যথাসময়ে আয়কর রিটার্ন (ITR) ফাইল করাটা অনেক ভারতীয়র কাছে বছরের একটি বড় দায়িত্ব। প্রতি বছর ১৫ই সেপ্টেম্বর আসার আগেই লক্ষ লক্ষ করদাতা রিটার্ন জমা দেওয়ার জন্য হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। তবে যেটা অনেকেই বুঝতে চান না, তা হল – কর দফতরের জন্য এই সময়সীমা কোনও শেষ নয়, বরং তাদের আসল কাজের শুরু।
বর্তমানে আমরা দাঁড়িয়ে আছি এক সম্পূর্ণ নতুন কর-সংস্কৃতির যুগে, যেখানে সরকারের Annual Information Statement (AIS) প্রতিটি PAN হোল্ডারের জন্য একটি স্বচ্ছ ও শক্তিশালী আর্থিক বিবৃতি তৈরি করে দিচ্ছে। ব্যাংক, মিউচুয়াল ফান্ড কোম্পানি, প্রপার্টি রেজিস্ট্রেশন অফিস ও স্টক ব্রোকারদের মত বিভিন্ন উৎস থেকে সংগৃহীত এই তথ্যের ভিত্তিতে সরকার আপনার সম্পূর্ণ আর্থিক জীবনচিত্র হাতে পাচ্ছে।
এখন আর ITR শুধু একটি ঘোষণা নয়, বরং সেটি হল একপ্রকার প্রমাণপত্র, যা সঙ্গে সঙ্গে যাচাই করা হয় সরকারের কাছে থাকা বিশদ ডেটার সঙ্গে। আর এখানেই করদাতাদের জন্য শুরু হয় আসল চ্যালেঞ্জ – কারণ একটি ছোট ভুলও পরবর্তী মাসে একটি স্ক্রুটিনি নোটিশের আকারে ফিরে আসতে পারে।
নতুন বাস্তবতায় করদাতার ভূমিকা বদলাচ্ছে:
বর্তমানে করদাতাদের উচিত ITR ফাইল করাকে শুধু সময়মত দায়মুক্তির পথ হিসেবে না দেখে, বরং একে গ্রহণ করা উচিত নিজের আর্থিক সততার প্রকাশ হিসেবে। এবং এই দায়িত্ব পালন করতে গেলে যে কয়েকটি বিষয়ে বিশেষ নজর দিতে হবে, তা হল—
১. AIS থেকে শুরু করুন:
ITR ফাইল করার আগে প্রথম ধাপ হওয়া উচিত আপনার AIS ভালোভাবে ডাউনলোড ও পর্যালোচনা করা। সেখানে যদি কোনও আয়, লেনদেন বা বড় অংকের ট্রান্স্যাকশন উল্লেখ থাকে, তা রিটার্নে অন্তর্ভুক্ত করতেই হবে। ভুলবশত কম বা বেশি রিপোর্ট করলে অথবা কিছু বাদ গেলে, তা সংশোধনের জন্য AIS-এ ফিডব্যাক দেওয়া প্রয়োজন।
২. ছোট আয়গুলো ভুলে যাবেন না:
সেভিংস অ্যাকাউন্ট থেকে পাওয়া ইন্টারেস্ট, মিউচুয়াল ফান্ডের ছোট রিডেম্পশন, ডিভিডেন্ড, শেয়ার বিক্রির লাভ – এগুলো অনেক সময়ই বাদ পড়ে যায়। কিন্তু এই ছোট ভুলই বড় ঝামেলা ডেকে আনতে পারে।
৩. Form 26AS অন্ধভাবে বিশ্বাস করবেন না:
TDS কাটা হয়েছে, কিন্তু তা ঠিকভাবে রিপোর্ট হয়েছে তো? Form 26AS-এ দেওয়া তথ্য এবং AIS-এর তথ্য মিলিয়ে দেখা খুব জরুরি। কারণ কোনও এমপ্লয়ারের ছোট একটি ডেটা এন্ট্রি ভুল আপনার জন্য ভবিষ্যতে বড় সমস্যার কারণ হতে পারে।
প্রযুক্তির সহায়তায় গড়ে তুলুন “কমপ্লায়েন্স শিল্ড”:
এই এতসব তথ্য মিলিয়ে দেখা, ডেটা যাচাই করা – হাতে করে করা মানেই ভুলের সম্ভাবনা। আর এখানেই প্রযুক্তির গুরুত্ব ক্রমশ বাড়ছে। কল্পনা করুন এমন একটি AI-চালিত ট্যাক্স প্ল্যাটফর্ম, যা আপনার AIS, Form 26AS, ব্যাংক স্টেটমেন্ট সহ সমস্ত তথ্য নিয়ে একটি ‘মাস্টার লেজার’ তৈরি করবে। এরপর সেই তথ্যের সঙ্গে আপনার ড্রাফ্ট ITR তুলনা করে একে একে প্রতিটি মিল/অমিল নিরীক্ষণ করবে। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই তা আপনার রিটার্নের যেকোনও গড়মিল, আয় বাদ পড়া অথবা TDS এর মিসম্যাচ ধরিয়ে দেবে।
এই প্রযুক্তিভিত্তিক পর্যবেক্ষণকে আমরা ভাবতে পারি একটি ‘অডিট শিল্ড’ হিসেবে। কিন্তু শুধুমাত্র প্রযুক্তি যথেষ্ট নয়। কারণ কিছু জটিল ক্যাপিটাল গেইন পরিস্থিতি বা ব্যতিক্রমধর্মী আয় ব্যাখ্যার জন্য চাই অভিজ্ঞ ট্যাক্স পরামর্শদাতার হস্তক্ষেপ। তাই ভবিষ্যতের আদর্শ কর-সমাধান হবে AI ও মানুষের সমন্বয়ে তৈরি একটি মডেল – যেখানে মেশিন দেবে নিখুঁত বিশ্লেষণ আর মানুষ দেবে কৌশলগত দিকনির্দেশ।
শুধুমাত্র সময়মত নয়, নিশ্চিতভাবেও ফাইল করুন:
আজকের দিনে শুধুমাত্র সময়মতো রিটার্ন জমা দেওয়া যথেষ্ট নয়। সবচেয়ে বড় লক্ষ্য হওয়া উচিত নিশ্চিতভাবে বলা যে – “আমি সম্পূর্ণরূপে কর-বিধি মেনে রিটার্ন ফাইল করেছি।” এটি হল সেই শান্তির পথ, যেখানে কোনও স্ক্রুটিনির ভয় থাকবে না। সরকারের তথ্য সংগ্রহের ক্ষমতা যেমন বেড়েছে, তেমনই করদাতার পক্ষেও সঠিকভাবে প্রস্তুতি নেওয়ার পথ এখন উন্মুক্ত।
এক কথায়, ১৫ই সেপ্টেম্বর একটি ডেডলাইন ঠিকই, কিন্তু তারপরে আপনার সততা ও সচেতনতা দিয়েই তৈরি করতে হবে এক অপরাজেয় আর্থিক দুর্গ – যা কোনও স্ক্রুটিনি বা নোটিশকেই ভয় পায় না।