বুকিং ফেরত দিয়ে ভারতের বাজারে প্রস্তুতি নিচ্ছে টেসলা

বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা টেসলা (Tesla) ইনকর্পোরেটেড ভারতের বাজারে প্রবেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। ব্লুমবার্গ নিউজের দেখা ইমেল অনুযায়ী, টেসলার ভারতীয় কার্যালয় ২০১৬ সালে…

Tesla Refunds Model 3 Bookings in India, Signals Imminent Launch

বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা টেসলা (Tesla) ইনকর্পোরেটেড ভারতের বাজারে প্রবেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। ব্লুমবার্গ নিউজের দেখা ইমেল অনুযায়ী, টেসলার ভারতীয় কার্যালয় ২০১৬ সালে মডেল ৩-এর জন্য প্রাথমিক বুকিংকারীদের আমানত ফেরত দিচ্ছে। এই পদক্ষেপ বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অটোমোবাইল বাজারে টেসলার আসন্ন প্রবেশের জল্পনাকে আরও জোরদার করেছে। ইলন মাস্কের নেতৃত্বাধীন এই কোম্পানি ভারতের উচ্চ আমদানি শুল্কের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিনের প্রতিবন্ধকতার পর এখন বাজারে প্রবেশের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।

   

প্রাথমিক বুকিং ফেরতের পেছনের কারণ

টেসলা তাদের ইমেলে গ্রাহকদের জানিয়েছে, “আপাতত আমরা আপনার রিজার্ভেশন ফি ফেরত দিতে চাই। আমরা ভারতে আমাদের পণ্যের অফার চূড়ান্ত করার পর আবার বাজারে যোগাযোগ করব। আমরা আশা করি, আমরা যখন আপনার দেশে লঞ্চ এবং ডেলিভারির জন্য প্রস্তুত হব, তখন আপনাকে আবার আমাদের সঙ্গে দেখতে পাব।” এই ফেরতের প্রধান কারণ হলো পুরনো প্রজন্মের মডেল ৩ বন্ধ হয়ে যাওয়া। টেসলা এখন নতুন এবং আপডেটেড মডেল নিয়ে ভারতে প্রবেশের পরিকল্পনা করছে। ২০১৬ সালে ভারতীয় গ্রাহকরা প্রায় ১,০০০ মার্কিন ডলার (তৎকালীন ৬৬,২৩৭ রুপি) জমা দিয়ে মডেল ৩-এর জন্য বুকিং করেছিলেন। তবে, উচ্চ আমদানি শুল্ক এবং অপর্যাপ্ত অবকাঠামোর কারণে টেসলা ভারতে তাদের পরিকল্পনা বিলম্বিত করেছিল।

টেসলার ভারত প্রবেশের প্রস্তুতি

টেসলার এই পদক্ষেপ ভারতে তাদের বাজার প্রবেশের জন্য চূড়ান্ত প্রস্তুতির ইঙ্গিত দেয়। সম্প্রতি, টেসলা মুম্বাইয়ের বান্দ্রা কুর্লা কমপ্লেক্সে (বিকেসি) ৪,০০৩ বর্গফুটের একটি প্রাইম অফিস স্পেস ভাড়া নিয়েছে, যার জন্য মাসিক ভাড়া ৩৫.২৬ লক্ষ রুপি এবং ২.১১ কোটি রুপির সিকিউরিটি ডিপোজিট দেওয়া হয়েছে। এই পাঁচ বছরের লিজ চুক্তি টেসলার ভারতীয় বাজারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধতার প্রমাণ। এছাড়াও, কোম্পানি মুম্বাই এবং দিল্লিতে শোরুম খোলার পরিকল্পনা করছে এবং লিঙ্কডইনে গ্রাহক সেবা, বিক্রয় এবং পণ্য উন্নয়নের জন্য প্রায় ২৪টি পদে নিয়োগ শুরু করেছে।

টেসলা সম্ভবত ২০২৫ সালের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে বুকিং শুরু করবে এবং তৃতীয় ত্রৈমাসিকে ডেলিভারি দেবে। প্রাথমিকভাবে মুম্বাই, দিল্লি এবং বেঙ্গালুরুতে বিক্রি শুরু হবে, যার বার্ষিক লক্ষ্য ২,৫০০ ইউনিট। টেসলা ভারতে প্রথমে মডেল ওয়াই নিয়ে আসবে, যা জার্মানির বার্লিন কারখানা থেকে আমদানি করা হবে। এই মডেলের দাম ৭০ থেকে ৯০ লক্ষ রুপির মধ্যে হতে পারে। মডেল ৩-এর পরিবর্তে মডেল ওয়াইকে প্রথমে আনার কারণ হলো ভারতের চাহিদা এবং রাইট-হ্যান্ড-ড্রাইভ গাড়ির প্রাপ্যতা।

শুল্ক হ্রাস এবং সরকারি নীতি

ভারত সরকার সম্প্রতি বৈদ্যুতিক গাড়ির উপর আমদানি শুল্ক ১১০% থেকে কমিয়ে ৭০% করেছে, যা টেসলার বাজার প্রবেশে সহায়ক হবে। এছাড়াও, সরকার ৩৫,০০০ মার্কিন ডলারের বেশি দামের বৈদ্যুতিক গাড়ির উপর ১৫% শুল্কের প্রস্তাব দিয়েছে, তবে শর্ত হলো নির্মাতাদের তিন বছরের মধ্যে স্থানীয় উৎপাদন শুরু করতে হবে। এই নীতি টেসলার জন্য ভারতে প্রবেশের পথ সুগম করেছে। সম্প্রতি ইলন মাস্কের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বৈঠক এবং ভারত-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান বাণিজ্য চুক্তির আলোচনা টেসলার পরিকল্পনাকে আরও গতি দিয়েছে।

ভারতীয় বাজারে প্রভাব

টেসলার ভারতে প্রবেশ ক্রমবর্ধমান উচ্চ-মধ্যবিত্ত শ্রেণির জন্য আকর্ষণীয় হলেও, স্থানীয় গাড়ি নির্মাতাদের জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে। টাটা মোটরস, মাহিন্দ্রা এবং অন্যান্য দেশীয় কোম্পানি লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের সঙ্গে জড়িত। টেসলার প্রিমিয়াম মডেলগুলো মার্সিডিজ-বেঞ্জ, বিএমডব্লিউ এবং অডির মতো জার্মান বিলাসবহুল গাড়ির বাজারে প্রভাব ফেলতে পারে। তবে, টেসলা যদি ২৫-৩৫ লক্ষ রুপির রেঞ্জে গাড়ি আনে, তবে তা স্থানীয় নির্মাতাদের জন্যও হুমকি হয়ে উঠবে।

টেসলার বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ

টেসলা বিশ্বব্যাপী বিক্রয় হ্রাসের সম্মুখীন হচ্ছে। ২০২৪ সালে কোম্পানির গাড়ি ডেলিভারি এক দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে প্রথমবার কমেছে। চীনের বিওয়াইডি কোম্পানি টেসলার জন্য শক্তিশালী প্রতিযোগী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে, ভারতের মতো উদীয়মান বাজারে প্রবেশ টেসলার জন্য নতুন সম্ভাবনা তৈরি করতে পারে। ভারতের বৈদ্যুতিক গাড়ির বাজার বছরে ২০% হারে বাড়ছে, যা টেসলার জন্য আকর্ষণীয়।

টেসলার প্রাথমিক বুকিং ফেরত, শোরুমের জন্য জায়গা ভাড়া এবং নিয়োগ কার্যক্রম ভারতে তাদের আসন্ন প্রবেশের স্পষ্ট ইঙ্গিত। সরকারি নীতির উন্নতি এবং মাস্কের ভারত সফরের পরিকল্পনা এই প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করছে। টেসলার প্রবেশ ভারতের বৈদ্যুতিক গাড়ির বাজারে নতুন গতি আনবে, তবে দেশীয় নির্মাতাদের জন্য প্রতিযোগিতা বাড়াবে। ভারতীয় গ্রাহকরা এখন টেসলার প্রিমিয়াম বৈদ্যুতিক গাড়ির অপেক্ষায় রয়েছেন, যা দেশের স্বয়ংচালিত শিল্পে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে পারে।