আজকের তথ্য ও প্রযুক্তির যুগে ভারত বিশ্বমঞ্চে একটি উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বিশেষ করে আমেরিকার মতো বিশাল বাজারে ভারতের পণ্যের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে, যা ভারতীয় অর্থনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র। তবে কি জানেন, ভারতের কোন পণ্য আমেরিকায় সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় এবং বড় বাজার অধিকার করেছে? এই প্রশ্নের উত্তর জানলে অনেকেই অবাক হবেন—সেটি হলো খনিজ পণ্য (Indian Minerals)। হ্যাঁ, সঠিক শুনেছেন! ভারত থেকে আমেরিকায় রপ্তানি করা খনিজ পণ্যের মূল্য ও পরিমাণ এখন এতটাই বেড়ে গেছে যে এটি দুই দেশের বাণিজ্য সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে।
সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ভারত থেকে আমেরিকায় খনিজ রপ্তানির মূল্য প্রায় ১,২৭,৫৯৯ কোটি টাকা ছুঁইয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় ১৫.৫% বৃদ্ধি দেখিয়েছে। ডিজি সিআইএস (DGCIS) তথ্য অনুযায়ী, আমেরিকা ভারতীয় খনিজ পণ্যের বাজারে ২৮.৮৯% অংশ নিয়ে শীর্ষ স্থানে রয়েছে। এর মধ্যে তামা, জিঙ্ক (ঝিনজিরি), এবং অন্যান্য ধাতব খনিজগুলোর চাহিদা বেশি। এই পরিসংখ্যান থেকে বোঝা যায় যে, ভারতীয় খনিজ আমেরিকার শিল্পক্ষেত্রে একটি অপরিহার্য ভূমিকা পালন করছে, বিশেষ করে যানজাতীয় ও ইলেকট্রনিক্স শিল্পে।
এই বিস্ময়কর তথ্যের পেছনে রয়েছে ভারতের প্রাকৃতিক সম্পদের সমৃদ্ধি। যেমন, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা এবং ছত্তীশগড়ের খনি অঞ্চলগুলো থেকে প্রাপ্ত খনিজগুলো রপ্তানির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে একটি আকর্ষণীয় তথ্য হলো, ভারত নিজেও এই খনিজগুলোর উপর নির্ভরশীল, কারণ বক্সাইট ও ম্যাঙ্গানিজের মতো গুরুত্বপূর্ণ খনিজের স্থানীয় উৎপাদন কিছুটা কম। ফলে, আমদানি করে মিশ্রণের মাধ্যমে ভারত নিজের চাহিদা মেটায়, আর অতিরিক্ত পরিমাণ রপ্তানি করে।
এই বাণিজ্য সম্পর্কের আরেকটি দিক হলো ভবিষ্যৎ প্রযুক্তির চাহিদা। ২০২৫ সালের ভারতীয় মাইনিং সম্মেলনে হিন্দালকোর প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা জোর দিয়েছেন স্থানীয়ভাবে গ্যালিয়ামের মতো উপপণ্য প্রক্রিয়াকরণ ক্ষমতা বাড়ানোর দিকে। কারণ, সেমিকন্ডাক্টর ও উচ্চপ্রযুক্তি শিল্পে এই খনিজের চাহিদা বাড়ছে। তবে বর্তমানে রপ্তানির উপর জোর দেওয়া হচ্ছে, যা দীর্ঘমেয়াদী স্বনির্ভরতার ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করতে পারে।
আমেরিকার সঙ্গে এই বাণিজ্য সম্পর্ক ভারতের জন্য একটি সুযোগ হলেও, এর সঙ্গে জড়িত কিছু প্রশ্নও রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, খনিজ রপ্তানির এত বড় অংশ আমেরিকার দিকে যাওয়ার কারণ কী? এর পেছনে রয়েছে আমেরিকার শিল্প উন্নয়নের চাহিদা এবং ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য সুযোগ বৃদ্ধি। তবে, স্থানীয় শিল্পের জন্য এই খনিজগুলোর ব্যবহার বাড়ালে ভারত নিজেও আরও বেশি সুবিধা লাভ করতে পারে।
সুতরাং, ভারতীয় খনিজ পণ্যের এই বড় বাজার আমেরিকায় অবাক করার মতো তথ্য হলেও, এটি একটি সতর্কতার বার্তাও। ভারতকে এবার ভাবতে হবে কীভাবে এই সম্পদকে স্থানীয় উন্নয়নে ব্যবহার করে স্বনির্ভরতা অর্জন করা যায়। এই দিকে কাজ শুরু হলে ভবিষ্যতে ভারত নিশ্চিতভাবে আরও শক্তিশালী অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে উঠে দাঁড়াতে পারে।