ইউপিআই, আধার ও ডিজিলকার: ভারতের ডিজিটাল যাত্রার তিন স্তম্ভ, বললেন প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব সংবাদদাতা, মুম্বাই, ৮ অক্টোবর, ২০২৫: ভারতের ডিজিটাল বিপ্লব এখন শুধু কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ নেই, তা নেমে এসেছে সাধারণ মানুষের হাতে। মোবাইল ফোনের একটি ক্লিকে আজ…

At Global Fintech Fest 2025, PM Modi highlighted UPI, Aadhaar and DigiLocker as the three pillars of India’s digital journey driving financial inclusion.

নিজস্ব সংবাদদাতা, মুম্বাই, ৮ অক্টোবর, ২০২৫: ভারতের ডিজিটাল বিপ্লব এখন শুধু কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ নেই, তা নেমে এসেছে সাধারণ মানুষের হাতে। মোবাইল ফোনের একটি ক্লিকে আজ গ্রামের দিনমজুর থেকে শহরের ব্যবসায়ী—সবাই ব্যাংকের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন, পাচ্ছেন সহজ ঋণ, বিল পরিশোধ করছেন অনলাইনে। বৃহস্পতিবার মুম্বাইয়ের জিও ওয়ার্ল্ড সেন্টারে অনুষ্ঠিত গ্লোবাল ফিনটেক ফেস্টে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সেই বাস্তব চিত্র তুলে ধরে বললেন—“ইউপিআই, আধার ও ডিজিলকার ভারতের ডিজিটাল যাত্রার তিন স্তম্ভ।”

Advertisements

ডিজিটাল অর্থনীতির মেরুদণ্ড

প্রধানমন্ত্রী জানান, আজকের ভারতের ডিজিটাল স্ট্যাক এক নতুন ইকোসিস্টেম তৈরি করেছে। ইউপিআই-এর মাধ্যমে যেখানে প্রতিদিন কোটি কোটি মানুষ লেনদেন করছেন, আধার দিয়েছে ডিজিটাল পরিচয় ও ভরসা, আর ডিজিলকার নাগরিকদের নথি নিরাপদে সংরক্ষণের সুযোগ করে দিয়েছে। মোদীর ভাষায়, “এগুলি শুধু প্রযুক্তি নয়, এগুলি সমতার হাতিয়ার।”

বিজ্ঞাপন

এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ভারত বিল পেমেন্ট সিস্টেম, ভারত কিউআর, ডিজি যাত্রা এবং গভর্নমেন্ট ই- মার্কেটপ্লেস (GEM)। এগুলি মিলেই ভারতের ডিজিটাল অর্থনীতিকে বিশ্বদরবারে এক ভিন্ন মাত্রা দিয়েছে।

ছোট ব্যবসায়ীদের হাতিয়ার ONDC ও OCEN

মোদী বিশেষভাবে উল্লেখ করেন ওপেন নেটওয়ার্ক ফর ডিজিটাল কমার্স (ONDC) এবং ওপেন ক্রেডিট এনেবলমেন্ট নেটওয়ার্ক (OCEN)-এর ভূমিকার কথা। তাঁর মতে, এই দুটি উদ্যোগ গ্রামীণ চা দোকানি থেকে শুরু করে ছোট এমএসএমই উদ্যোক্তাদের নতুন বাজারে পৌঁছতে সাহায্য করছে। ছোট ব্যবসায়ীরা বড় ই-কমার্স কোম্পানির একচেটিয়া আধিপত্যের বাইরে গিয়ে সমান সুযোগ পাচ্ছেন। একইভাবে, ছোট উদ্যোক্তাদের ঋণ পাওয়ার প্রক্রিয়াও সহজ করছে OCEN।

প্রযুক্তি: সমতার নতুন সংজ্ঞা

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আগে ব্যাংকিং ছিল কেবল সুবিধাভোগীদের জন্য। আজ ডিজিটাল প্রযুক্তি এটিকে সাধারণ মানুষের হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে।”
জনধন অ্যাকাউন্ট, আধার ও মোবাইলের সমন্বয়ে তৈরি ‘জ্যাম ট্রিনিটি’ গ্রামীণ অর্থনীতিতে বিপ্লব ঘটিয়েছে। কৃষকরা সরাসরি ভর্তুকি পাচ্ছেন, শ্রমিকরা ঘরে বসেই পেমেন্ট পাচ্ছেন।

ডিজিটাল লেনদেনে বিশ্বে শীর্ষে ভারত

বর্তমানে প্রতি মাসে প্রায় ২০ বিলিয়ন ডিজিটাল লেনদেন হচ্ছে ভারতে, যার পরিমাণ ২৫ ট্রিলিয়ন রুপি বা ২৫ লাখ কোটি টাকার বেশি। বিশ্বের মোট রিয়েল-টাইম ডিজিটাল লেনদেনের ৫০ শতাংশই ভারতের ইউপিআই-এর মাধ্যমে সম্পন্ন হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রীর দাবি, এটাই প্রমাণ করে যে ভারত বৈশ্বিক ফিনটেক ইকোসিস্টেমে নেতৃত্ব দিচ্ছে।

আন্তর্জাতিক সহযোগিতা

এবারের ফেস্টে যুক্তরাজ্য অংশীদার দেশ হিসেবে যুক্ত হয়েছে। মোদী বলেন, দুই বৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশের এই অংশীদারিত্ব শুধু আর্থিক সহযোগিতাই নয়, বৈশ্বিক ফিনটেক খাতেও শক্তিশালী দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।

গণতন্ত্র ও প্রযুক্তির মেলবন্ধন

প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তৃতায় বলেন, “ভারত গণতন্ত্রের জননী। এখানে গণতন্ত্র মানে শুধু ভোট নয়, প্রযুক্তির মাধ্যমে সমতা ও অন্তর্ভুক্তি।” গত এক দশকে ভারত প্রযুক্তিকে গণতান্ত্রিক করেছে—এটাই তাঁর মতে দেশের সবচেয়ে বড় সাফল্য।

গ্লোবাল ফিনটেক ফেস্টে মোদীর বক্তব্যে স্পষ্ট হয়ে গেল—ভারতের ডিজিটাল যাত্রা আর শুধু নগরকেন্দ্রিক নয়, তা ছড়িয়ে পড়েছে প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত। ইউপিআই, আধার ও ডিজিলকার একসঙ্গে মিলেই ভারতকে তৈরি করছে বিশ্বের অন্যতম প্রযুক্তিগতভাবে অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজে। আর এই পথেই ভারত এগোচ্ছে ‘বিকশিত ভারত ২০৪৭’-এর দিকে।