নয়াদিল্লি, ৮ অক্টোবর ২০২৫: ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিকম সংস্থা ভারত সঞ্চার নিগম লিমিটেড (BSNL) অবশেষে দেশের টেলিকম পরিষেবায় যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিতে চলেছে। বহু প্রতীক্ষার পর সংস্থাটি এবার 5G পরিষেবা চালুর জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত। ইতিমধ্যেই 5G পাইলট প্রকল্প সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে এবং 4G নেটওয়ার্ক আপগ্রেডেশনও শেষ হয়েছে।
বিএসএনএলের বড় ঘোষণা
ভারতের মোবাইল কংগ্রেস (IMC) অনুষ্ঠানে ANI-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বিএসএনএলের প্রিন্সিপাল জেনারেল ম্যানেজার (PGM) সিডিএন, বিবেক দোয়া জানান যে মাঠপর্যায়ে ট্রায়াল প্রায় শেষ পর্যায়ে এবং খুব শীঘ্রই দেশজুড়ে 5G পরিষেবা চালু হবে।
তিনি বলেন,
“আমরা ইতিমধ্যেই 5G পরিষেবার টেস্টিং সম্পন্ন করেছি। বর্তমানে আমাদের নেটওয়ার্ক 4G হলেও সেটি সম্পূর্ণভাবে আপগ্রেডযোগ্য। দেশবাসী শীঘ্রই 5G পরিষেবার অভিজ্ঞতা পাবেন।”
স্বদেশি প্রযুক্তির শক্তি
গত ২৭ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ওড়িশার ঝাড়সুগুড়া থেকে দেশের স্বদেশি 4G স্ট্যাক এবং এক লক্ষ বিএসএনএল 4G টাওয়ার উদ্বোধন করেছিলেন। এই উদ্যোগ শুধু টেলিকম খাতেই নয়, আত্মনির্ভর ভারত (Atmanirbhar Bharat) দৃষ্টিভঙ্গিকে আরও সুদৃঢ় করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, 5G রোলআউটের ক্ষেত্রে এই স্বদেশি অবকাঠামো বড় ভূমিকা রাখবে।
স্যাটেলাইট যোগাযোগে নতুন দিগন্ত
বিবেক দোয়া আরও জানান, ভারতের ভৌগোলিক বৈচিত্র্যের কারণে অনেক দুর্গম অঞ্চল এখনো স্থিতিশীল নেটওয়ার্ক সুবিধা পায়নি। স্যাটেলাইট প্রযুক্তিকে ফাইবার ও রেডিও নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত করে এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন,
“স্যাটেলাইট প্রযুক্তি গ্রামীণ ও দুর্গম অঞ্চলে ডিজিটাল সংযোগ পৌঁছে দেবে। আন্তর্জাতিক অংশীদারদের বিনিয়োগে SATCOM প্রযুক্তি আরও দ্রুত বিকশিত হবে।”
গ্রামীণ কানেক্টিভিটির উন্নতি
বিএসএনএলের রূপান্তরের যাত্রায় কেন্দ্র সরকারের বিনিয়োগ ও সহায়তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। সংস্থার দাবি, ‘ভারতনেট’ প্রকল্পের মাধ্যমে ১০০ শতাংশ গ্রামকে ইন্টারনেটের আওতায় আনার লক্ষ্য ধাপে ধাপে পূর্ণ হচ্ছে।
গত কয়েক বছরে বিএসএনএল গ্রাহক পরিষেবার মান বাড়াতে নতুন প্রযুক্তি যুক্ত করেছে। এর ফলে গ্রাহক সন্তুষ্টির মাত্রাও বেড়েছে।
ভবিষ্যৎ: 6G-এর পথে
শুধু 5G নয়, বিএসএনএল এখন ভবিষ্যতের 6G নিয়েও পরিকল্পনা শুরু করেছে। বিবেক দোয়া জানান, 6G নেটওয়ার্কে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) মূল চালিকা শক্তি হবে। এতে থাকবে স্ব-শিক্ষণ (self-learning), স্ব-নিরাময় (self-healing) ও স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তি, যা গ্রাহকদের অভিজ্ঞতাকে আরও উন্নত করবে।
কেন গুরুত্বপূর্ণ এই পদক্ষেপ?
5G পরিষেবা চালুর ফলে ভারতের টেলিকম খাতে একটি বড় পরিবর্তন আসবে। উচ্চগতির ইন্টারনেট শুধুমাত্র শহরেই নয়, গ্রামীণ অর্থনীতিতেও গতি আনবে। কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও ই-কমার্স খাতে এর প্রভাব সরাসরি পড়বে।
এছাড়াও, 5G চালু হলে দেশের স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম নতুন সুযোগ পাবে। AI, IoT এবং রোবোটিক্স খাতেও ভারত নতুন দিগন্ত খুলতে পারবে।
বিএসএনএলের এই উদ্যোগ কেবলমাত্র প্রযুক্তির আপগ্রেডেশন নয়, বরং ভারতের ডিজিটাল যাত্রার একটি বড় মাইলফলক। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই যদি 5G চালু হয়, তবে দেশবাসী নতুন যুগের ইন্টারনেট অভিজ্ঞতার সাক্ষী হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি ভারতের অর্থনীতি ও ডিজিটাল পরিকাঠামোকে আরও শক্তিশালী করে তুলবে।