নয়াদিল্লি, ১ ডিসেম্বর: ধূমপায়ী ও তামাকসেবীদের জন্য বড় দুঃসংবাদ (Tobacco excise duty)। সংসদের শীতকালীন অধিবেশন শুরু হতেই কেন্দ্রীয় সরকার তামাকজাত পণ্যের উপর বড় ধরনের আবগারি শুল্কবৃদ্ধির প্রস্তাব সামনে এনেছে। সিগারেট, গুটকা, পান মশলা, স্মোকিং মিক্সচারসহ একাধিক পণ্যের দাম আকাশছোঁয়া হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সরকার জানিয়েছে, এই অতিরিক্ত শুল্ক থেকে সংগৃহীত অর্থ জাতীয় নিরাপত্তা ও জনস্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে ব্যবহার করা হবে।
অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন অধিবেশনের প্রথম দিনই নতুন আবগারি বিল পেশ করার সম্ভাবনা ছিল। এই বিলেই রয়েছে অতিরিক্ত সেস বসানোর প্রস্তাব। বিশেষ করে ‘সিন গুডস’—সিগারেট, তামাকজাত পণ্য, পান মশলা—এ সবের দাম বাড়তে পারে উল্লেখযোগ্যভাবে। তবে সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রচলিত বিড়ি এই শুল্কবৃদ্ধির আওতা থেকে আপাতত বাদ রাখা হয়েছে।
রাহুল না মোদী, তাঁর লক্ষ্য কে? কীর্তি আজাদের মন্তব্যে গুঞ্জন রাজনৈতিক মহলে
নতুন আবগারি বিল অনুযায়ী, ৭৫ মিমি’র বেশি দৈর্ঘ্যের ফিল্টার সিগারেটে প্রতি ১,০০০ স্টিকে ১১,০০০ টাকা সেস বসানো হতে পারে। আগে যা ছিল মাত্র ৭৩৫ টাকা। অর্থাৎ প্রায় ১৫ গুণ বৃদ্ধি। ৬৫-৭০ মিমি নন-ফিল্টার সিগারেটে আগে প্রতি ১,০০০ স্টিকে সেস ছিল ২৫০ টাকা। এবার সেটি বাড়িয়ে ৪,৫০০ টাকা করার প্রস্তাব! প্রায় ১৮ গুণ বৃদ্ধি। পাইপ বা সিগারেটে ব্যবহৃত স্মোকিং মিক্সচারে আগে সেস ছিল ৬০ শতাংশ, এবার তা বাড়িয়ে করা হবে ৩২৫ শতাংশ।
এই বিপুল বৃদ্ধি বাজারে পণ্যের খুচরো মূল্যে বড়সড় প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে শহরাঞ্চলে জনপ্রিয় ফিল্টার সিগারেটের দাম বেড়ে যেতে পারে দ্বিগুণ এমনকি তিনগুণও। সরকারের দাবি, ২০১৭ সালে জিএসটি চালু হওয়ার পর থেকে সিগারেট ও তামাকজাত পণ্যে আবগারি তুলনামূলক কম ছিল, ফলে সেস বসানো হলেও দামের উপর খুব বেশি প্রভাব পড়ত না। কিন্তু এবার বিলটি পাস হলে, দীর্ঘদিনের ‘স্থিতিশীল’ সিগারেট দামে তীব্র উল্লম্ফন দেখা দেবে।
এই বিলে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান রয়েছে সরকার চাইলে জনস্বার্থে ভবিষ্যতে ‘সিন গুডস’-এর তালিকায় আরও পণ্য যুক্ত করতে পারবে। এর মানে সিনেমা টিকিট, এনার্জি ড্রিঙ্ক, জাঙ্ক ফুড বা অন্য কোন পণ্য ভবিষ্যতে অতিরিক্ত সেসের আওতায় আসতে পারে এমন জল্পনাও উঠে আসছে অর্থনীতি বিশেষজ্ঞদের একাংশে।
এদিকে সিগারেট ও গুটখার খুচরো ব্যবসায়ীরা বলছেন, অতিরিক্ত শুল্কের বোঝা শেষ পর্যন্ত পড়বে ক্রেতার মাথায়। খুচরো দামের বৃদ্ধি সিগারেট বিক্রি কমিয়ে দিতে পারে, কিন্তু বেআইনি চোরাচালান বা কালোবাজারও ফুলে ফেঁপে উঠতে পারে এমন আশঙ্কাও উঁকি দিচ্ছে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা অবশ্য এই প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছেন। তাঁদের মতে, ভারতে বছরে লক্ষাধিক মানুষ তামাকজনিত রোগে মারা যান। দাম বাড়লে বহু মানুষ তামাকের উপর নির্ভরতা কমাতে বাধ্য হবেন এতে জনস্বাস্থ্যের উন্নতি হবে। অন্যদিকে সাধারণ ধূমপায়ীদের ক্ষোভ “দাম বাড়লে আমাদের কষ্ট হবে, কিন্তু স্বাস্থ্যসচেতনতা বাড়ানোর জন্য অন্য ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। শুধু দাম বাড়ালেই সমস্যার সমাধান হবে না।”
এই বিল সংসদের দুই কক্ষে পাস হলে তা অবিলম্বে কার্যকর হবে। ফলে আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই বাজারে সিগারেট, পান মশলা ও তামাকজাত পণ্যের নতুন দাম দেখা যেতে পারে। সামগ্রিকভাবে, তামাকের উপর বাড়তি শুল্ক বাড়তি আয়ের পথ খুলে দেবে সরকারের জন্য, কিন্তু ধূমপায়ী ও তামাকসেবীদের পকেটে বড়সড় চাপ ফেলবে তা নিশ্চিত।
