এপ্রিল থেকে অটোমোবাইলে শুল্ক আরোপের ঘোষণা ট্রাম্পের

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুক্রবার ঘোষণা করেছেন যে, তার সরকার এপ্রিল মাসে নতুন শুল্ক আরোপ করবে যা মার্কিন স্বয়ংক্রিয় শিল্পকে প্রভাবিত করবে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আরও…

Trump-announces-imposition-of-tariff-on-automobiles-from-april

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুক্রবার ঘোষণা করেছেন যে, তার সরকার এপ্রিল মাসে নতুন শুল্ক আরোপ করবে যা মার্কিন স্বয়ংক্রিয় শিল্পকে প্রভাবিত করবে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আরও জানিয়েছেন, এই শুল্ক আরোপের মাধ্যমে তিনি কোম্পানিগুলিকে তাদের উৎপাদন স্থাপনাগুলি যুক্তরাষ্ট্রে সরিয়ে নিতে উৎসাহিত করতে চান। ট্রাম্প যখন এ ধরনের ঘোষণা দিচ্ছিলেন, তখন তিনি একটি শক্তির নীতি সম্পর্কিত নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করছিলেন, এবং তিনি বলেছিলেন, “আমরা এপ্রিল ২ তারিখের আশেপাশে এটি বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছি।”

এটি একটি নতুন পদক্ষেপ হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে, যা বিশ্ব বাণিজ্যের ক্ষেত্রে উত্তেজনা এবং শুল্ক লাঘবের জন্য ট্রাম্পের প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে আসছে। ব্লুমবার্গের রিপোর্ট অনুযায়ী, ট্রাম্প আশা করছেন যে এই শুল্কের মাধ্যমে অন্যান্য দেশগুলির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি কমানো যাবে।

   

এশিয়া, ইউরোপ এবং অন্যান্য অঞ্চলের বিভিন্ন দেশগুলির জন্য এই শুল্কের প্রভাব মারাত্মক হতে পারে, কারণ বিশ্বের বড় অটোমোবাইল ব্র্যান্ডগুলির বেশিরভাগই আমেরিকায় বিক্রি হওয়া গাড়ির কিছু অংশ বা পুরোপুরি আমদানিকৃত। ২০২২ সালের মধ্যে আমেরিকায় আমদানির পরিমাণ ছিল প্রায় ৫০ শতাংশ, যা স্বয়ংক্রিয় শিল্পের ওপর বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি করতে পারে। রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১৯ সালে ফোক্সওয়াগেনের মোট মার্কিন বিক্রির ৮০ শতাংশই আমদানিকৃত ছিল, এবং হুন্ডাই-কিয়া গ্রুপের প্রায় ৬৫ শতাংশ বিক্রি আমদানির মাধ্যমে আসত।

তবে, ট্রাম্প তাঁর ঘোষণায় এই শুল্কের নির্দিষ্ট পরিমাণ বা প্রভাব সম্পর্কে কোনও বিশদ তথ্য দেননি। বিশেষত, তিনি জানাননি যে এই শুল্কগুলো কিভাবে প্রভাবিত করবে মার্কিন-কানাডা-মেক্সিকো মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির অধীনে নির্মিত গাড়িগুলিকে। ট্রাম্পের প্রথম শাসনামলে এই চুক্তিটি পুনর্নবীকরণ করা হয়েছিল।

বিশ্ববিদ্যালয় ও শিল্প বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে, এই শুল্কের প্রভাব সরবরাহ শৃঙ্খলার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে এবং এর ফলে গাড়ির দাম বেড়ে যেতে পারে। যদিও ট্রাম্প ঘোষণার পরে শুল্কের নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পর্কে কোনও তথ্য দেওয়া হয়নি, তবে ব্যবসায়িক সংগঠনগুলো শুল্ক বৃদ্ধির প্রভাব নিয়ে চিন্তা প্রকাশ করেছে। ব্যবসায়িক গোষ্ঠীগুলির মতে, এই শুল্কের কারণে ভোক্তাদের জন্য গাড়ির দাম বেড়ে যাবে এবং কিছু ক্ষেত্রে উৎপাদন ব্যয়ও বৃদ্ধি পাবে।

এটি সেই সময়েই ঘোষণা করা হয়েছে যখন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাঁর প্রশাসনকে কয়েকটি বাণিজ্যিক অংশীদারের বিরুদ্ধে পাল্টা শুল্ক আরোপের জন্য পরিকল্পনা তৈরি করতে বলেছিলেন। ট্রাম্প বলছেন, এটি আমেরিকার বিরুদ্ধে অন্য দেশগুলির শুল্ক সিস্টেমের বিরুদ্ধে একটি প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা। শুল্কের এই পরিবর্তনগুলো এপ্রিল মাসেই কার্যকর হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

তবে, ট্রাম্পের শুল্ক পরিকল্পনা শুধুমাত্র অটোমোবাইল শিল্পে সীমাবদ্ধ নয়। এর পাশাপাশি, অন্যান্য শিল্প যেমন: ওষুধ, সেমিকন্ডাক্টর এবং শক্তির ক্ষেত্রেও শুল্ক আরোপ করার কথা বলা হয়েছে। এর ফলে আমেরিকান বাজারে নানা ধরনের পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পেতে পারে।

এই সপ্তাহের শুরুতে, ট্রাম্প জানান যে, তিনি স্টিল এবং অ্যালুমিনিয়াম আমদানিতে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করার পরিকল্পনা করছেন। এর ফলে বিশ্বব্যাপী শিল্প ও বাণিজ্য পরিবেশে বড় ধরনের প্রভাব পড়তে পারে। স্টিল ও অ্যালুমিনিয়াম শিল্পের মধ্যে এই শুল্ক আরোপের ফলে বিশ্ব বাণিজ্যের জন্য এক নতুন চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি হতে পারে, যার প্রভাব বিভিন্ন দেশেই পড়বে।

ট্রাম্পের শুল্ক ব্যবস্থা বিশ্বের বাণিজ্যিক সম্পর্ককে নতুন করে পর্যালোচনা করতে বাধ্য করবে। বিশেষ করে তার ঘোষণাগুলি যদি কার্যকর হয়, তবে মার্কিন বাজারে আমদানি নির্ভর শিল্পগুলোতে খরচ বৃদ্ধি এবং দাম বাড়ানোর পাশাপাশি বেশ কিছু দেশের শুল্ক কাঠামোর পুনর্বিবেচনা করতে হতে পারে। এর ফলে একটি নতুন আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে যা সকল দেশকেই প্রভাবিত করবে।