ওয়াশিংটন: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ন্যাটো মিত্র দেশগুলিকে রাশিয়ার ওপর কঠোর চাপ প্রয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁর দাবি, চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ (Russia-Ukraine War) দ্রুত শেষ করতে হলে ইউরোপীয় দেশগুলোকে রুশ তেল আমদানি সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করতে হবে এবং একইসঙ্গে চিনের ওপর ৫০ থেকে ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করতে হবে।
শনিবার নিজের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যাল-এ এক দীর্ঘ পোস্টে ট্রাম্প এই প্রস্তাব দেন। তিনি লেখেন, “সকল ন্যাটো দেশ এবং বিশ্ববাসীকে জানাচ্ছি, আমেরিকা রাশিয়ার বিরুদ্ধে বড় ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে প্রস্তুত। তবে সেটি কার্যকর হবে কেবল তখনই, যখন ইউরোপীয় মিত্ররা রাশিয়ার তেল কেনা বন্ধ করবে এবং একযোগে পদক্ষেপ নেবে।”
ট্রাম্পের মতে, ন্যাটো জোটের যুদ্ধ জয়ের প্রতিশ্রুতি শতভাগ আন্তরিক নয়। “ন্যাটো দেশগুলোর মধ্যে কিছু দেশ এখনও রুশ তেল কিনছে, যা অত্যন্ত বিস্ময়কর ও উদ্বেগজনক,” মন্তব্য করেন তিনি।
চিনের ওপর শুল্ক আরোপের প্রস্তাব:
পোস্টে তিনি আরও লেখেন, ন্যাটো দেশগুলোকে সমন্বিতভাবে চিনের ওপর কঠোর শুল্ক আরোপ করতে হবে। তাঁর দাবি, “চিনের ওপর রাশিয়ার শক্ত নিয়ন্ত্রণ রয়েছে, এমনকি বলা যায় তারা রাশিয়াকে আঁকড়ে রেখেছে। তাই চিনের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক পদক্ষেপই মস্কোর ওপর সবচেয়ে বড় চাপ সৃষ্টি করতে পারে।”ট্রাম্পের প্রস্তাব অনুযায়ী, এই শুল্ক আরোপ যুদ্ধ শেষ না হওয়া পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে এবং শান্তি ফিরলে পুরোপুরি প্রত্যাহার করা হবে।
যুদ্ধ দ্রুত শেষ করার দাবি:
ট্রাম্প রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে “মারণাত্মক, তবে অযৌক্তিক” বলে আখ্যায়িত করেন। তিনি দাবি করেন, শুধু গত এক সপ্তাহেই প্রায় ৭,১১৮ মানুষ নিহত হয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, যদি ন্যাটো তাঁর প্রস্তাব মেনে নেয়, তবে যুদ্ধ খুব দ্রুত শেষ হবে। নচেৎ যুক্তরাষ্ট্রের সময়, শক্তি ও অর্থ নষ্ট হবে মাত্র।
তিনি আরও বলেন, “এই সংঘাত একেবারেই শুরু হতো না যদি আমি প্রথম থেকেই ক্ষমতায় থাকতাম। এটি বাইডেন ও জেলেনস্কির যুদ্ধ। আমি শুধু সাহায্য করতে চাই যাতে হাজার হাজার রুশ ও ইউক্রেনীয় প্রাণ বাঁচানো যায়।”
রাজনৈতিক বার্তা ও নির্বাচন ঘনিষ্ঠতা:
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের এই বার্তায় শুধু আন্তর্জাতিক কূটনীতির দিক নয়, বরং আসন্ন মার্কিন নির্বাচনের রাজনৈতিক বার্তাও স্পষ্ট। বাইডেন প্রশাসনের নীতিকে সরাসরি দায়ী করে তিনি নিজেকে বিকল্প সমাধানের পথপ্রদর্শক হিসেবে তুলে ধরছেন। এভাবে তিনি একদিকে আমেরিকান ভোটারদের কাছে তাঁর নেতৃত্বগুণের প্রচার করছেন, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক মহলকেও একটি “ট্রাম্প-মডেল” সমাধানের ইঙ্গিত দিচ্ছেন।
ন্যাটোর প্রতিক্রিয়া অনিশ্চিত:
তবে ট্রাম্পের এই প্রস্তাব ন্যাটো মিত্ররা কতটা গুরুত্বের সঙ্গে নেবে, তা এখনো পরিষ্কার নয়। ইউরোপীয় দেশগুলির অনেকাংশই রুশ তেলের ওপর নির্ভরশীল। আবার, চিনের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্কও গভীর। ফলে শুল্ক আরোপের মতো কঠোর পদক্ষেপ ইউরোপীয় অর্থনীতিতে বড় প্রভাব ফেলতে পারে।
অন্যদিকে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসনও চিন ও রাশিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে বটে, কিন্তু ট্রাম্পের প্রস্তাবিত মাত্রায় শুল্ক আরোপ এখনই বাস্তবসম্মত বলে মনে করছেন না কূটনীতিকরা।
ডোনাল্ড ট্রাম্প একাধিকবার দাবি করেছেন যে তাঁর নেতৃত্বে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হতো না। এবার তিনি সরাসরি ন্যাটোকে শর্ত দিয়ে জানালেন—যদি তারা তাঁর প্রস্তাবিত পথে হাঁটে, তবে তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে সঙ্গে নিয়ে এগোতে প্রস্তুত। তবে বাস্তবে তাঁর এই প্রস্তাব কার্যকর হবে কি না, তা অনেকাংশেই নির্ভর করছে ইউরোপীয় দেশগুলোর রাজনৈতিক ইচ্ছা, অর্থনৈতিক স্বার্থ ও চলমান যুদ্ধের জটিল কূটনৈতিক সমীকরণের ওপর।