WhatsApp ব্যবহারকারীরা সাবদান! লিঙ্কে ক্লিক না করলেও হ্যাক হচ্ছে ফোন

হোয়াটসঅ্যাপ (WhatsApp) ব্যবহারকারীদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কারণ বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি হোয়াটসঅ্যাপ ইউজার নজরদারির শিকার হতে পারেন। সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুযায়ী, ইতালি সহ অন্তত ২৪টি…

WhatsApp Account Hack

হোয়াটসঅ্যাপ (WhatsApp) ব্যবহারকারীদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কারণ বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি হোয়াটসঅ্যাপ ইউজার নজরদারির শিকার হতে পারেন। সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুযায়ী, ইতালি সহ অন্তত ২৪টি দেশে হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীদের ওপর একটি স্পাইওয়্যার হামলা হয়েছে। ইতালিতে কমপক্ষে সাতটি কেস নিশ্চিত হওয়ার পর দেশটির সরকার এই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।

প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, এই স্পাইওয়্যারটি ইসরায়েলি নজরদারি সংস্থা Paragon Solutions দ্বারা তৈরি, যা মূলত সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী এবং সিভিল সোসাইটির সদস্যদের লক্ষ্যবস্তু করেছে। সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো, এই স্পাইওয়্যারটি “জিরো-ক্লিক” হ্যাকিং প্রযুক্তির মাধ্যমে পরিচালিত হয়েছে, যার জন্য ব্যবহারকারীদের কোনো লিঙ্কে ক্লিক করার প্রয়োজন পড়ে না। অর্থাৎ, ব্যবহারকারী কোনো ধরনের অ্যাকশন না নিলেও তাদের ফোন হ্যাক হয়ে যেতে পারে।

   

Paragon-এর তৈরি স্পাইওয়্যার সাধারণত সরকারি সংস্থাগুলোর কাছে বিক্রি করা হয়, যা অপরাধ দমন এবং জাতীয় নিরাপত্তা সুরক্ষার জন্য ব্যবহৃত হয়। তবে হোয়াটসঅ্যাপ স্বীকার করেছে যে, স্পাইওয়্যার দ্বারা আক্রান্ত ব্যবহারকারীদের ফোন হ্যাক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। WhatsApp-এর একজন কর্মকর্তা Reuters-কে জানিয়েছেন যে, প্রায় ৯০ জন ব্যবহারকারীকে লক্ষ্য করে হ্যাকিংয়ের চেষ্টা চালানো হয়েছে।

“জিরো-ক্লিক” হ্যাকিং কীভাবে কাজ করে?

Paragon-এর তৈরি স্পাইওয়্যার “জিরো-ক্লিক” হ্যাকিং পদ্ধতি ব্যবহার করে, যার ফলে ব্যবহারকারীদের কোনো ক্ষতিকারক লিঙ্কে ক্লিক করার প্রয়োজন হয় না। এই হ্যাকিং পদ্ধতিতে, হ্যাকাররা টার্গেটের ডিভাইসে দূর থেকে প্রবেশ করতে পারে এবং ফোনের সমস্ত ডাটা হাতিয়ে নিতে পারে। সাইবার বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এই ধরনের হ্যাকিং অত্যন্ত বিপজ্জনক, কারণ ব্যবহারকারীরা বুঝতেই পারেন না যে তারা স্পাইওয়্যারের শিকার হয়েছেন।

Reuters-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, হোয়াটসঅ্যাপ (WhatsApp)-এর কর্মকর্তারা নির্দিষ্টভাবে জানাননি কারা টার্গেট হয়েছেন। তবে, রিপোর্ট থেকে জানা গেছে যে, ইউরোপসহ বিশ্বের অন্তত ২৪টি দেশে সাংবাদিক ও সিভিল সোসাইটির সদস্যদের এই স্পাইওয়্যার দ্বারা নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে। The Guardian-এর প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে যে, প্রধানত সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী এবং রাজনৈতিক বিরোধীদের ফোন হ্যাক করা হয়েছে।

WhatsApp হ্যাকিং প্রতিরোধে উদ্যোগ নিয়েছে

হোয়াটসঅ্যাপ জানিয়েছে যে, তারা এই হ্যাকিং প্রচেষ্টা ব্যর্থ করতে সক্ষম হয়েছে এবং এই বিষয়ে কানাডার Citizen Lab সংস্থার সঙ্গে তথ্য ভাগাভাগি করেছে। যদিও সংস্থার কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেনি যে কীভাবে তারা Paragon-এর জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছে, তবে তারা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকেও বিষয়টি জানিয়েছে।

Citizen Lab-এর গবেষক John Scott-Railton বলেছেন, “হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীদের ওপর Paragon-এর স্পাইওয়্যার হ্যাকিংয়ের ঘটনা প্রমাণ করে যে এই ধরনের নজরদারি সফটওয়্যার ক্রমাগত বিস্তার লাভ করছে এবং এটি কতটা বিপজ্জনক হয়ে উঠছে।”

Paragon-এর মতো স্পাইওয়্যার নির্মাতারা দাবি করে যে, তারা শুধুমাত্র সরকারি সংস্থাগুলোর কাছে তাদের নজরদারি সফটওয়্যার বিক্রি করে এবং এটি অপরাধ দমন ও জাতীয় নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে, বাস্তবতা বলছে, এই ধরনের স্পাইওয়্যার সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী, বিরোধী রাজনৈতিক নেতা এমনকি মার্কিন সরকারের অন্তত ৫০ জন কর্মকর্তার ফোনেও পাওয়া গেছে। এই পরিস্থিতি প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি করেছে এবং অনিয়ন্ত্রিত স্পাইওয়্যার ব্যবসার ফলে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা নিয়ে বড় ধরনের প্রশ্ন উঠেছে।

বর্তমানে, হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীদের নিরাপদ থাকতে অজানা নম্বর থেকে আসা কল বা মেসেজ এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া, ডিভাইসের সফটওয়্যার আপডেট রাখা এবং সন্দেহজনক লিঙ্ক বা অ্যাপ্লিকেশন থেকে দূরে থাকাও গুরুত্বপূর্ণ।