এতদিন পণ্যবাহী গাড়ি চালানোর জন্য ভারী যানবাহনের লাইসেন্স থাকা আবশ্যক ছিল। কিন্তু এখন তা আর দরকার নেই। বুধবার দেশের গাড়ি চালকদের স্বস্তি দিয়ে একথা জানাল সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court)। তবে রাখা হয়েছে শর্ত। এদিন শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ জানিয়েছে, পণ্য বোঝাই না থাকা অবস্থায় ওই গাড়ির ওজন সাড়ে সাত হাজার কেজির কম হতে হবে। তবেই এই নিয়ম বৈধ হবে। অন্যথায় এটি খাটবে না।
বিচারপতি চন্দ্রচূড়, বিচারপতি হৃষীকেশ রায়, বিচারপতি পিএস নরসিংহ, বিচারপতি পঙ্কজ মিত্তল এবং বিচারপতি মনোজ মিশ্রর বেঞ্চে এই মামলাটির শুনানি চলছিল। সেখানে মাঝারি মাপের ট্রাকও এর আওতায় পড়বে বলে জানানো হয়। এর আগে এলএমভি লাইসেন্সধারী ব্যক্তি পণ্যবাহী গাড়ি চালানোর সময় দুর্ঘটনায় মৃত্যু বা আহত হলে বীমা সরবরাহকারী সংস্থার পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণ দিতে অস্বীকার করা হত। লাইসেন্সে অস্পষ্টতার কারণে এমনটা ঘটত। কিন্তু এখন এই সমস্যার সমাধান করা গিয়েছে বলেই মত বিশেষজ্ঞদের।
সুপ্রিম কোর্টের (Supreme Court) প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বে গঠিত একটি বেঞ্চ নতুন রায়ে বলেছে, যাদের লাইট মোটর ভেহিকেল (এলএমভি) বিভাগের ড্রাইভিং লাইসেন্স রয়েছে, তাঁরা এখন থেকে ৭,৫০০ কেজির কম ওজন বিশিষ্ট পণ্যবাহী যান চালনা করতে পারবেন। এর জন্য নতুন করে ট্রান্সপোর্ট ভেহিকেল লাইসেন্সের প্রয়োজন হবে না।
এই বেঞ্চে ছিলেন প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়, বিচারপতি হৃষিকেশ রায়, পি এস নারাসিমহা, পঙ্কজ মিথাল এবং মনোজ মিশ্র। বেঞ্চের সর্বসম্মত রায়ে বলা হয়েছে, “সেকশন ১০(২)(ডি) এর অধীনে লাইট মোটর ভেহিকেলের লাইসেন্সধারীরা ট্রান্সপোর্ট ভেহিকেল চালানোর জন্য সেকশন ১০(২)(ই) এর অধীনে বিশেষ অনুমোদনের প্রয়োজন নেই।”
এতে বীমা দাবি করতে সুবিধা হবে
এই রায়ের ফলে বীমা কোম্পানিগুলি আর প্রযুক্তিগত বিরোধ দেখিয়ে বীমা দাবিতে অসুবিধা সৃষ্টি করতে পারবে না। বিশেষ করে, ৭,৫০০ কেজির নিচে ওজন বিশিষ্ট ইন্সুরেন্স রয়েছে এমন যানবাহনের জন্য এই সুবিধা কার্যকরী হবে।
সুপ্রিম কোর্টের (Supreme Court) রায়ে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, আজকের আধুনিক যুগে যেখানে স্বয়ংক্রিয় বা চালকবিহীন যান এখন আর শুধুই বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী নয় এবং অ্যাপ-ভিত্তিক যাত্রী পরিষেবা ক্রমশ বাড়ছে, সেখানে লাইসেন্সিং ব্যবস্থা স্থির থাকতে পারে না। বিচারপতিরা বলছেন, “ভারতের সংসদ যদি সঠিক সময়ে এমভি আইনের সংশোধন করত এবং লাইসেন্সের বিভিন্ন শ্রেণি ও ধরণ স্পষ্টভাবে আলাদা করত, তাহলে আজকের এই অস্পষ্টতা ও আইনি জটিলতা রোধ করা যেত।”
২৫ বছরের বিচারিক অসঙ্গতি
১২৬ পাতার এই রায়টি লেখেন বিচারপতি হৃষিকেশ রায়। তিনি আরও বলেন, “২৫ বছর ধরে এমভি আইনে লাইসেন্সিং সংক্রান্ত বিভ্রান্তি ও বৈষম্যের কারণে অসংখ্য আইনি লড়াই দেখা গিয়েছে। যা সমাধানের প্রয়োজনীয়তা ছিল।” এই গুরুত্বপূর্ণ রায়টি দেশের লাইসেন্সিং ব্যবস্থায় একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হিসেবে দেখা হচ্ছে, যা চালকদের এবং বীমা দাবিদারদের জন্য উপকার বয়ে আনবে বলেই মত বিশেষজ্ঞদের।