁকিতে রয়েছে। বিশেষ করে ওয়াশিংটন ডিসি এলাকা সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে কাটছাঁটের কারণে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত হচ্ছে। তবে, কিছু অঞ্চল এখনও স্থিতিশীল রয়েছে।
US Economy on Recession: মার্ক জান্ডি’র মূল সূচক ও ভোক্তাদের উপর প্রভাব
জান্ডি’র বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মার্কিন অর্থনীতি (US Economy) বর্তমানে একটি সংকটময় পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, যেখানে শুল্ক নীতি এবং কঠোর অভিবাসন নীতি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। তিনি বলেন, “শুল্ক কোম্পানিগুলির মুনাফা এবং ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতার উপর গভীরভাবে প্রভাব ফেলছে। অভিবাসী শ্রমিকদের সংখ্যা হ্রাস পাওয়ায় অর্থনীতির আকার ছোট হচ্ছে।” তিনি আরও উল্লেখ করেছেন যে শ্রমবাজারে চাকরির সংখ্যা কমছে, বিশেষ করে স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা এবং স্থানীয় সরকারি খাত ছাড়া অন্যান্য শিল্পে নিয়োগ কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছে। জুলাই মাসে মাত্র ৭৩,০০০ নতুন চাকরি সৃষ্টি হয়েছে, যা প্রত্যাশিত ১১৫,০০০-এর তুলনায় অনেক কম। এছাড়া, মে ও জুন মাসের চাকরির তথ্যে ২৫৮,০০০-এরও বেশি পুনর্বিবেচনা করা হয়েছে, যা শ্রমবাজারের দুর্বলতার ইঙ্গিত দেয়।
মুদ্রাস্ফীতির প্রভাব সম্পর্কে জান্ডি বলেন, “মূল্যবৃদ্ধি ইতিমধ্যেই তথ্যে দৃশ্যমান, তবে এটি এমন এক পর্যায়ে পৌঁছবে যে মানুষ এটি উপেক্ষা করতে পারবে না।” তিনি পূর্বাভাস দিয়েছেন যে আগামী বছরের মধ্যে মুদ্রাস্ফীতি ৪% এর কাছাকাছি পৌঁছতে পারে, যা ভোক্তাদের দৈনন্দিন খরচে আরও চাপ সৃষ্টি করবে। এই মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধি খাদ্য, পণ্য এবং পরিবহন খাতে বিশেষভাবে প্রভাব ফেলবে, যা সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয়কে আরও বাড়িয়ে তুলবে।
এই পরিস্থিতিতে ফেডারেল রিজার্ভের ভূমিকাও জটিল হয়ে উঠেছে। জান্ডি উল্লেখ করেছেন, মুদ্রাস্ফীতি ২% লক্ষ্যমাত্রার উপরে থাকায় ফেডের পক্ষে অর্থনৈতিক প্রণোদনা দেওয়া কঠিন। তিনি বলেন, “মুদ্রাস্ফীতি বাড়ছে, তাই ফেডের জন্য অর্থনীতিকে উদ্ধার করা কঠিন।” এছাড়া, রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতি এবং অভিবাসন নীতি অর্থনীতির উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করছে। তিনি আরও বলেন, যদি শুল্ক বৃদ্ধি বন্ধ হয় বা অভিবাসন নীতি আরও যুক্তিসঙ্গত হয়, তবে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পথে ফিরতে পারে।
অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা এবং নীতিনির্ধারকদের জন্য এই সময়ে সতর্কতার সঙ্গে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জান্ডি’র বিশ্লেষণ অনুসারে, অর্থনীতি এখনও মন্দায় প্রবেশ করেনি, তবে ঝুঁকি ক্রমশ বাড়ছে। আগামী মাসগুলিতে মূল অর্থনৈতিক সূচক এবং নীতিগত সিদ্ধান্তগুলি ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন, যাতে মার্কিন অর্থনীতির (US Economy) ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা বোঝা যায়।