গ্রীষ্মের ছুটিতে পরিবেশবান্ধব ভ্রমণের জন্য আদর্শ ভারতের সেরা ৫ গন্তব্য

Eco-Tourism Destinations: গ্রীষ্মের ছুটি এলে মন চায় প্রকৃতির কোলে কিছুটা সময় কাটাতে। তবে আজকের দিনে ভ্রমণ শুধু বিশ্রাম বা আনন্দের জন্য নয়, পরিবেশের প্রতি দায়িত্বশীল…

Eco-Tourism Destinations in India

Eco-Tourism Destinations: গ্রীষ্মের ছুটি এলে মন চায় প্রকৃতির কোলে কিছুটা সময় কাটাতে। তবে আজকের দিনে ভ্রমণ শুধু বিশ্রাম বা আনন্দের জন্য নয়, পরিবেশের প্রতি দায়িত্বশীল হওয়াও গুরুত্বপূর্ণ। ইকো-ট্যুরিজম বা পরিবেশবান্ধব ভ্রমণ এমন একটি ধারণা, যা প্রকৃতি ও স্থানীয় সম্প্রদায়ের সংরক্ষণের সঙ্গে ভ্রমণের আনন্দকে মেলায়। ভারতের অফবিট ও টেকসই গন্তব্যগুলোর মধ্যে কোওর্গ, সিকিম এবং মেঘালয়ের মতো জায়গাগুলো গ্রীষ্মের ছুটির জন্য আদর্শ। এই প্রতিবেদনে আমরা পাঁচটি সবুজ গন্তব্য নিয়ে আলোচনা করব, যেখানে আপনি প্রকৃতির সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের পাশাপাশি টেকসই ভ্রমণের অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারেন। এই গন্তব্যগুলো হলো: কোওর্গ, সিকিম, মেঘালয়, স্পিতি ভ্যালি এবং আলিবাগ।

Advertisements

১. কোওর্গ, কর্ণাটক: কফির বাগানের সবুজ স্বর্গ

   
Coorg
Coorg

পশ্চিমঘাটের কোলে অবস্থিত কোওর্গ বা কোডাগু, যাকে ‘ভারতের স্কটল্যান্ড’ বলা হয়, প্রকৃতি প্রেমীদের জন্য একটি স্বপ্নের গন্তব্য। এখানকার সবুজ পাহাড়, কফি ও মশলার বাগান, ঝর্ণা এবং বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল পরিবেশবান্ধব ভ্রমণের জন্য আদর্শ। কোওর্গে ইকো-ট্যুরিজমের অন্যতম আকর্ষণ হলো দুবারে এলিফ্যান্ট ক্যাম্প, যেখানে পর্যটকরা হাতিদের খাওয়ানো, গোসল করানো এবং তাদের জীবনযাত্রা সম্পর্কে জানতে পারেন। নাগারহোল জাতীয় উদ্যান এখানে বাঘ, হাতি, চিতা এবং বিরল পাখির আবাসস্থল, যেখানে ইকো-ফ্রেন্ডলি সাফারি এবং নেচার ওয়াকের সুযোগ রয়েছে।

এছাড়া, অ্যাবে ফলস, মান্দালপট্টি ভিউপয়েন্ট এবং ব্রহ্মগিরি ওয়াইল্ডলাইফ স্যাঙ্কচুয়ারি প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগের জন্য অবশ্যই দেখার মতো। কোওর্গের স্থানীয় কোডাভা সম্প্রদায় টেকসই কৃষি ও হোমস্টে পরিচালনার মাধ্যমে পর্যটনকে পরিবেশবান্ধব রাখছে। পর্যটকরা এখানে জৈব কফি চাষের প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে পারেন এবং ট্রেকিং, রিভার রাফটিং বা সাইকেল ট্যুরে অংশ নিতে পারেন। গ্রীষ্মে এখানকার আবহাওয়া মনোরম থাকে, যা ভ্রমণকে আরও আনন্দদায়ক করে।

২. সিকিম: ভারতের প্রথম জৈব রাজ্য

sikim-2
হিমালয়ের কোলে অবস্থিত সিকিম ভারতের প্রথম সম্পূর্ণ জৈব রাজ্য, যা ইকো-ট্যুরিজমের জন্য বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত। খাংচেনজঙ্গা জাতীয় উদ্যান, ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্য স্থান, এখানকার প্রধান আকর্ষণ। এই উদ্যানে তুষার চিতাবাঘ, লাল পান্ডা এবং বিরল পাখির প্রজাতি দেখা যায়। সিকিমে প্লাস্টিক বোতল নিষিদ্ধ এবং বাঁশের বোতল ব্যবহারে উৎসাহ দেওয়া হয়, যা টেকসই পর্যটনের একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। লাচেন এবং ইয়াকতেনের মতো গ্রামগুলো পর্যটকদের জন্য হোমস্টে অফার করে, যেখানে স্থানীয় সংস্কৃতি ও জৈব খাবারের অভিজ্ঞতা পাওয়া যায়। গুরুদংমার লেক এবং লাচেন মনাস্ট্রি প্রকৃতি ও আধ্যাত্মিকতার মিশেল ঘটায়। সিকিমে ট্রেকিং, বার্ড ওয়াচিং এবং সাইকেল ট্যুরের মতো কার্যক্রম পরিবেশের উপর ন্যূনতম প্রভাব ফেলে। গ্রীষ্মে সিকিমের শীতল আবহাওয়া এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ভ্রমণকারীদের মন কাড়ে। স্থানীয় সম্প্রদায়ের সঙ্গে সহযোগিতা এবং সরকারের টেকসই নীতি সিকিমকে ইকো-ট্যুরিজমের আদর্শ গন্তব্য করে তুলেছে।

৩. মেঘালয়: এশিয়ার সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন গ্রামের আবাস

Advertisements

Meghalaya Election
মেঘালয়ের মাউলিনং গ্রাম, যাকে ‘এশিয়ার সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন গ্রাম’ বলা হয়, ইকো-ট্যুরিজমের একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ। খাসি উপজাতির এই গ্রামে প্লাস্টিক নিষিদ্ধ, এবং বাঁশের ডাস্টবিন ব্যবহার করা হয়। মাউলিনং-এর জীবন্ত রুট ব্রিজ, সবুজ বন এবং ঝর্ণা পর্যটকদের মুগ্ধ করে। গ্রামের বাসিন্দারা টেকসই জীবনযাপন এবং ধীরগতির ভ্রমণে বিশ্বাসী। এখানে হোমস্টে-তে থেকে পর্যটকরা খাসি সংস্কৃতি, স্থানীয় খাবার এবং হস্তশিল্পের সঙ্গে পরিচিত হতে পারেন। মাউফলাং স্যাক্রেড ফরেস্ট, যেখানে খাসি সম্প্রদায় প্রকৃতির পূজা করে, বিরল উদ্ভিদ ও প্রাণীর আবাসস্থল। গ্রীষ্মে মেঘালয়ের মনোরম আবহাওয়া এবং সবুজ প্রকৃতি ভ্রমণকে অবিস্মরণীয় করে তোলে। মেঘালয়ের অন্যান্য অফবিট গন্তব্য, যেমন শিলিয়াং জাশার এবং উমনিউ তমার, প্রকৃতি প্রেমীদের জন্য ট্রেকিং এবং স্থানীয় জীবনযাত্রার অভিজ্ঞতা দেয়।

৪. স্পিতি ভ্যালি, হিমাচল প্রদেশ: হিমালয়ের জৈব কৃষির কেন্দ্র
হিমালয়ের প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থিত স্পিতি ভ্যালি তার বন্ধুর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং টেকসই কৃষির জন্য বিখ্যাত। এখানকার কঠিন জলবায়ু সত্ত্বেও স্থানীয়রা জৈব কৃষি পদ্ধতি অনুসরণ করে, যা পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখে। স্পিতি ভ্যালিতে হোমস্টে-তে থেকে পর্যটকরা স্থানীয় সংস্কৃতি, জৈব খাবার এবং হস্তশিল্পের অভিজ্ঞতা নিতে পারেন। কি মনাস্ট্রি, ধানকার লেক এবং লাংজা গ্রাম এখানকার প্রধান আকর্ষণ। ট্রেকিং, বার্ড ওয়াচিং এবং ফটোগ্রাফির জন্য স্পিতি আদর্শ। এখানে প্লাস্টিক ব্যবহার নিয়ন্ত্রিত, এবং পর্যটকদের পরিবেশবান্ধব আচরণের উপর জোর দেওয়া হয়। গ্রীষ্মে স্পিতির শীতল আবহাওয়া এবং মনোরম দৃশ্য ভ্রমণকারীদের মন জয় করে।

৫. আলিবাগ, মহারাষ্ট্র: উপকূলীয় ইকো-ট্যুরিজমের আশ্রয়
মুম্বাই থেকে অল্প দূরত্বে অবস্থিত আলিবাগ একটি শান্ত উপকূলীয় গন্তব্য, যা ইকো-ট্যুরিজমের জন্য ক্রমশ জনপ্রিয় হচ্ছে। এখানকার ইকো-ফ্রেন্ডলি রিসর্টগুলো পরিবেশের উপর ন্যূনতম প্রভাব ফেলে এবং সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে কাজ করে। পর্যটকরা এখানে সমুদ্র সৈকতের শান্তি উপভোগ করতে পারেন, জৈব সামুদ্রিক খাবারের স্বাদ নিতে পারেন এবং সৈকত পরিষ্কার কর্মসূচিতে অংশ নিতে পারেন। আলিবাগে স্নরকেলিং, কায়াকিং এবং নেচার ওয়াকের মতো কার্যক্রম পরিবেশের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের সুযোগ দেয়। গ্রীষ্মে এখানকার মৃদু সমুদ্র বাতাস এবং সবুজ পরিবেশ ভ্রমণকে স্মরণীয় করে।

ইকো-ট্যুরিজমের গুরুত্ব
ইকো-ট্যুরিজম কেবল ভ্রমণ নয়, এটি প্রকৃতি ও স্থানীয় সম্প্রদায়ের প্রতি দায়িত্বশীলতার প্রতীক। কোওর্গ, সিকিম, মেঘালয়, স্পিতি ভ্যালি এবং আলিবাগের মতো গন্তব্যগুলো টেকসই পর্যটনের মাধ্যমে পরিবেশ সংরক্ষণ এবং স্থানীয় অর্থনীতির উন্নতিতে অবদান রাখছে। এই গন্তব্যগুলোতে ভ্রমণের সময় পর্যটকদের উচিত প্লাস্টিক ব্যবহার কমানো, স্থানীয় পণ্য কেনা এবং পরিবেশবান্ধব কার্যক্রমে অংশ নেওয়া। গ্রীষ্মের ছুটিতে এই সবুজ গন্তব্যগুলো শুধু প্রকৃতির সৌন্দর্যই উপহার দেবে না, বরং টেকসই জীবনযাপনের গুরুত্বও শেখাবে। তাই এই গ্রীষ্মে ব্যাগ গুছিয়ে বেরিয়ে পড়ুন এই ইকো-ফ্রেন্ডলি গন্তব্যগুলোর উদ্দেশে, যেখানে প্রকৃতি এবং স্থায়িত্বের মেলবন্ধন আপনার অভিজ্ঞতাকে অবিস্মরণীয় করে তুলবে।