ভারতের ডিজিটাল পেমেন্ট ব্যবস্থার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম — ইউনিফাইড পেমেন্টস ইন্টারফেস (UPI) — এখন গুরুতর প্রতিযোগিতা সংকটে পড়েছে বলে সতর্ক করল ইন্ডাস্ট্রি বডি ইন্ডিয়া ফিনটেক ফাউন্ডেশন (IFF)। সংস্থাটি অর্থ মন্ত্রককে লেখা এক চিঠিতে জানিয়েছে, বর্তমানে মোট ইউপিআই লেনদেনের ৮০ শতাংশেরও বেশি মাত্র দুইটি থার্ড পার্টি অ্যাপ প্রোভাইডার (TPAP) দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে, যা সিস্টেমিক রিস্ক তৈরি করছে এবং দীর্ঘমেয়াদে উদ্ভাবন ও ন্যায্য প্রতিযোগিতাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।
IFF-এর মতে, ইউপিআই এখন একটি জাতীয় ডিজিটাল সম্পদ, যার স্থায়িত্ব, প্রতিযোগিতা ও অন্তর্ভুক্তি বজায় রাখা জরুরি। সংস্থাটি সরকারকে আহ্বান জানিয়েছে যেন তারা অবিলম্বে নীতি পদক্ষেপ গ্রহণ করে, যাতে বাজারে বৈচিত্র্য বজায় থাকে এবং ছোট ফিনটেক সংস্থাগুলিও সমান সুযোগ পায়।
IFF-এর প্রস্তাবিত পদক্ষেপসমূহ:
সংস্থাটি প্রস্তাব করেছে, কোনো একক থার্ড পার্টি অ্যাপ প্রোভাইডারকে (TPAP) সমর্থনকারী ব্যাংকের ক্ষেত্রে ইউপিআই ইনসেনটিভ পেমেন্টে ১০ শতাংশের বেশি বরাদ্দ না রাখা হয়। এর ফলে ব্যাংকগুলোকে একাধিক অ্যাপের সঙ্গে যুক্ত হতে উৎসাহিত করা যাবে এবং বাজারে অতিরিক্ত নির্ভরতা কমবে। এছাড়াও, ইউপিআই ও রুপে ইনসেনটিভ স্কিমের পুনর্গঠন চেয়েছে IFF, যাতে নতুন ও উদীয়মান ফিনটেক কোম্পানিগুলিকে বেশি সহায়তা দেওয়া যায়।
IFF-এর মতে, ইউপিআই ব্যবস্থার মূল নীতিই হল উন্মুক্ততা, ইন্টারঅপারেবিলিটি ও যৌথ উদ্ভাবন। বাজারে সীমিত সংখ্যক সংস্থার আধিপত্য সেই নীতির পরিপন্থী। বর্তমানে পেটিএম, গুগল পে, অ্যামাজন পে-র মতো বড় সংস্থাগুলি ইউপিআই লেনদেনে প্রাধান্য বজায় রাখলেও, ছোট ও নতুন প্লেয়ারদের টিকে থাকার সুযোগ সীমিত হচ্ছে।
নীতিনির্ধারকদের ওপর চাপ বাড়ছে: UPI Competition Crisis India
উল্লেখযোগ্যভাবে, ন্যাশনাল পেমেন্টস কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া (NPCI) ২০২০ সালে ইউপিআই অ্যাপগুলির জন্য ৩০ শতাংশ বাজার শেয়ার সীমা ঘোষণা করেছিল, কিন্তু তার বাস্তবায়ন পিছিয়ে ২০২৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে। এর ফলে, বাজারে এই দুই অ্যাপের দখল আরও গভীর হয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
IFF-এর হস্তক্ষেপ এই প্রেক্ষিতে নতুন চাপ তৈরি করেছে নীতিনির্ধারকদের ওপর, যাতে বাজারে ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ রোধ করা যায় এবং ইউপিআই ইকোসিস্টেমে আরও প্রতিযোগিতা আনা যায়।
শেষ কথা:
IFF-এর প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে ছোট ফিনটেক সংস্থাগুলি নতুন উদ্যমে এগিয়ে আসতে পারবে, যা ভারতীয় ডিজিটাল পেমেন্ট ব্যবস্থায় সুস্থ প্রতিযোগিতা ও উদ্ভাবনের পথ প্রশস্ত করবে। ইউপিআই যেমন আজ বিশ্বব্যাপী এক নজির স্থাপন করেছে, তেমনই তার ভবিষ্যৎ বৃদ্ধি নির্ভর করছে বাজারের ভারসাম্য ও অন্তর্ভুক্তির ওপর।



