কেন আপনার ৫জি ইন্টারনেট ধীরগতির? জানুন সমস্যা ও সমাধান

৫জি (5G Internet) প্রযুক্তি বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেট সংযোগে বিপ্লব আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। দ্রুতগতির ডাউনলোড, নিরবচ্ছিন্ন স্ট্রিমিং এবং কম লেটেন্সির প্রতিশ্রুতি নিয়ে ৫জি ভারতে, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গে,…

Why Your 5G Internet Is Slow

৫জি (5G Internet) প্রযুক্তি বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেট সংযোগে বিপ্লব আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। দ্রুতগতির ডাউনলোড, নিরবচ্ছিন্ন স্ট্রিমিং এবং কম লেটেন্সির প্রতিশ্রুতি নিয়ে ৫জি ভারতে, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গে, ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়েছে। তবে, অনেক ব্যবহারকারী অভিযোগ করছেন যে তাদের ৫জি সংযোগ প্রত্যাশিত গতির তুলনায় অনেক ধীর। এমনকি কলকাতার মতো শহরাঞ্চলেও, যেখানে ৫জি নেটওয়ার্ক ব্যাপকভাবে প্রসারিত হয়েছে, ব্যবহারকারীরা প্রায়ই হতাশ হচ্ছেন। কিন্তু কেন এই সমস্যা? এই প্রতিবেদনে আমরা ৫জি ইন্টারনেটের ধীরগতির পিছনের কারণ এবং সমাধানের উপায় নিয়ে আলোচনা করব।

৫জি ইন্টারনেট ধীরগতির প্রধান কারণ
১. নেটওয়ার্ক কনজেশন: ৫জি নেটওয়ার্কে ধীরগতির অন্যতম প্রধান কারণ হল নেটওয়ার্ক কনজেশন। যখন একটি নির্দিষ্ট সেল টাওয়ারে অনেক ব্যবহারকারী একসঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে, তখন উপলব্ধ ব্যান্ডউইথ ভাগ হয়ে যায়, ফলে গতি কমে যায়। উদাহরণস্বরূপ, কলকাতার মতো ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায়, বিশেষ করে সন্ধ্যা বা ছুটির দিনে, যখন অনেকে ভিডিও স্ট্রিমিং বা অনলাইন গেমিংয়ে ব্যস্ত থাকেন, তখন নেটওয়ার্কের চাপ বাড়ে। এই সমস্যা এড়াতে, ব্যবহারকারীরা পিক আওয়ারের বাইরে ডেটা-নিবিড় কাজ করার চেষ্টা করতে পারেন।

   

২. সিগন্যাল বাধা: ৫জি উচ্চ-ফ্রিকোয়েন্সি মিলিমিটার ওয়েভ (mmWave) এবং মিড-ব্যান্ড ফ্রিকোয়েন্সির উপর নির্ভর করে। এই ফ্রিকোয়েন্সিগুলি দ্রুত ডেটা স্থানান্তর করতে পারে, তবে এগুলি দেয়াল, গাছ, বা বিল্ডিংয়ের মতো শারীরিক বাধা দ্বারা সহজেই বাধাগ্রস্ত হয়। এমনকি বৃষ্টি বা আর্দ্র আবহাওয়াও সিগন্যালের গুণমানকে প্রভাবিত করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, কলকাতার উঁচু ভবন বা ঘন গাছপালাযুক্ত এলাকায়  ৫জি উচ্চ-ফ্রিকোয়েন্সি মিলিমিটার ওয়েভ (mmWave) এবং মিড-ব্যান্ড ফ্রিকোয়েন্সির উপর নির্ভর করে, যা দ্রুত ডেটা স্থানান্তর করতে পারে কিন্তু দেয়াল, গাছ বা বিল্ডিংয়ের মতো শারীরিক বাধা দ্বারা সহজেই বাধাগ্রস্ত হয়। এমনকি বৃষ্টি বা আর্দ্র আবহাওয়াও সিগন্যালের গুণমানকে প্রভাবিত করতে পারে। কলকাতার উঁচু ভবন বা ঘন গাছপালাযুক্ত এলাকায় এই সমস্যা প্রকট হয়। এই সমস্যা কমাতে, ব্যবহারকারীরা সিগন্যাল বুস্টার ব্যবহার করতে পারেন, যা দুর্বল সিগন্যালকে শক্তিশালী করে গতি উন্নত করতে সাহায্য করে।

৩. অপর্যাপ্ত অবকাঠামো: ভারতে ৫জি নেটওয়ার্কের প্রসার এখনও চলছে, এবং অনেক এলাকায় পর্যাপ্ত সেল টাওয়ার নেই। ৫জি-এর জন্য ঘনবিন্যস্ত ছোট ছোট সেল প্রয়োজন, কারণ উচ্চ-ফ্রিকোয়েন্সি সিগন্যালের পরিসর কম। পশ্চিমবঙ্গের কিছু গ্রামীণ এলাকায় বা শহরের প্রান্তিক অঞ্চলে ৫জি অবকাঠামো এখনও সম্পূর্ণভাবে গড়ে ওঠেনি, যা ধীরগতির কারণ হতে পারে।

৪. ডিভাইস সামঞ্জস্যতা: সব ডিভাইস ৫জি-এর সম্পূর্ণ ক্ষমতা সমর্থন করে না। পুরানো বা বাজেট-বান্ধব স্মার্টফোনগুলি শুধুমাত্র লো-ব্যান্ড ৫জি সমর্থন করতে পারে, যা মিড-ব্যান্ড বা mmWave-এর তুলনায় ধীরগতির। উদাহরণস্বরূপ, একটি হাই-এন্ড স্মার্টফোন যেমন স্যামসাং গ্যালাক্সি এস২৩ বা অ্যাপল আইফোন ১৪, যা mmWave সমর্থন করে, অনেক সময় বাজেট ডিভাইসের তুলনায় ভালো পারফরম্যান্স দেয়। তাই, ৫জি-সামঞ্জস্যপূর্ণ ডিভাইস কেনার সময় এর ব্যান্ড সামঞ্জস্যতা পরীক্ষা করা গুরুত্বপূর্ণ।

৫. রাউটার সমস্যা: হোম ইন্টারনেটের জন্য ৫জি ব্যবহার করলে, রাউটারের গুণমান এবং স্থান সিগন্যালের উপর প্রভাব ফেলে। পুরানো বা নিম্নমানের রাউটার ৫জি-এর উচ্চ গতি এবং কম লেটেন্সি পরিচালনা করতে ব্যর্থ হতে পারে। এছাড়া, রাউটারের ভুল স্থান নির্বাচন, যেমন দেয়াল বা ধাতব বস্তুর কাছে রাখা, সিগন্যালের গুণমান হ্রাস করতে পারে।

৬. ক্যারিয়ার থ্রটলিং: কিছু নেটওয়ার্ক প্রোভাইডার নির্দিষ্ট ডেটা সীমা অতিক্রম করার পর গতি কমিয়ে দেয়, যা ৫জি-এর প্রতিশ্রুত গতিকে প্রভাবিত করে। এই থ্রটলিং সাধারণত “আনলিমিটেড” প্ল্যানের ক্ষেত্রেও ঘটতে পারে, তাই আপনার প্ল্যানের শর্তাবলী পরীক্ষা করা জরুরি।

৫জি গতি উন্নত করার ব্যবহারিক উপায়
১. সঠিক ডিভাইস নির্বাচন: ৫জি-সামঞ্জস্যপূর্ণ ডিভাইস কেনার সময়, নিশ্চিত করুন যে এটি লো-ব্যান্ড এবং mmWave উভয়ই সমর্থন করে। নিয়মিত সফটওয়্যার আপডেট করুন, কারণ এটি সংযোগ এবং পারফরম্যান্স উন্নত করতে পারে।

Advertisements

২. কভারেজ ম্যাপ পরীক্ষা: আপনার এলাকায় ৫জি কভারেজ আছে কিনা তা জানতে ক্যারিয়ারের কভারেজ ম্যাপ পরীক্ষা করুন। এমনকি ৫জি উপলব্ধ থাকলেও, নির্দিষ্ট স্থানে অবকাঠামোর অগ্রগতির উপর নির্ভর করে কভারেজ পরিবর্তিত হতে পারে।

৩. সিগন্যাল বুস্টার: দুর্বল সিগন্যাল এলাকায়, ৫জি সিগন্যাল বুস্টার ব্যবহার গতি এবং কভারেজ উন্নত করতে পারে। এই ডিভাইসগুলি সিগন্যালকে শক্তিশালী করে এবং সহজ ইনস্টলেশনের মাধ্যমে ব্যবহার করা যায়।

৪. রাউটারের সঠিক স্থান নির্বাচন: ৫জি রাউটার বা মডেম বাড়ির কেন্দ্রীয় স্থানে, উঁচুতে এবং বাধা থেকে দূরে রাখুন। জানালার কাছে রাখলে সিগন্যাল আরও ভালো হতে পারে। এছাড়া, মাইক্রোওয়েভ বা কর্ডলেস ফোনের মতো ইলেকট্রনিক ডিভাইস থেকে দূরে রাখুন, কারণ এগুলি সিগন্যালে হস্তক্ষেপ করতে পারে।

৫. ডিভাইস সেটিংস অপটিমাইজেশন: স্মার্টফোন বা ট্যাবলেটে নেটওয়ার্ক সেটিংস পরীক্ষা করে নিশ্চিত করুন যে ৫জি সক্ষম আছে এবং ডিভাইসটি সেরা উপলব্ধ নেটওয়ার্কের সাথে সংযুক্ত। ব্যাটারি-সেভিং মোড বন্ধ করুন, কারণ এটি নেটওয়ার্ক পারফরম্যান্সের উপর প্রভাব ফেলতে পারে।

৬. ব্যান্ডউইথ-নিবিড় কার্যক্রম সীমিত করা: পিক আওয়ারে ভিডিও স্ট্রিমিং বা বড় ফাইল ডাউনলোডের মতো ব্যান্ডউইথ-নিবিড় কার্যক্রম এড়িয়ে চলুন। এটি নেটওয়ার্ক কনজেশন কমাতে সাহায্য করে।

৭. প্রোভাইডারের সাথে যোগাযোগ: যদি গতি ধারাবাহিকভাবে ধীর হয়, তবে আপনার নেটওয়ার্ক প্রোভাইডারের সাথে যোগাযোগ করুন। তারা নেটওয়ার্ক কনজেশন বা অবকাঠামো সমস্যা সমাধানের জন্য সহায়তা প্রদান করতে পারে।

৫জি প্রযুক্তি দ্রুতগতির ইন্টারনেটের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তবে নেটওয়ার্ক কনজেশন, সিগন্যাল বাধা, অপর্যাপ্ত অবকাঠামো, ডিভাইস সামঞ্জস্যতা, এবং ক্যারিয়ার থ্রটলিংয়ের মতো বিভিন্ন কারণে এর গতি প্রায়ই প্রত্যাশিত মাত্রায় পৌঁছায় না। উপরে উল্লিখিত ব্যবহারিক পদক্ষেপগুলি গ্রহণ করে ব্যবহারকারীরা তাদের ৫জি সংযোগের গতি উন্নত করতে পারেন। পশ্চিমবঙ্গে, যেখানে ৫জি নেটওয়ার্ক দ্রুত প্রসারিত হচ্ছে, এই সমাধানগুলি ব্যবহারকারীদের নিরবচ্ছিন্ন এবং দ্রুত ইন্টারনেট অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে।