ডিজিটাল আস্থা গড়ে বিকশিত ভারতের পথে এগোনোর বার্তা COAI-এর

নয়াদিল্লি: ভারতের টেলিকম শিল্পের অন্যতম প্রধান শিল্পমঞ্চ COAI Dialogues 2025 আয়োজন করল সেলুলার অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়া (COAI)। এই অনুষ্ঠানটির মূল লক্ষ্য ছিল দেশের ডিজিটাল…

Telecom for Viksit Bharat

নয়াদিল্লি: ভারতের টেলিকম শিল্পের অন্যতম প্রধান শিল্পমঞ্চ COAI Dialogues 2025 আয়োজন করল সেলুলার অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়া (COAI)। এই অনুষ্ঠানটির মূল লক্ষ্য ছিল দেশের ডিজিটাল নেটওয়ার্ক অবকাঠামোকে আরও শক্তিশালী করা, যাতে ২০৪৭ সালের মধ্যে একটি সম্পূর্ণ ‘বিকশিত ভারত’ গড়ে তোলা যায়।

আয়োজনটি ৫টি ভাগে বিভক্ত ছিল

দিল্লিতে আয়োজিত এই গুরুত্বপূর্ণ সম্মেলনে অংশ নেন টেলিকম রেগুলেটরি অথরিটি অফ ইন্ডিয়া (TRAI)-এর সদস্য ঋতু রঞ্জন মিত্তার, GSMA-এর এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের প্রধান জুলিয়ান গোরম্যান, এবং সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি শিল্পক্ষেত্রের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ প্রতিনিধি।

   

পুরো দিনের এই আয়োজনটি ৫টি ভিন্ন সেশনে বিভক্ত ছিল। এখানে আলোচনা করা হয়, নীতিগত সংস্কার (Regulatory Reforms), স্পেকট্রামের প্রাপ্যতা ও খরচ, অবকাঠামো ভাগাভাগি ও বিনিয়োগের সুযোগ, ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি ও আস্থা গড়ে তোলা, পরবর্তী প্রজন্মের প্রযুক্তির (6G, AI, IoT) দ্রুত ব্যবহার ও তার প্রভাব।

এই বছর অনুষ্ঠানটির মূল বিষয়বস্তু ছিল— “Empowering Viksit Bharat” অর্থাৎ ডিজিটাল শক্তিকে কেন্দ্র করে এক উন্নত ভারত গড়ে তোলা।

বিশ্বের দ্রুততম ৫জি রোলআউট Telecom for Viksit Bharat

উদ্বোধনী ভাষণে প্রধান অতিথি ঋতু রঞ্জন মিত্তার (সদস্য, TRAI) বলেন, “ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তির প্রসঙ্গে আমরা এখনও সন্তুষ্ট থাকতে পারি না। যদিও ১.২ বিলিয়ন ব্যবহারকারী এবং বিশ্বের দ্রুততম ৫জি রোলআউট আমাদের বড় অর্জন, তবুও শেষ গ্রাহক পর্যন্ত পৌঁছনো জরুরি। AI-সক্ষম মোবাইল ফোনের যুগ আসন্ন, কিন্তু এর সঙ্গে আসছে আস্থার সমস্যা। ভয়েস-AI প্রযুক্তির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হলে আমাদের এখনই প্রস্তুত হতে হবে।”

তিনি আরও জানান যে, ব্যাকহল স্পেকট্রাম এবং আন্তঃসংযোগ নীতিতে নতুন সংস্কারের কাজ ইতিমধ্যেই এগোচ্ছে, যেখানে ডিপার্টমেন্ট অফ টেলিকমিউনিকেশনস (DoT) এবং TRAI সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।
GSMA এশিয়া প্যাসিফিক প্রধান জুলিয়ান গোরম্যান তাঁর বক্তব্যে ভারতের টেলিকম শক্তিকে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “ভারতের ডিজিটাল অগ্রযাত্রা মূলত সংযোগের ওপর দাঁড়িয়ে আছে, তবে এটি আরও টেকসই করতে হলে আমাদের ডিজিটাল আস্থা তৈরি করতে হবে। এর জন্য জরুরি সরকারি ও শিল্পক্ষেত্রের যৌথ উদ্যোগ। ভারত বৈশ্বিক মানদণ্ড স্থাপন করতে পারে, ওপেন ইন্টারঅপারেবল ফ্রেমওয়ার্ক প্রচার করতে পারে এবং ডিজিটাল বিভাজনের মধ্যে ঐক্য আনতে পারে। ভারত যদি নিজের উদ্ভাবন বিশ্বকে ভাগ করে নেয়, তবে কোটি কোটি মানুষকে ডিজিটাল যুগে নিয়ে আসতে সাহায্য করবে।”

দেড় বছরে বিশাল ৫জি নেটওয়ার্ক

COAI-এর ভাইস চেয়ারপার্সন ও ভারতী এয়ারটেলের চিফ রেগুলেটরি অফিসার রাহুল ভাটস বলেন, “গত ৩০ বছরে ভারতীয় টেলিকম খাত সমাজকে আমূল পরিবর্তন করেছে। নিয়ন্ত্রক, নীতিনির্ধারক, সরকার ও বেসরকারি খাতের অভূতপূর্ব সহযোগিতার ফলেই আজ আমরা এমন নেটওয়ার্ক তৈরি করেছি যা প্রতি ব্যবহারকারীর ২৫-২৮ জিবি ডেটা নির্বিঘ্নে বহন করতে পারে। মাত্র দেড় বছরে বিশাল ৫জি নেটওয়ার্ক চালু করাও এক অনন্য দৃষ্টান্ত। তবে আজকের সবচেয়ে বড় উদ্বেগ হলো ডিজিটাল ট্রাস্ট ও সুরক্ষা, বিশেষত বৃহৎ পরিসরে ডিজিটাল প্রতারণার ঘটনা। সরকার ও নিয়ন্ত্রকের সহায়তায় টেলিকম নেটওয়ার্কগুলি নিয়ম ও উদ্ভাবনী সমাধান তৈরি করছে, তবে বৃহত্তর ডিজিটাল ইকোসিস্টেমকেও এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এগিয়ে আসতে হবে।”

Advertisements

COAI-এর ডিরেক্টর জেনারেল লেফটেন্যান্ট জেনারেল ড. এস.পি. কোচর বলেন, “COAI Dialogues হলো এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম যা আমাদের DigiCom Summit-এর অভিজ্ঞতার ওপর দাঁড়িয়ে তৈরি। এখানে ক্রস-সেক্টরাল চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা হয় এবং ভবিষ্যতের ভারতীয় টেলিকম শিল্পকে টেকসই প্রবৃদ্ধি ও উদ্ভাবনের পথে নিয়ে যাওয়ার রূপরেখা তৈরি হয়।”

আলোচনার মূল বিষয়গুলি কী 

এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন প্রায় ২০০-রও বেশি প্রযুক্তি সিদ্ধান্তগ্রহণকারী, নীতি প্রভাবশালী এবং শিল্পনেতা। একাধিক কীনোট বক্তব্য ও প্যানেল আলোচনার মাধ্যমে তাঁরা ভারতের ডিজিটাল অগ্রযাত্রার জন্য বাস্তবসম্মত কৌশল প্রস্তাব করেন।

আলোচনার মূল বিষয়গুলির মধ্যে ছিল—পরবর্তী প্রজন্মের প্রযুক্তির আগাম অর্থনৈতিক ব্যবহার (যেমন 6G, AI, IoT), SDG (সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোলস) অর্জনে টেলিকমের ভূমিকা, অবহেলিত অঞ্চল ও জনগোষ্ঠীকে সংযুক্ত করা, স্প্যাম/প্রতারক কল ও OTT অ্যাপসের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা।

উল্লেখ্য, সেলুলার অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়া (COAI) হলো ভারতের প্রধান টেলিকম পরিষেবা প্রদানকারী (TSPs) এবং টেলিকম সরঞ্জাম নির্মাতা সংস্থাগুলির প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন। দেশের টেলিকম ইকোসিস্টেমকে একত্রিত করার পাশাপাশি এটি নীতি নির্ধারণ, শিল্প সহযোগিতা এবং প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের একটি কেন্দ্রীয় প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করে।

COAI Dialogues 2025 শুধু একটি শিল্প সম্মেলন নয়, বরং ভারতের ডিজিটাল ভবিষ্যৎ নির্মাণের একটি যৌথ অঙ্গীকারের প্রতীক। নীতিগত সংস্কার থেকে শুরু করে প্রযুক্তির ব্যবহার, বিনিয়োগের সুযোগ থেকে আস্থা গড়ে তোলা— প্রতিটি ক্ষেত্রেই এই আলোচনার বার্তা পরিষ্কার: ভারত একটি শক্তিশালী, নিরাপদ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ডিজিটাল পরিকাঠামো গড়ে তুলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যা ২০৪৭ সালের মধ্যে ভিকসিত ভারত নির্মাণে মাইলফলক হবে।

Business: COAI Dialogues 2025 focused on strengthening India’s digital network for a ‘Viksit Bharat’ by 2047. The event, attended by TRAI and GSMA leaders, discussed policy reforms, spectrum issues, and the future of 6G and AI-enabled devices to ensure digital inclusion and trust.