সম্প্রতি প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতকে “ডেড ইকোনমি” বা মৃত অর্থনীতি বলে আখ্যা দিয়েছিলেন। তার কয়েকদিন পরেই, রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়ার (RBI) গভর্নর সঞ্জয় মালহোত্রা সাফ জানিয়ে দিলেন—ভারতের অর্থনীতি আজ বিশ্বের অন্যতম দ্রুতগামী অর্থনীতির মধ্যে পড়ছে এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ভারতের অবদান যুক্তরাষ্ট্রের থেকেও বেশি।
“ভারতীয় অর্থনীতি খুব ভালো করছে”
এক সাংবাদিক সম্মেলনে সঞ্জয় মালহোত্রা বলেন, “আমরা প্রায় ৬.৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছি, যেখানে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF) বলছে গোটা বিশ্বে গড় প্রবৃদ্ধি হবে মাত্র ৩ শতাংশ। এই হিসেবেই দেখা যাচ্ছে, বিশ্ব অর্থনীতিতে আমাদের অবদান প্রায় ১৮ শতাংশ, যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবদান ১১ শতাংশের কাছাকাছি।”
তিনি আরও বলেন, “ভারত অতীতে গড়পড়তা ৭.৮ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা আগামীতেও এর থেকে বেশি হারে উন্নতি করব। আমাদের অর্থনীতি ‘ডেড’ নয়, বরং অনেক বেশি সক্রিয়, সক্ষম ও বৈশ্বিক বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদানকারী।”
ট্রাম্পের ‘ডেড ইকোনমি’ মন্তব্য ও ভূ-রাজনৈতিক উত্তাপ
ট্রাম্প সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে ভারত ও রাশিয়ার সম্পর্ক নিয়ে কটাক্ষ করে বলেন, “আমার কিছু যায় আসে না ভারত রাশিয়ার সঙ্গে কী করছে। ওরা চাইলে নিজেদের ‘ডেড ইকোনমি’ একসঙ্গে নিয়ে যাক।” মূলত ভারতের সস্তা দামে রাশিয়া থেকে তেল কেনার প্রসঙ্গেই এই মন্তব্য করেছিলেন তিনি।
এই মন্তব্য আন্তর্জাতিক মহলে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে। অনেকেই মনে করছেন, যদি ট্রাম্প ফের ক্ষমতায় আসেন, তবে ভারতের উপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা, শুল্ক বা তেলের উপর অতিরিক্ত ট্যাক্স চাপতে পারে।
আরবিআই: ‘মূল্যস্ফীতির উপর কোনও প্রভাব নেই’
তবে এই প্রসঙ্গে আশ্বাস দিয়েছেন আরবিআই গভর্নর মালহোত্রা। তার কথায়, “আমরা মনে করছি না এর কোনও প্রভাব ভারতীয় মূল্যস্ফীতির উপর পড়বে। যদি কখনও রাশিয়ান তেল আমদানিতে বাধা আসে, তবুও আমাদের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে থাকবে।”
আরবিআই-এর ডেপুটি গভর্নর পুনম গুপ্তাও জানান, এই ধরনের ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার প্রথম ধাপে ভারতের ঘরোয়া বাজারে কোনও বিরূপ প্রভাব পড়বে না। “আমাদের তেল সরবরাহে বিকল্প উৎস রয়েছে এবং সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে,” বলেন তিনি।
জ্বালানির দাম বাড়লে শুল্ক কমার ইঙ্গিত
গভর্নর আরও বলেন, চলতি অর্থবর্ষে যদি আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়ে এবং তার প্রভাব সাধারণ মানুষের উপর পড়ে, তবে সরকার করছাড়ের মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনবে। এটি একটি বড় আশ্বাস, কারণ জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি সরাসরি খুচরো মূল্যে প্রভাব ফেলে।
ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের ভবিষ্যৎ
এই বিতর্কের কেন্দ্রে রয়েছে ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক। একদিকে ট্রাম্পের কড়া মন্তব্য, অন্যদিকে ভারতের রাশিয়া থেকে তেল কেনার কৌশল—এই দুইয়ের মধ্যে ভারসাম্য রাখা ভারতের পক্ষে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, ভারতীয় অর্থনীতি যথেষ্ট স্থিতিশীল ও পরিণত।
বিশ্ব অর্থনীতিতে ভারতের ভূমিকা বাড়ছে
বিশ্বব্যাপী যখন মন্দার আশঙ্কা, তখন ভারত বিশ্বে অন্যতম আস্থার কেন্দ্র হয়ে উঠছে। সঞ্জয় মালহোত্রা জানান, ভারতীয় অর্থনীতির কাঠামো মজবুত। বিনিয়োগ, পরিষেবা খাত ও উৎপাদন খাতে ইতিবাচক গতি রয়েছে। ফলে আগামী বছরে ৬.৫ শতাংশ বৃদ্ধি হবার পূর্বাভাস বাস্তবসম্মত।
একদিকে ট্রাম্পের মন্তব্য যতই বিতর্ক তৈরি করুক না কেন, ভারতের বাস্তব অর্থনৈতিক অবস্থান শক্তিশালী। মালহোত্রার এই মন্তব্য শুধু প্রতিক্রিয়া নয়, বরং আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতের অবস্থান সম্পর্কে একটি দৃঢ় বার্তা। বিশ্ব অর্থনীতিতে ভারত একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে এবং আগামীতেও তা অব্যাহত থাকবে—এই বার্তাই উঠে এল RBI-এর বক্তব্য থেকে।