Loan Repayment: ভারতে ঋণের উপর নির্ভরশীলতা আগের চেয়ে বহুগুণে বেড়েছে। শিক্ষা, চিকিৎসা, বিয়ে কিংবা হঠাৎ জরুরি খরচ—সবক্ষেত্রেই আজ মানুষ ঋণের দিকে ঝুঁকছেন। একদিকে যেমন আর্থিক চাহিদা বাড়ছে, অন্যদিকে ডিজিটাল ব্যাঙ্কিংয়ের সুবাদে সহজে ঋণ পাওয়াও সম্ভব হচ্ছে। তবে সমস্যা দেখা দিচ্ছে ঋণ শোধে। বহু ঋণগ্রহীতা সঠিক পরিকল্পনার অভাবে দীর্ঘমেয়াদি ঋণের জালে জড়িয়ে পড়ছেন। কষ্টার্জিত অর্থ চলে যাচ্ছে সুদে, ডিফল্টের কারণে কমছে ক্রেডিট স্কোর, ভবিষ্যতে নতুন ঋণ পাওয়ার সম্ভাবনাও কমছে। ঋণ শোধে সাধারণত পাঁচটি বড় ভুলের কারণে এই সমস্যা হয়। নিচে প্রতিটি সমস্যার পাশাপাশি সেই ফাঁদ থেকে বাঁচার উপায় তুলে ধরা হলো।
১. বাজেট ছাড়া ঋণ শোধের চেষ্টা
ঋণগ্রহীতাদের সবচেয়ে সাধারণ ভুল হল বাজেট ছাড়া EMI শোধ শুরু করা। ঋণ ও ক্রেডিট সচেতনতামূলক প্ল্যাটফর্ম Zavo-র প্রতিষ্ঠাতা কুন্দন শাহি বলেন, “আপনার মাসিক আয় এবং ব্যয়ের একটি স্পষ্ট চিত্র না থাকলে EMI দেওয়ার সময় প্রায়ই টান পড়ে। এই পরিস্থিতি এড়াতে মাসিক বাজেট তৈরি করুন যেখানে ঋণ শোধকে অগ্রাধিকার দিন।”
তিনি ৫০-৩০-২০ নিয়মের কথা বলেন—যেখানে ৫০% অর্থ যায় প্রয়োজনীয় খরচে, ৩০% চাহিদাপূর্ণ খরচে এবং ২০% যায় সঞ্চয় ও ঋণ শোধে। এভাবে পরিকল্পনা করলে প্রতি মাসে EMI দেওয়ার জন্য নির্দিষ্ট অর্থ বরাদ্দ থাকবে, ডিফল্টের সম্ভাবনাও কমবে।
২. EMI মিস বা দেরিতে পরিশোধ
অনেকেই ভাবেন, এক-দুইটি EMI মিস করলে কিছু যায় আসে না। কিন্তু বাস্তবে, একটি EMI মিস করলে আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি ক্রেডিট স্কোরও কমে যায়। দেরিতে EMI দিলে বাড়তি ফাইন ও সুদ দিতে হয়, ভবিষ্যতের ঋণ পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।
এই সমস্যা এড়াতে EMI এর জন্য অটো-ডেবিট সেট করুন বা স্মার্টফোনে রিমাইন্ডার লাগান। যদি কোনও মাসে সমস্যার আশঙ্কা থাকে, আগেই ঋণদাতাকে জানিয়ে বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করুন।
৩. পুরনো ঋণ শোধে নতুন ঋণ নেওয়া
RBI-র এক সমীক্ষা বলছে, ২৭% ঋণগ্রহীতা শুধুমাত্র আগের ঋণ শোধ করতে নতুন ঋণ নিচ্ছেন। একটি ক্রেডিট কার্ডের EMI শোধে অন্য কার্ড ব্যবহার করা বা দ্রুত পার্সোনাল লোন নেওয়া তাৎক্ষণিক স্বস্তি দিতে পারে, কিন্তু এটি একটি ‘ডেট ট্র্যাপ’-এর দিকে ঠেলে দেয়।
এই পরিস্থিতি এড়াতে অপ্রয়োজনীয় খরচ কমান। দরকার হলে নিজের ব্যাঙ্কের সঙ্গেই ঋণ পুনর্গঠন বা সময়সীমা বাড়ানোর কথা বলুন। শুধুমাত্র তখনই নতুন ঋণ নিন, যদি তার সুদের হার স্পষ্টভাবে কম হয় এবং পুরনো ঋণগুলো একত্র করে EMI কমানো যায়।
৪. সুদের হার কমানোর সুযোগ হাতছাড়া করা
অনেকেই একবার ঋণ নিয়ে আর কখনও তার শর্তগুলো দেখেন না। অথচ সময়ে সময়ে সুদের হার পরিবর্তিত হয় এবং অনেক ব্যাঙ্ক বা NBFC নতুন ও ভালো ক্রেডিট স্কোরযুক্ত গ্রাহকদের জন্য অফার দেয়।
Zavo-র কুন্দন শাহি বলেন, “৫০ লাখ টাকার লোনে ১% সুদ কমলে লাখ টাকার সাশ্রয় হয়। এক্ষেত্রে ব্যালান্স ট্রান্সফার বা রিফাইন্যান্সিং একটি ভালো বিকল্প হতে পারে। তবে প্রসেসিং ফি বা প্রিপেমেন্ট চার্জ দেখে নিতে ভুলবেন না।”
প্রতি বছর আপনার ঋণের শর্তগুলো পর্যালোচনা করুন এবং প্রয়োজনে ভালো সুযোগ গ্রহণ করুন।
৫. আর্থিক চাপের সময় ঋণদাতার সঙ্গে যোগাযোগ না রাখা
কখনও আর্থিক সমস্যা এলে EMI মিস হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়, কিন্তু একেবারে চুপ করে থাকলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। অনেক সময় ব্যাঙ্ক EMI স্থগিতকরণ, লোন টার্ম বাড়ানো বা নতুন করে রিস্ট্রাকচারিং-এর বিকল্প দেয়, যা আপনার ক্রেডিট স্কোর নষ্ট না করেই সমস্যার সমাধান করতে পারে। করোনাকালে RBI যে ‘মোরাটোরিয়াম’ চালু করেছিল, তাতে ৫০ লাখেরও বেশি মানুষ উপকৃত হয়েছেন, শুধু ঋণদাতাকে জানিয়েই।
ঋণ নেওয়া একপ্রকার কৌশল—কিন্তু তা শোধ করা আরও বড় আর্থিক দায়িত্ব। পরিকল্পিত বাজেট, সময়মতো EMI পরিশোধ, সুদের হার নিয়ে সচেতনতা এবং আর্থিক সমস্যায় খোলাখুলি যোগাযোগ—এই কয়েকটি অভ্যাস আপনাকে ঋণের ফাঁদ থেকে বেরিয়ে আসতে সাহায্য করবে।
স্মার্ট ঋণ ব্যবস্থাপনা মানে শুধু সময়ে টাকা শোধ করা নয়, বরং নিজের আর্থিক ভবিষ্যৎকেও সুরক্ষিত রাখা। সতর্ক থাকুন, সচেতন থাকুন।