ভারতের ডিজিটাল লেনদেনের মেরুদণ্ড হিসেবে পরিচিত ইউনিফায়েড পেমেন্টস ইন্টারফেস (UPI) আবারও মুখ থুবড়ে পড়ল সোমবার সকালে। গুগল পে, ফোন পে, পেটিএম-এর মতো জনপ্রিয় ইউপিআই-ভিত্তিক অ্যাপগুলি ব্যবহার করে কোটি কোটি গ্রাহক লেনদেন করতে গিয়ে সমস্যার মুখে পড়েন। দিল্লি, মুম্বই, বেঙ্গালুরু, হায়দরাবাদ এবং কলকাতার মতো প্রধান শহরগুলি থেকে ব্যাপকভাবে অভিযোগ আসতে শুরু করে সকাল থেকেই। এটা এই মাসে চতুর্থবার, যখন ইউপিআই-এর এই ধরনের বিভ্রাট দেখা দিল — যা ক্রমেই দেশের ‘ক্যাশলেস ইকোনমি’-র উপর প্রশ্নচিহ্ন ফেলছে।
বিভ্রাটের চিহ্ন স্পষ্টভাবে গোটা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে
ডাউনডিটেক্টর (DownDetector)-এর রিয়েল টাইম রিপোর্ট অনুযায়ী, সোমবার সকালে বিপুল সংখ্যক মানুষ ইউপিআই লেনদেনে ব্যর্থ হন। লেনদেনের সময় বারবার “transaction failed” বা “server timeout” মেসেজ দেখা যায়। এমনকি QR কোড স্ক্যান করতে গিয়েও সমস্যায় পড়েন ব্যবহারকারীরা।
ওয়েবসাইটটির লাইভ আউটেজ ম্যাপে দেশজুড়ে অসংখ্য রিপোর্ট দেখা যায়, যা স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে সমস্যাটি স্থানীয় নয়, বরং জাতীয় স্তরে পৌঁছেছে। সকাল থেকে ‘অ্যলার্ট লেভেল’ কমলা রঙে দাঁড়িয়ে থাকলেও, দিনের বেলায় আরও রিপোর্ট আসার সঙ্গে সঙ্গে তা লাল স্তরে পৌঁছয় — যা চরম আউটেজের ইঙ্গিত দেয়।
পরপর বিভ্রাটে ক্রমবর্ধমান ক্ষোভ
এই ঘটনা মাত্র দু’দিন আগেই ঘটেছিল — গত শনিবারেও ইউপিআই সিস্টেমে ব্যাপক সমস্যা দেখা যায়। তখন এনপিসিআই (NPCI) জানিয়েছিল, “আংশিক কারিগরি সমস্যার কারণে কিছু ইউপিআই লেনদেন ব্যর্থ হচ্ছে।” পরে জানানো হয়েছিল যে বিকেলের পর থেকে পরিষেবা স্বাভাবিক হয়েছে। কিন্তু সোমবার আবার সেই একই সমস্যা হওয়ায় অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, সত্যিই কি এই সিস্টেম দেশের ডিজিটাল ইকোনমির ভিত্তি হিসেবে উপযুক্ত?
এনপিসিআই-এর নীরবতা ও আগের প্রতিক্রিয়া
সোমবারের বিভ্রাট নিয়ে এখনো পর্যন্ত এনপিসিআই কোনো বিবৃতি দেয়নি। তবে শনিবারের ঘটনার সময় তাদের তরফে বলা হয়েছিল, “আমরা সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করছি এবং সমস্ত ইউজারদের ধৈর্য ও সহানুভূতির জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি।”
কিন্তু বারবার এই ধরনের বিভ্রাট ক্রমেই ইউপিআই-এর বিশ্বাসযোগ্যতাকে প্রশ্নের মুখে ফেলছে। এমন পরিস্থিতিতে এনপিসিআই-এর তরফে পরিষ্কার এবং দ্রুত যোগাযোগ ও সমাধানমূলক পদক্ষেপের দাবি তুলেছেন প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ও সাধারণ ব্যবহারকারীরা।
ভোগান্তির মুখে ব্যবহারকারীরা
লেনদেন ব্যর্থ হওয়ায় হাজার হাজার মানুষ নিজেদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন সামাজিক মাধ্যমে। এক ব্যবহারকারী @LataBhavya8440 লিখেছেন: “আমি খাবার অর্ডার করেছিলাম এবং অনলাইন পেমেন্ট করে দিয়েছিলাম। পেমেন্ট পেন্ডিং দেখাচ্ছিল, পরে কনফার্ম হয়ে গেল। কিন্তু ডেলিভারি বয় এসে বলল পেমেন্ট দেখাচ্ছে না, ক্যাশে টাকা দিতে হবে!”
আরও অনেকেই কৌতুকের মাধ্যমে নিজেদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন: “UPI down bad” — @KNOX_077
“UPI down ke chakkar me ek din bartan dhone padenge kisi hotel me…..” — @RajeshCOP1308
“Digital rupee was not a solution in my case when UPI was down” — @Rohan_Aditya1
উঠছে পরিকাঠামো ও সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন
ভারতের ডিজিটাল অর্থনীতিতে ইউপিআই একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। দিনে কোটি কোটি লেনদেন এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। কিন্তু যদি মাসে চারবার এমন বিভ্রাট ঘটে, তবে সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে আস্থাহীনতা তৈরি হওয়া স্বাভাবিক।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইউপিআই-এর সার্ভার পরিকাঠামোকে আরও আধুনিক এবং স্কেলেবল করে তোলা ছাড়া উপায় নেই। দিনে দিনে ডিজিটাল লেনদেনের পরিমাণ যেভাবে বাড়ছে, তাতে এমন বারবার বিভ্রাট ভবিষ্যতের জন্য মারাত্মক সংকেত হতে পারে।
সমাধান কোথায়?
ইউপিআই নিঃসন্দেহে ভারতের ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশনের মডেল হিসেবে সারা বিশ্বের নজর কেড়েছে। কিন্তু সেই মডেলকে টিকিয়ে রাখতে গেলে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ, প্রযুক্তিগত হালনাগাদ এবং জরুরি সমাধানের জন্য দক্ষ টিমের উপস্থিতি অপরিহার্য।
সোমবারের বিভ্রাট আরও একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল — শুধুমাত্র ডিজিটাল প্রচার নয়, প্রয়োজন বাস্তবিক সক্ষমতা ও নিরবিচ্ছিন্ন পরিষেবার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা। না হলে সাধারণ মানুষকে বারবার বিভ্রাটের দায়ে ভুগতে হবে, আর ভারতীয় ডিজিটাল অর্থনীতির ভবিষ্যৎ পড়ে যাবে ঝুঁকির মুখে।