মার্কিন ভিসার শর্ত ভাঙলে ডিপোর্ট, ভারতীয়দের হুঁশিয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত ভারতীয় নাগরিক ও ভিসাধারীদের উদ্দেশে কড়া বার্তা দিয়েছে ভারতে মার্কিন দূতাবাস। দূতাবাস স্পষ্ট জানিয়েছে, আমেরিকায় অবস্থানের অনুমোদিত সময়সীমা পেরিয়ে থাকলে ভিসা বাতিল,…

মার্কিন ভিসার শর্ত ভাঙলে ডিপোর্ট, ভারতীয়দের হুঁশিয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত ভারতীয় নাগরিক ও ভিসাধারীদের উদ্দেশে কড়া বার্তা দিয়েছে ভারতে মার্কিন দূতাবাস। দূতাবাস স্পষ্ট জানিয়েছে, আমেরিকায় অবস্থানের অনুমোদিত সময়সীমা পেরিয়ে থাকলে ভিসা বাতিল, বহিষ্কার এবং ভবিষ্যতে মার্কিন ভিসা পাওয়ার অযোগ্য হওয়ার মতো গুরুতর পরিণতি হতে পারে।

এক্স-এ (পূর্বতন টুইটার) দেওয়া পোস্টে দূতাবাস জানায়, “আপনার মার্কিন ভিসার শর্ত এবং অনুমোদিত থাকার সময়সীমা মেনে চলুন। I-94 ‘Admit Until Date’-এর পরে যুক্তরাষ্ট্রে থেকে গেলে ভিসা বাতিল, ডিপোর্টেশন এবং ভবিষ্যতে আর ভিসা না পাওয়ার মতো কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে পারেন।”

   

এই সতর্কতা এমন সময় এসেছে যখন মার্কিন রাজনীতিতে ভারতীয় নাগরিকদের বিরুদ্ধে হঠাৎ করেই কড়া অবস্থান নিতে দেখা যাচ্ছে কিছু প্রভাবশালী নেতাকে।

গ্রিনের মন্তব্য: ভারতীয় H1-B ভিসার বিরোধিতা:
এই প্রেক্ষাপটে হঠাৎ বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের কংগ্রেসওম্যান মার্জোরি টেলর গ্রিন। তিনি তাঁর এক্স অ্যাকাউন্টে একটি পোস্টে বলেন, “আমেরিকান চাকরি দখল করে নিচ্ছে ভারতীয় H1-B ভিসাধারীরা। এটি বন্ধ করতে হবে। একইসঙ্গে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধেও আর অর্থ ও অস্ত্র পাঠানো বন্ধ করা উচিত।”

গ্রিনের এই মন্তব্য মার্কিন রাজনীতিতে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। তাঁর দাবি, ভারতীয় প্রযুক্তি কর্মীরা H1-B ভিসার মাধ্যমে আমেরিকায় এসে স্থানীয়দের চাকরি কেড়ে নিচ্ছেন, যা দেশের অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর।

ট্রাম্পের হুঁশিয়ারি: ভারতের উপর শুল্ক বৃদ্ধির ইঙ্গিত:
এই ঘটনার পাশাপাশি, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক মন্তব্য ঘিরেও বিতর্ক তুঙ্গে। তিনি তাঁর সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ একটি পোস্টে লিখেছেন, “ভারত বিপুল পরিমাণে রাশিয়ান তেল কিনছে এবং তা আবার খোলা বাজারে বিক্রি করে বিপুল মুনাফা অর্জন করছে। ইউক্রেনের মানুষ মারা যাচ্ছে, আর তারা লাভ করছে। এর জন্য আমি ভারতের ওপর শুল্ক উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করব।”

এই মন্তব্যে স্পষ্ট হয়েছে, ভারত-রাশিয়া জ্বালানি বাণিজ্য নিয়ে আমেরিকা অত্যন্ত অসন্তুষ্ট। বিশেষ করে ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালীন রাশিয়ার সঙ্গে ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া নিয়ে ভারতের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে মার্কিন প্রশাসন।

Advertisements

ভারতের কড়া প্রতিক্রিয়া: ‘সার্বভৌম সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ চলবে না’:
ট্রাম্প ও গ্রিনের মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রক (MEA) কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। এক বিবৃতিতে মন্ত্রক জানায়, “ভারতের শক্তিনীতির ভিত্তি জাতীয় স্বার্থে প্রতিষ্ঠিত। রাশিয়া থেকে আমদানি করা তেল আমাদের প্রয়োজনীয়তা ও মূল্যনির্ধারণের পূর্বাভাসে সহায়ক। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সমালোচনা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ও অযৌক্তিপূর্ণ। আমরা আমাদের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করব।”

পররাষ্ট্র মন্ত্রক আরও জানায়, “বিশ্বব্যাপী জ্বালানির দাম ও সরবরাহে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে ভারত আন্তর্জাতিক বাজারের দায়িত্ববান অংশীদার হিসেবে কাজ করছে।”

রাজনৈতিক বিশ্লেষণ: অভিবাসন ও বাণিজ্য নিয়ে চাপে ভারত:
বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০২৪ সালের মার্কিন নির্বাচনের পর থেকেই অভিবাসন ও বাণিজ্য নীতি নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের দৃষ্টিভঙ্গি ক্রমেই কঠোর হয়ে উঠছে। বিশেষ করে ভারতীয় প্রযুক্তি কর্মীদের উপস্থিতি, রাশিয়া থেকে তেল আমদানি এবং ভারত-মার্কিন বাণিজ্যের ভারসাম্য নিয়ে ওয়াশিংটনে চাপ বাড়ছে।

গ্রিন ও ট্রাম্পের মন্তব্য দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কে প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন কূটনীতিক মহল। পাশাপাশি, মার্কিন দূতাবাসের সতর্কতা শুধুমাত্র অভিবাসন আইন মেনে চলার অনুরোধ নয়, বরং এটি ভারতের অভিবাসী সম্প্রদায়কে চাপের মুখে ফেলার একটি কৌশল বলেও মনে করছেন কেউ কেউ।

বর্তমানে ভারত-মার্কিন সম্পর্ক এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। অভিবাসন, বাণিজ্য, জ্বালানি ও ভূরাজনীতি—প্রতিটি ক্ষেত্রেই নতুন করে সংলাপ ও কৌশল প্রয়োজন। ভারত নিজের অবস্থান থেকে সরে আসবে না বলেই ইঙ্গিত দিচ্ছে। তবে মার্কিন হুঁশিয়ারি, ট্রাম্পের শুল্ক বাড়ানোর ঘোষণা এবং H1-B ভিসা বিতর্ক—এই তিনটি বিষয়ে কীভাবে ভারসাম্য বজায় রাখা যায়, এখন সেটাই বড় চ্যালেঞ্জ নয়াদিল্লির কাছে।