কম আয় থাকলেও মিলতে পারে সহজ পার্সোনাল লোন, জানুন কীভাবে

ব্যক্তিগত ঋণ (Personal Loan) নিয়ে একটি প্রচলিত ধারণা রয়েছে যে এটি পাওয়ার জন্য উচ্চ বেতন বা স্থিতিশীল আর্থিক অবস্থা প্রয়োজন। কিন্তু ২০২৫ সালে এই ধারণা…

Personal Loan for low income

ব্যক্তিগত ঋণ (Personal Loan) নিয়ে একটি প্রচলিত ধারণা রয়েছে যে এটি পাওয়ার জন্য উচ্চ বেতন বা স্থিতিশীল আর্থিক অবস্থা প্রয়োজন। কিন্তু ২০২৫ সালে এই ধারণা আর সত্য নয়। আধুনিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের উন্নতির ফলে ব্যক্তিগত ঋণ এখন অনেক বেশি সাশ্রয়ী এবং সহজলভ্য হয়ে উঠেছে, এমনকি মাঝারি বা নিম্ন আয়ের ব্যক্তিদের জন্যও। এই নিবন্ধে আমরা প্রমাণ করব যে কীভাবে উচ্চ বেতন ছাড়াই আপনি ব্যক্তিগত ঋণ পেতে পারেন এবং এর পেছনের সত্যতা উদঘাটন করব।

মিথ ভাঙা: উচ্চ বেতনের প্রয়োজন নেই
অনেকেই মনে করেন যে ব্যক্তিগত ঋণ পাওয়ার জন্য উচ্চ বেতন বা প্রচুর সঞ্চয় থাকতে হবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, ব্যক্তিগত ঋণ একটি অসুরক্ষিত ঋণ, যার জন্য কোনো জামানতের প্রয়োজন হয় না, এবং ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো আপনার আয়ের স্তরের চেয়ে আপনার পরিশোধের ক্ষমতার উপর বেশি জোর দেয়। ২০২৫ সালে, ব্যাংক, নন-ব্যাংকিং ফাইনান্সিয়াল কোম্পানি (এনবিএফসি) এবং অনলাইন লেন্ডিং প্ল্যাটফর্মগুলো বিভিন্ন আয়ের গ্রুপের জন্য ঋণের বিকল্প প্রদান করছে। এমনকি মাসিক ১৫,০০০ থেকে ২০,০০০ টাকা আয়ের ব্যক্তিরাও সঠিক কাগজপত্র এবং পরিশোধের পরিকল্পনা থাকলে ঋণ পেতে পারেন।

   

কীভাবে এটি সম্ভব?
ব্যক্তিগত ঋণের অনুমোদন নির্ভর করে কয়েকটি মূল বিষয়ের উপর, যেগুলোর সঙ্গে উচ্চ বেতনের সরাসরি সম্পর্ক নেই। এগুলো হলো:
১. ক্রেডিট স্কোর: একটি ভালো ক্রেডিট স্কোর (৬৫০ বা তার বেশি) ঋণ পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ায়। তবে, কম ক্রেডিট স্কোর থাকলেও স্থিতিশীল আয় এবং অন্যান্য কাগজপত্রের মাধ্যমে ঋণ পাওয়া সম্ভব। ২. আয়ের প্রমাণ: আপনার নিয়মিত আয়, যেমন বেতন, ব্যবসায়িক আয় বা ফ্রিল্যান্সিংয়ের আয়, ঋণদাতার কাছে পরিশোধের ক্ষমতার প্রমাণ হিসেবে কাজ করে। এমনকি কম আয় হলেও, সঠিক আর্থিক পরিকল্পনা থাকলে ঋণ মঞ্জুর হতে পারে। ৩. ডকুমেন্টেশন: আধার কার্ড, প্যান কার্ড, ব্যাংক স্টেটমেন্ট এবং আয়ের প্রমাণ (যেমন বেতনের স্লিপ বা আইটি রিটার্ন) সঠিকভাবে জমা দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। ৪. ঋণের পরিমাণ: কম বেতনের ক্ষেত্রে ছোট পরিমাণের ঋণ (৫০,০০০ থেকে ২ লাখ টাকা) পাওয়া সহজ। এই পরিমাণ আপনার মাসিক কিস্তি (EMI) পরিশোধের ক্ষমতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া উচিত।

বাস্তব উদাহরণ
ধরুন, অর্পিতা একজন স্কুল শিক্ষিকা, যার মাসিক বেতন ২৫,০০০ টাকা। তার ক্রেডিট স্কোর ৭০০, এবং তার কোনো পূর্ববর্তী ঋণ নেই। তিনি তার বোনের চিকিৎসার জন্য ১ লাখ টাকার ব্যক্তিগত ঋণের জন্য আবেদন করেন। একটি এনবিএফসি তার আয়ের প্রমাণ এবং ব্যাংক স্টেটমেন্ট যাচাই করে ১৫% সুদের হারে ৩৬ মাসের জন্য ঋণ মঞ্জুর করে। তার মাসিক EMI হয় ৩,৮০০ টাকা, যা তার আয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এই উদাহরণ প্রমাণ করে যে উচ্চ বেতন ছাড়াও ঋণ পাওয়া সম্ভব।

আধুনিক ঋণদানের সুবিধা
২০২৫ সালে ডিজিটাল ঋণদান প্ল্যাটফর্ম যেমন CredAble, MoneyView এবং Navi কম আয়ের ব্যক্তিদের জন্য ঋণ সহজলভ্য করেছে। এই প্ল্যাটফর্মগুলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) এবং ডেটা অ্যানালিটিক্স ব্যবহার করে আবেদনকারীর আর্থিক প্রোফাইল বিশ্লেষণ করে এবং দ্রুত ঋণ মঞ্জুর করে। উদাহরণস্বরূপ, CredAble ১০ মিনিটের মধ্যে ১০,০০০ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ প্রদান করতে পারে, এমনকি মাঝারি আয়ের ব্যক্তিদের জন্যও। এছাড়া, ব্যাংকগুলো প্রাক-অনুমোদিত ঋণ অফার করে, যা বিদ্যমান গ্রাহকদের ক্রেডিট ইতিহাসের উপর ভিত্তি করে দেওয়া হয়।

কম আয়ে ঋণ পাওয়ার কৌশল
১. ছোট ঋণের জন্য আবেদন: কম আয়ের ক্ষেত্রে ছোট পরিমাণের ঋণ নিন, যা পরিশোধ করা সহজ। ২. ক্রেডিট স্কোর উন্নত করুন: সময়মতো ক্রেডিট কার্ড বিল পরিশোধ করুন এবং পুরনো ঋণ পরিষ্কার করুন। ৩. সহ-আবেদনকারী বা গ্যারান্টার: কোনো পরিবারের সদস্য বা বন্ধুকে সহ-আবেদনকারী হিসেবে যোগ করলে ঋণ পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। ৪. নমনীয় মেয়াদ নির্বাচন: দীর্ঘ মেয়াদের ঋণ নিন, যাতে মাসিক কিস্তি কম হয়। ৫. অনলাইন তুলনা: বিভিন্ন ঋণদাতার সুদের হার এবং শর্ত তুলনা করতে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করুন।
সতর্কতা ও বিবেচনা

Advertisements

কম আয়ে ঋণ নেওয়ার সময় কিছু বিষয় মাথায় রাখা জরুরি:
• সুদের হার: কম আয়ের ক্ষেত্রে সুদের হার সাধারণত বেশি হতে পারে (১৫-২৪%)। সর্বনিম্ন হারের জন্য তুলনা করুন।
• পরিশোধের ক্ষমতা: আপনার মাসিক আয়ের ৩০-৪০% এর বেশি EMI বেছে নেবেন না।
• লুকানো খরচ: প্রক্রিয়াকরণ ফি, প্রিপেমেন্ট চার্জ এবং দেরিতে পরিশোধের জরিমানা সম্পর্কে জানুন।
• ঋণের পরিমাণ: প্রয়োজনের অতিরিক্ত ঋণ নেবেন না, কারণ এটি আর্থিক চাপ সৃষ্টি করতে পারে।

একটি বাস্তব গল্প
রাহুল, একজন ফ্রিল্যান্স গ্রাফিক ডিজাইনার, যার মাসিক আয় ১৮,০০০ টাকা, তার ল্যাপটপ আপগ্রেডের জন্য ৫০,০০০ টাকার ঋণ চেয়েছিলেন। তার ক্রেডিট স্কোর ছিল ৬৮০, এবং তিনি একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্মে আবেদন করেন। তার ব্যাংক স্টেটমেন্ট এবং ফ্রিল্যান্সিংয়ের চুক্তি দেখিয়ে তিনি ১৮% সুদে ২৪ মাসের ঋণ পান। তার মাসিক EMI ২,৫০০ টাকা, যা তার আয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তিনি সময়মতো কিস্তি পরিশোধ করে তার ক্রেডিট স্কোরও উন্নত করেছেন।

সরকারি উদ্যোগের সুবিধা
ভারত সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প, যেমন প্রধানমন্ত্রী মুদ্রা যোজনা, কম আয়ের ব্যক্তিদের জন্য ঋণের সুযোগ প্রদান করে। এই প্রকল্পের আওতায় ছোট ব্যবসায়ী এবং ফ্রিল্যান্সাররা সহজ শর্তে ঋণ পেতে পারেন। এছাড়া, স্ট্যান্ডআপ ইন্ডিয়া এবং আত্মনির্ভর ভারত প্রকল্পও কম আয়ের ব্যক্তিদের জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদান করে।

উচ্চ বেতন ছাড়াও ব্যক্তিগত ঋণ পাওয়া সম্ভব, যদি আপনি সঠিক পরিকল্পনা এবং কাগজপত্র প্রদান করেন। ২০২৫ সালে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম এবং সরকারি উদ্যোগের কারণে ঋণ প্রক্রিয়া আরও সহজ হয়েছে। তবে, ঋণ নেওয়ার আগে আপনার আর্থিক সক্ষমতা এবং পরিশোধের পরিকল্পনা বিবেচনা করুন। সঠিক ঋণদাতা নির্বাচন এবং সুদের হার তুলনা করে আপনি আর্থিক স্বাধীনতা অর্জন করতে পারেন।