যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের বিরুদ্ধে রাশিয়ান তেল কেনার কারণে সমন্বিত শুল্ক আরোপের আহ্বান জানিয়েছেন, কিন্তু এই দাবি ইউরোপীয় ইউনিয়নকে (EU) প্রভাবিত করতে পারবে না বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। ট্রাম্প ভারতের বিরুদ্ধে অসম্ভব কটাক্ষ কমানোর আগে, ইউরোপীয় ব্লক এবং জি৭ দেশগুলোকে ভারত এবং চিনের উপর ১০০% শুল্ক আরোপ করার দাবি করেছেন—রাশিয়ান তেল কেনার জন্য। তিনি বলেছেন, যদি ইউরোপ এই দুই দেশের উপর শুল্ক আরোপ করে, তাহলে ওয়াশিংটনও তাদের আমদানির উপর একই শুল্ক আরোপ করবে। এই দাবি রাশিয়ার ইউক্রেন যুদ্ধের প্রসঙ্গে এসেছে, যেখানে ভারত এবং চিনের রাশিয়ান তেল ক্রয়কে মস্কোর যুদ্ধ মেশিনকে অর্থায়িত করার অভিযোগ করা হচ্ছে।
Also Read | US tariff hike: মার্কিন শুল্কবৃদ্ধিতে ভারতের আর্থিক পরিস্থিতি চাপে, শেয়ারবাজারে বড় ধাক্কা!
রয়টার্সের রিপোর্ট অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগ গত শুক্রবার জি৭ এবং ইইউ-এর মিত্রদের চিন এবং ভারতের পণ্যের উপর “অর্থপূর্ণ শুল্ক” আরোপ করার আহ্বান জানিয়েছে, যাতে তারা রাশিয়ান তেল কেনা বন্ধ করে। এই আহ্বানের সাথে জরুরি জি৭ ফাইন্যান্স মিনিস্টার্স মিটিং ডেকেছেন, যাতে মস্কোর উপর চাপ বাড়ানোর উপায় নিয়ে আলোচনা হবে। ট্রাম্প ইতিমধ্যে ভারতের আমদানির উপর অতিরিক্ত ২৫% শুল্ক আরোপ করেছেন, যা মোট শাস্তিমূলক শুল্ককে ৫০% করে তুলেছে এবং দুই গণতান্ত্রিক দেশের মধ্যে বাণিজ্য আলোচনাকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। এই শুল্ক নয়াদিল্লিকে ডিসকাউন্টেড রাশিয়ান ক্রুড অয়েল কেনা বন্ধ করার জন্য চাপ দেওয়ার উদ্দেশ্যে আরোপ করা হয়েছে।
টাইমস অফ ইন্ডিয়ার প্রতিবেদন অনুসারে, ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ককে প্রভাবিত করেছে। ট্রাম্প ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন যে তার ধৈর্য রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে ফুরিয়ে আসছে, কিন্তু নতুন নিষেধাজ্ঞার হুমকি দেননি। তিনি বলেছেন, ব্যাঙ্ক এবং তেল খাতে নিষেধাজ্ঞা বাড়ানো যেতে পারে, সাথে শুল্কও। কিন্তু ইউরোপীয় দেশগুলোর অংশগ্রহণ দরকার। ট্রেজারি স্পোকসপার্সন বলেছেন, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পিস অ্যান্ড প্রসপারিটি অ্যাডমিনিস্ট্রেশন প্রস্তুত, এবং আমাদের জি৭ অংশীদাররা আমাদের সাথে এগিয়ে আসতে হবে।” চিনের ক্ষেত্রে ট্রাম্প অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করেননি, কারণ বেইজিং-এর সাথে সূক্ষ্ম বাণিজ্য শান্তি রক্ষা করছেন, যা চিনের প্রতিশোধী শুল্ক ১০০% থেকে কমিয়েছে।
Also Read | বৃষ্টিকে উপেক্ষা করেই মণিপুরে মোদী, দেখা করলেন হিংসা কবলিত পরিবারগুলির সঙ্গে
হিন্দুস্তান টাইমসের রিপোর্টে বলা হয়েছে, চিন এবং ভারতের রাশিয়ান তেল ক্রয় পুতিনের যুদ্ধ মেশিনকে অর্থায়িত করছে এবং ইউক্রেনীয়দের হত্যাকাণ্ড দীর্ঘায়িত করছে। জি৭ ফাইন্যান্স মিনিস্টার্সের ভিডিও কলে এই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কানাডার ফাইন্যান্স মিনিস্টার ফ্রাঁসোয়া-ফিলিপ শ্যামপেনের চেয়ারম্যানশিপে এই মিটিং হয়েছে, যাতে রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরও নিষেধাজ্ঞা এবং যুদ্ধকে “সক্ষম” করা দেশগুলোর উপর শুল্ক নিয়ে কথা বলা হয়েছে। ট্রাম্পের এই দাবি ফিন্যান্সিয়াল টাইমসে প্রথম রিপোর্ট হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে যে ইইউ চিন এবং ভারতের উপর ১০০% পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করতে পারে, যাতে পুতিনকে ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করতে বাধ্য করা যায়।
জাপান টাইমসের মতে, যুক্তরাষ্ট্র জি৭-কে অবরুদ্ধ রাশিয়ান সম্পদ দখলের আইনি পথ তৈরি করারও আহ্বান জানিয়েছে এবং এই সম্পদের নীতি ব্যবহার করে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা অর্থায়ন করার কথা বলেছে। ট্রাম্প বলেছেন, তার ধৈর্য পুতিনের সাথে দ্রুত ফুরিয়ে আসছে এবং অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা দিয়ে “খুব শক্ত” আঘাত হানবে। ইন্ডিয়া টুডের রিপোর্টে বলা হয়েছে, গত মাসে ট্রাম্প ভারতের আমদানির উপর ৫০% শুল্ক বাড়িয়েছেন—২৫% পারস্পরিক এবং ২৫% শাস্তিমূলক, রাশিয়ান তেল কেনার জন্য। এপ্রিলে চিনের উপর শুল্ক বাড়ানো হয়েছিল, কিন্তু মে মাসে মার্কেট প্রতিক্রিয়ার কারণে কিছু কমানো হয়েছে। গত সপ্তাহে ট্রাম্প ইইউ-কে ১০০% শুল্কের আহ্বান করেছেন।
Also Read | আদানি পাওয়ার ও বিহার সরকারের মধ্যে ২৫ বছরের বিদ্যুৎ সরবরাহ চুক্তি
বিশ্লেষকরা মনে করছেন যে ট্রাম্পের এই দাবি ইইউ-কে প্রভাবিত করতে পারবে না। ইইউ রাশিয়াকে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে আলাদা করার চেষ্টা করছে, শুল্কের পরিবর্তে। ট্রাম্পের অনুরোধ ইইউ-এর পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনতে পারে, কিন্তু ইউরোপীয় দেশগুলোর নিজস্ব অর্থনৈতিক স্বার্থ রয়েছে। ভারত এবং চিন রাশিয়ান তেলের বড় ক্রেতা, যা মস্কোর অর্থনীতি এবং যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার সাহায্য করছে। ভারত এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে এবং শুল্ককে “অযৌক্তিক এবং অযৌক্তিক” বলেছে। ওয়াশিংটনের রাষ্ট্রদূত-নির্দিষ্ট সার্জিও গোর সিনেটরদের বলেছেন যে ভারতের সুরক্ষাবাদী নীতি বাধা সৃষ্টি করেছে, কিন্তু অংশীদারিত্ব শক্তিশালী। তিনি বলেছেন, ট্রাম্প এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে “গভীর বন্ধুত্ব” রয়েছে, যা শুল্ক সত্ত্বেও “অবিশ্বাস্য”। একটি বাণিজ্য চুক্তি কাছাকাছি হতে পারে।
ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ তার পররাষ্ট্রনীতির অংশ, যেখানে মস্কোর এনার্জি ট্রেড মোকাবিলা করা একটি মূল উপাদান। তিনি বলেছেন, “আমি ইতিমধ্যে অনেক করেছি।” কিন্তু এটি ইউরোপের সমস্যা, আমাদের থেকে বেশি। ট্রাম্প দাবি করেছেন যে তার রাষ্ট্রপতিত্ব বিশ্বের একাধিক যুদ্ধ শেষ করেছে। ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট চিনের সাথে মাদ্রিদে আলোচনায় যাবেন, যাতে বাণিজ্য, টিকটকের ডিভেস্টমেন্ট এবং অ্যান্টি-মানি লন্ডারিং নিয়ে কথা হবে। ট্রাম্প চিনের উপর অতিরিক্ত শুল্ক এড়িয়েছেন, কারণ বেইজিং-এর সাথে ট্রেড ট্রুস রক্ষা করছেন।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের মতে, এই শুল্ক ভারত-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যকে প্রভাবিত করবে, কিন্তু ভারত রাশিয়ান তেল কেনা চালিয়ে যাবে কারণ এটি তার এনার্জি নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ইইউ-এর নিজস্ব নিষেধাজ্ঞা রয়েছে রাশিয়ান তেলের উপর, কিন্তু তৃতীয় দেশের ক্রয়ে তারা সরাসরি হস্তক্ষেপ করেনি। বিশ্লেষকরা বলছেন, ইইউ-এর অর্থনৈতিক স্বার্থ এবং ভারত-ইইউ বাণিজ্য সম্পর্ক ট্রাম্পের দাবিকে অস্বীকার করতে সাহায্য করবে। জি৭ মিটিংয়ে এই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হলেও, ইউরোপীয় দেশগুলো নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করবে। ট্রাম্পের এই কৌশল রাশিয়ার উপর চাপ বাড়াতে সাহায্য করতে পারে, কিন্তু ইইউ-এর সমর্থন ছাড়া এটি সীমিত থাকবে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখনও অফিসিয়াল প্রতিক্রিয়া দেয়নি, কিন্তু এটি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও জটিল করতে পারে।