Top Summer Street Markets in Kolkata: কলকাতা ‘সিটি অফ জয়’ নামে পরিচিত! শুধুমাত্র তার সমৃদ্ধ সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং সুস্বাদু খাবারের জন্যই নয়, বরং তার প্রাণবন্ত বাজারগুলির জন্যও বিখ্যাত। গ্রীষ্মকালে কলকাতার রাস্তাঘাটে বাজেট-বান্ধব ফ্যাশনের জন্য কেনাকাটার অভিজ্ঞতা অতুলনীয়। নিউ মার্কেটের ঐতিহ্যবাহী আকর্ষণ থেকে গড়িয়াহাটের রাস্তার দোকান, কলকাতার বাজারগুলি সাশ্রয়ী মূল্যে ট্রেন্ডি পোশাক, গয়না এবং আনুষাঙ্গিক জিনিসপত্রের ভাণ্ডার। এই নিবন্ধে আমরা গ্রীষ্মকালে কলকাতার সেরা স্থানীয় বাজারগুলির কথা তুলে ধরব, যেখানে মিলেনিয়াল এবং বেতনভোগী ক্রেতারা বাজেটের মধ্যে ফ্যাশনেবল আইটেম কিনতে পারেন।
নিউ মার্কেট: ঐতিহ্য এবং বৈচিত্র্যের মেলবন্ধন
নিউ মার্কেট, যা স্যার স্টুয়ার্ট হগ মার্কেট নামেও পরিচিত, কলকাতার প্রাচীনতম এবং সবচেয়ে জনপ্রিয় বাজার। ১৮৭৪ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বাজারে ৪,০০০-এরও বেশি দোকান এবং ২৭টি প্রবেশপথ রয়েছে। এখানে আপনি ট্রেন্ডি ওয়েস্টার্ন পোশাক থেকে শুরু করে ঐতিহ্যবাহী বাঙালি শাড়ি, যেমন জামদানি, তাঁত এবং বালুচরী, সবই পাবেন। গ্রীষ্মের জন্য হালকা কটন শাড়ি, কুর্তি, টপস এবং জিন্স এখানে ৫০০ টাকা থেকে শুরু হয়। বাজারের বাইরের রাস্তার দোকানগুলিতে কৃত্রিম গয়না, ব্যাগ এবং জুতো ২০০-৮০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়। দরদাম করার দক্ষতা থাকলে এখানে দারুণ ডিল পাওয়া সম্ভব। নিউ মার্কেটে কেনাকাটার পাশাপাশি নাহৌমস বেকারির মতো বিখ্যাত খাবারের দোকানে মিষ্টি ও স্ন্যাকস উপভোগ করা যায়। সময়: সোমবার-রবিবার, সকাল ১০:৩০ থেকে রাত ৮:৩০।
গড়িয়াহাট মার্কেট: বাঙালি ফ্যাশনের হৃৎপিণ্ড
দক্ষিণ কলকাতার গড়িয়াহাট মার্কেট বাজেট ফ্যাশনের জন্য একটি আদর্শ গন্তব্য। এই ওপেন-এয়ার বাজারে শাড়ি, সালোয়ার স্যুট, কুর্তি এবং ফ্যাশন জুয়েলারির বিশাল সংগ্রহ রয়েছে। গ্রীষ্মের জন্য কটন ও লিনেন শাড়ি এবং হালকা কুর্তি এখানে ৩০০-১,৫০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়। রাস্তার ধারে ছোট ছোট দোকানে অক্সিডাইজড গয়না, হেয়ার অ্যাক্সেসরিজ এবং হ্যান্ডব্যাগ ১০০-৫০০ টাকায় পাওয়া যায়। গড়িয়াহাটের ‘সিলেক্ট স্টোর্স’-এ অথেনটিক শাড়ি নির্দিষ্ট মূল্যে পাওয়া যায়, যা গুণমানের নিশ্চয়তা দেয়। এই বাজারে দরদাম করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ; উদাহরণস্বরূপ, ৮০০ টাকার একটি কুর্তি দরদাম করে ৪০০ টাকায় কেনা সম্ভব। বাজারের পাশে ফুচকা, ঝালমুড়ি এবং কাটি রোলের মতো স্ট্রিট ফুড কেনাকাটার অভিজ্ঞতাকে আরও মজাদার করে। সময়: সোমবার-শনিবার, সকাল ১১:০০ থেকে রাত ৮:০০।
হাতিবাগান মার্কেট: সাশ্রয়ী ফ্যাশনের আড্ডা
উত্তর কলকাতার হাতিবাগান মার্কেট বাজেট ফ্যাশনের জন্য আরেকটি জনপ্রিয় গন্তব্য। এখানে সিল্ক শাড়ি, কটন কুর্তি, অক্সিডাইজড গয়না এবং জুতো ২৫০-১,৫০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়। বিশেষ করে ‘সিল্ক হাউস’-এর মতো দোকানে গড় মানের সিল্ক শাড়ি ২,৫০০ টাকায় পাওয়া যায়, যা বিয়ের মতো বিশেষ অনুষ্ঠানের জন্য আদর্শ। হাতিবাগানে রাস্তার দোকানগুলিতে ট্রেন্ডি টপস, বডিকন ড্রেস এবং জিন্স ৫০০-১,২০০ টাকায় পাওয়া যায়। এই বাজারের বিশেষত্ব হল এর বৈচিত্র্য—এখানে ঐতিহ্যবাহী পোশাকের পাশাপাশি আধুনিক ফ্যাশনও পাওয়া যায়। দরদাম করার দক্ষতা থাকলে দাম প্রায় অর্ধেকে নামিয়ে আনা সম্ভব। হাতিবাগানের ফুচকা এবং ঠান্ডা সিরাপের দোকানগুলি কেনাকাটার মাঝে বিরতির জন্য দারুণ। সময়: সোমবার-শনিবার, সকাল ১০:০০ থেকে রাত ৮:০০।
বি.কে. মার্কেট: ট্রেন্ডি এবং সাশ্রয়ী
শেক্সপিয়র সরণিতে অবস্থিত বি.কে. মার্কেট গ্রীষ্মকালীন ফ্যাশনের জন্য একটি লুকানো রত্ন। এখানে জারা-র মতো দেখতে জুতো ৭০০-৮০০ টাকায় এবং ট্রেন্ডি টপস ৫০০ টাকা থেকে পাওয়া যায়। ‘কোকো পিঙ্ক’ (দোকান নং ১২৭)-এর মতো দোকানে ৬ ইঞ্চি হাই হিল এবং শিমারি টপস পাওয়া যায়, যা পার্টির জন্য আদর্শ। এই বাজারে গ্রাফিক ডিজাইনের জুতো এবং ওয়েস্টার্ন পোশাকের সংগ্রহ তরুণদের মধ্যে জনপ্রিয়। এখানকার পরিবেশ সজীব, এবং দোকানে বাজানো সঙ্গীত কেনাকাটার অভিজ্ঞতাকে আরও উপভোগ্য করে। সময়: সোমবার-শনিবার, সকাল ১০:০০ থেকে রাত ৮:০০।
মেট্রো প্লাজা শপিং মল: আধুনিক ফ্যাশনের হাব
মেট্রো প্লাজা শপিং মল, বিশেষ করে ‘ড্রেস কোড’ (দোকান নং ১০২৫), বাজেটে ট্রেন্ডি পোশাকের জন্য দারুণ গন্তব্য। এখানে বডিকন ড্রেস, অফ-শোল্ডার টপস, রিপড জিন্স এবং শিমারি শ্রাগ ৫০০-১,৫০০ টাকায় পাওয়া যায়। XS থেকে 5XL পর্যন্ত সব সাইজের পোশাক এখানে পাওয়া যায়, যা বিভিন্ন শরীরের ধরনের জন্য উপযুক্ত। এই মলের সুবিধা হল এটি রাস্তার বাজারের তুলনায় কম ভিড়, এবং দোকানগুলি সুসংগঠিত। সময়: সোমবার-রবিবার, সকাল ১১:০০ থেকে রাত ১০:০০।
দক্ষিণাপন শপিং সেন্টার: হস্তশিল্প ও ঐতিহ্যবাহী ফ্যাশন
ধাকুরিয়ায় অবস্থিত দক্ষিণাপন শপিং সেন্টার হস্তশিল্প এবং ঐতিহ্যবাহী পোশাকের জন্য বিখ্যাত। এখানে হ্যান্ডলুম শাড়ি, কুর্তি এবং কান্থা এমব্রয়ডারি পোশাক ৮০০-৩,০০০ টাকায় পাওয়া যায়। গ্রীষ্মের জন্য হালকা কটন কুর্তি এবং হ্যান্ডলুম শাড়ি এখানে জনপ্রিয়। এই বাজারে স্থানীয় কারিগরদের সমর্থন করার সুযোগ রয়েছে, এবং দাম সাধারণত নির্দিষ্ট থাকে। সময়: মঙ্গলবার-শনিবার, সকাল ১১:০০ থেকে রাত ৭:৩০।
বাজেট কেনাকাটার টিপস
- দরদাম করুন: নিউ মার্কেট, গড়িয়াহাট এবং হাতিবাগানে দরদাম করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দাম ৫০-৬০% কমানোর চেষ্টা করুন।
- গুণমান পরীক্ষা করুন: সস্তা পোশাক কেনার সময় সেলাই এবং ফ্যাব্রিকের গুণমান পরীক্ষা করুন।
- গ্রীষ্মের জন্য হালকা পোশাক বেছে নিন: কটন, লিনেন এবং হালকা ফ্যাব্রিকের পোশাক গ্রীষ্মের জন্য আরামদায়ক।
- সকালে কেনাকাটা করুন: ভিড় এড়াতে এবং নতুন স্টক পেতে সকালে বাজারে যান।
- নগদ অর্থ বহন করুন: অনেক রাস্তার দোকানে ডিজিটাল পেমেন্টের সুবিধা নেই।
কলকাতার গ্রীষ্মকালীন বাজারগুলি বাজেট ফ্যাশনের জন্য একটি স্বর্গ। নিউ মার্কেট, গড়িয়াহাট, হাতিবাগান, বি.কে. মার্কেট, মেট্রো প্লাজা এবং দক্ষিণাপন শপিং সেন্টারে আপনি ট্রেন্ডি ও ঐতিহ্যবাহী পোশাকের বিশাল সংগ্রহ পাবেন। এই বাজারগুলি শুধুমাত্র সাশ্রয়ী কেনাকাটার সুযোগই দেয় না, বরং কলকাতার সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য এবং প্রাণবন্ত পরিবেশের স্বাদও দেয়। তাই, এই গ্রীষ্মে আপনার বাজেটের মধ্যে ফ্যাশনেবল পোশাক এবং আনুষাঙ্গিক কিনতে কলকাতার এই বাজারগুলিতে যান, এবং দরদামের শিল্পে পারদর্শী হয়ে আপনার কেনাকাটার অভিজ্ঞতাকে অবিস্মরণীয় করে তুলুন।