একসময়ের জনপ্রিয় মাইক্রোব্লগিং প্ল্যাটফর্ম টুইটার (Twitter) আজ ‘এক্স’ নামে পরিচিত। কিন্তু যারা টুইটার ব্যবহার করেছেন, তারা নিশ্চয়ই মনে করতে পারবেন সেই বিখ্যাত নীল পাখির লোগোটি, যা ছিল টুইটারের পরিচয়। সম্প্রতি সেই আইকনিক নীল পাখির লোগোটি নিলাামে বিক্রি হয়েছে, এবং এর দাম শুনলে আপনার চোখ কপালে উঠতে বাধ্য। আরআর অকশন নামে একটি সংস্থা এই লোগোটি ৩৪,৩৭৫ ডলারে বিক্রি করেছে, যা ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৩৪ লক্ষ টাকার কাছাকাছি।
নীল পাখির গল্প
টুইটার যখন বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়তার শিখরে ছিল, তখন এই নীল পাখির লোগোটি ছিল তার প্রতীক। ২০১২ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত এই লোগোটি টুইটারের সান ফ্রান্সিসকোর প্রধান কার্যালয়ের বাইরে শোভা পেত। কিন্তু ২০২২ সালে টেসলা ও স্পেসএক্সের মালিক এলন মাস্ক যখন টুইটার কিনে নেন, তখন তিনি শুধু প্ল্যাটফর্মের নামই বদলে ‘এক্স’ করেননি, এই বিখ্যাত লোগোটিও বদলে ফেলেন। এবার সেই পুরোনো লোগোটি নিলাামে উঠেছে এবং ২৫৪ কেজি ওজনের এই ১২ ফুট বাই ৯ ফুটের সাইনটি ৩৪,৩৭৫ ডলারে বিক্রি হয়েছে। আরআর অকশন, যারা বিরল সংগ্রহযোগ্য জিনিস বিক্রির জন্য পরিচিত, এই বিক্রির বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। তবে কে এই লোগোটি কিনেছেন, তার নাম এখনও প্রকাশ করা হয়নি।
নিলাামে আরও কী বিক্রি হল?
এই নিলাামে শুধু টুইটারের নীল পাখিই বিক্রি হয়নি, অন্যান্য প্রযুক্তি সম্পর্কিত বিরল জিনিসও নতুন মালিকের হাতে গেছে। উল্লেখযোগ্যভাবে, একটি বিরল অ্যাপল-১ কম্পিউটার ৩৭৫,০০০ ডলারে (প্রায় ৩ কোটি ১৫ লক্ষ টাকা) বিক্রি হয়েছে। এছাড়া, ১৯৭৬ সালে স্টিভ জবসের সই করা একটি অ্যাপল চেক ১১২,০৫৪ ডলারে এবং একটি সিল করা প্রথম প্রজন্মের আইফোন (৪ জিবি) ৮৭,৫১৪ ডলারে বিক্রি হয়েছে। এই দামগুলো দেখে বোঝা যায়, প্রযুক্তির ইতিহাসের সঙ্গে জড়িত জিনিসগুলোর প্রতি সংগ্রাহকদের কতটা আগ্রহ রয়েছে।
টুইটারের স্মৃতি বিক্রি
এটি প্রথমবার নয় যে টুইটারের স্মৃতিচিহ্ন নিলাামে বিক্রি হয়েছে। এর আগে এলন মাস্ক টুইটারের সান ফ্রান্সিসকোর কার্যালয় থেকে বিভিন্ন জিনিস বিক্রি করেছিলেন। ২০২৩ সালের আগস্টে ‘টুইটার রিব্র্যান্ডিং অকশন’-এ মোট ৫৮৪টি জিনিস বিক্রি হয়। এর মধ্যে ছিল কাঠের তৈরি টুইটার পাখির টেবিল, বড় বড় পাখির খাঁচা, পেইন্টিং এবং ক্যালিফোর্নিয়ার টুইটার অফিসের পুরোনো সাইনবোর্ড। এই জিনিসগুলো টুইটারের সেই সময়ের স্মৃতি বহন করে, যখন এটি বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ছিল।
এলন মাস্ক কবে টুইটার কিনলেন?
এলন মাস্ক ২০২২ সালের ১৪ এপ্রিল টুইটার কেনার প্রক্রিয়া শুরু করেন এবং ২৭ অক্টোবর সেই চুক্তি সম্পন্ন হয়। তিনি প্রায় ৪৪ বিলিয়ন ডলারে (ভারতীয় মুদ্রায় ৩৭০০ কোটি টাকার বেশি) এই কোম্পানি কিনে নেন। টুইটার হাতে আসার পর তিনি এটির নাম বদলে ‘এক্স’ করেন এবং নীল পাখির লোগোর জায়গায় নতুন একটি লোগো চালু করেন। এছাড়া, তিনি ‘ব্লু’ নামে একটি সাবস্ক্রিপশন পরিষেবা চালু করেন, যা ব্যবহারকারীদের জন্য নতুন সুবিধা নিয়ে এসেছে। মাস্কের হাতে আসার পর থেকে ‘এক্স’ প্ল্যাটফর্মে বেশ কিছু পরিবর্তন এসেছে, যা এটির পুরোনো পরিচয়কে অনেকটাই বদলে দিয়েছে।
বাঙালি প্রযুক্তিপ্রেমীদের প্রতিক্রিয়া
কলকাতা ও পশ্চিমবঙ্গের প্রযুক্তিপ্রেমীদের মধ্যে এই খবর নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। অনেকে বলছেন, “টুইটারের নীল পাখি ছিল আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ার একটা অংশ। এটা বিক্রি হয়ে যাওয়ায় একটা নস্টালজিয়া কাজ করছে।” কেউ কেউ আবার এই দাম নিয়ে অবাক হয়েছেন। একজন ব্যবহারকারী বলেন, “৩৪ লক্ষ টাকায় একটা লোগো? এটা কি সত্যিই এত দামি ছিল, নাকি এটা শুধু সংগ্রাহকদের উন্মাদনা?” বাঙালি সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীদের মধ্যে টুইটারের পুরোনো দিনের স্মৃতি এখনও তাজা, এবং এই নিলাাম তাদের মনে সেই স্মৃতি ফিরিয়ে এনেছে।
কেন এত দাম?
এই নীল পাখির লোগোর এত দামের পিছনে রয়েছে এটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব। টুইটার যখন বিশ্বব্যাপী যোগাযোগের একটি বড় মাধ্যম ছিল, তখন এই লোগোটি ছিল তার পরিচয়ের প্রতীক। প্রযুক্তির ইতিহাসে এটি নাইকি বা অ্যাপলের লোগোর মতোই একটি স্বীকৃত চিহ্ন হয়ে উঠেছিল। এলন মাস্কের রিব্র্যান্ডিং-এর পর এটি আর ব্যবহার না হলেও, এর সংগ্রহযোগ্য মূল্য কমেনি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের জিনিস সংগ্রাহকদের কাছে শুধু একটি বস্তু নয়, বরং একটি যুগের স্মৃতি।
এই নিলাাম টুইটারের পুরোনো দিনের একটি অধ্যায়কে আবার সামনে এনেছে। এলন মাস্কের হাতে ‘এক্স’ এখন নতুন দিকে এগোচ্ছে, কিন্তু পুরোনো টুইটারের স্মৃতি এখনও অনেকের মনে রয়ে গেছে। নীল পাখির এই বিক্রি প্রমাণ করে যে, প্রযুক্তির ইতিহাসের সঙ্গে জড়িত জিনিসগুলোর প্রতি মানুষের আগ্রহ এখনও অটুট। ভবিষ্যতে আরও কী কী টুইটার স্মৃতি নিলাামে উঠবে, তা সময়ই বলবে।
টুইটারের নীল পাখির লোগোর এই নিলাাম শুধু একটি বিক্রয় নয়, বরং একটি যুগের সমাপ্তির প্রতীক। ৩৪,৩৭৫ ডলারে বিক্রি হওয়া এই লোগোটি প্রযুক্তির ইতিহাসে একটি বিশেষ স্থান দখল করে আছে। বাঙালি প্রযুক্তিপ্রেমীদের জন্যও এটি একটি নস্টালজিক মুহূর্ত, যা তাদের সেই দিনগুলোর কথা মনে করিয়ে দেয়, যখন টুইটার ছিল তাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি অংশ।