ভারতে Starlink-এর নিরাপত্তা পরীক্ষায় সাফল্য, কবে মিলবে হাই-স্পিড স্যাটেলাইট ইন্টারনেট?

Elon Musk’s Starlink Passes Security Tests in India

ভারতে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হতে চলেছে এলন মাস্ক-এর (Elon Musk) স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সার্ভিস স্টারলিংক (Starlink)। রিপোর্ট অনুযায়ী, স্পেসএক্সের এই ইন্টারনেট ভেঞ্চার ইতিমধ্যেই ভারতে নিরাপত্তা পরীক্ষা (Security Testing) শুরু করেছে, যা তাদের বাণিজ্যিক ব্রডব্যান্ড সার্ভিস চালুর আগে চূড়ান্ত ধাপগুলির একটি। যদি সবকিছু পরিকল্পনা অনুযায়ী এগোয় এবং সরকার দ্রুত অনুমোদন দেয়, তাহলে ২০২৬ সালের মধ্যেই ভারতীয় পরিবারগুলির ঘরে পৌঁছে যাবে হাই-স্পিড স্যাটেলাইট ইন্টারনেট। ইকনমিক টাইমস-এ প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, স্টারলিংক বর্তমানে তার জেনারেশন ১ স্যাটেলাইট কনস্টেলেশন ব্যবহার করে ৬০০ গিগাবিট প্রতি সেকেন্ড ব্যান্ডউইথের আবেদন করেছে এবং পরীক্ষার জন্য অস্থায়ীভাবে স্পেকট্রাম বরাদ্দও পেয়েছে।

Advertisements

Starlink: ভারতে নিরাপত্তা পরীক্ষার নতুন অধ্যায় শুরু

স্টারলিংক ইতিমধ্যেই এমন একাধিক নিরাপত্তা মূল্যায়ন শুরু করেছে, যা ভারতে প্রবেশ করতে ইচ্ছুক যেকোনও বিদেশি বা দেশীয় টেলিকম অপারেটরের জন্য বাধ্যতামূলক ধাপ। এই পরীক্ষা হলো সরকারের অনুমোদন প্রক্রিয়ার গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা কোনো সংস্থাকে ভারতীয় আকাশপথে ডেটা ট্রান্সমিশনের আগে সম্পন্ন করতে হয়। ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে জানা গিয়েছে, টেলিকম রেগুলেটরি অথরিটি অফ ইন্ডিয়া (TRAI) যখন স্যাটেলাইট সার্ভিসের জন্য প্রাইসিং গাইডলাইন চূড়ান্ত করবে — যা এই বছরের শেষের দিকে হওয়ার সম্ভাবনা — তখন স্টারলিংক মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই বাণিজ্যিকভাবে পরিষেবা শুরু করতে পারবে। সংক্ষেপে বলা যায়, ২০২৬ সালের লঞ্চের কাউন্টডাউন ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে।

ভারতের স্যাটেলাইট ব্রডব্যান্ড বাজার বর্তমানে দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং স্পেসএক্সের পুনরাগমন এতে আরও গতি আনতে চলেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যখন বেসরকারি সংস্থাগুলির জন্য ভারতের মহাকাশ অর্থনীতি উন্মুক্ত করেন, তখন থেকেই একাধিক সংস্থা গ্রামীণ অঞ্চলে ফাইবার নেটওয়ার্ক ও মোবাইল কানেক্টিভিটির সীমাবদ্ধতা কাটানোর জন্য এগিয়ে আসে। স্টারলিংকের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে রয়েছে রিলায়েন্স জিও-র স্পেস ফাইবার ও ইউটেলস্যাটের ওয়ানওয়েব (OneWeb), কিন্তু মাস্কের সংস্থা স্পষ্টতই আরও বড় পরিসরে প্রভাব বিস্তার করতে চায়। সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, স্পেসএক্স ভারতে অন্তত ১০টি স্যাটেলাইট গেটওয়ে তৈরি করার পরিকল্পনা নিয়েছে, যা প্রতিদ্বন্দ্বী সংস্থাগুলির পরিকল্পনার তুলনায় প্রায় তিনগুণ বেশি। সম্ভাব্য শহরগুলির মধ্যে রয়েছে মুম্বাই, নয়ডা, চণ্ডীগড়, কলকাতা ও লখনউ।

মুম্বাইয়ে হবে স্টারলিংকের লঞ্চ হাব

স্টারলিংকের ভারতীয় যাত্রার সূচনা ঘটছে মুম্বাই থেকেই। স্পেসএক্স ইতিমধ্যেই শহরে তিনটি গ্রাউন্ড স্টেশন নির্মাণ সম্পন্ন করেছে, যা কোম্পানির স্থানীয় কমান্ড সেন্টার হিসেবে ব্যবহৃত হবে। সরকারি কর্মকর্তারা শীঘ্রই এই সাইটগুলির পরিদর্শনে যাবেন বলে জানা গিয়েছে। মিডিয়া রিপোর্ট অনুসারে, নির্মাণকাজ দ্রুত গতিতে চলছে এবং সবুজ সংকেত মিললেই স্টারলিংক গোটা উপমহাদেশে সিগন্যাল ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হবে।

Also Read: iPhone 17-এর সঙ্গে তুলনার আসনে Pixel 10 Pro XL ও Vivo V60, লড়াইয়ে কোনটি এগিয়ে?

Advertisements

স্টারলিংকের সবচেয়ে বড় লক্ষ্য কর্পোরেট নয়, বরং সাধারণ রিটেল গ্রাহকরা। সংস্থাটি ভারতের কম কানেক্টিভিটি বিশিষ্ট গ্রামীণ ঘরবাড়িকে মূলত টার্গেট করছে। একজন অভ্যন্তরীণ সূত্র জানিয়েছে, “স্টারলিংকের লো-অরবিট স্যাটেলাইটগুলির নেটওয়ার্ক লক্ষ লক্ষ মানুষের ইন্টারনেট ব্যবহারের চিত্রই বদলে দেবে।” পাশাপাশি শহুরে উচ্চবিত্ত ও গ্যাজেটপ্রেমী ব্যবহারকারীদের আকর্ষণ করতেও কোম্পানি তাদের প্রযুক্তি ও ব্র্যান্ড ইমেজ ব্যবহার করছে।

যদি সবকিছু সফল হয়, তাহলে এটি হবে স্পেসএক্সের জন্য বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ইন্টারনেট বাজারে প্রবেশের সুযোগ এবং চীনের বাজারে নিষেধাজ্ঞার ঘাটতি পূরণে সাহায্য করবে। এটি এলন মাস্কের ভারতের দ্বিতীয় বড় পদক্ষেপ, কারণ এর আগে ২০২৫ সালের শুরুতে টেসলা তার প্রথম শোরুমের মাধ্যমে দেশে প্রবেশ করেছিল। সেই সময় মাস্ক প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি-র সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন, যা তাঁর ভারত-কেন্দ্রিক ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার ইঙ্গিত দেয়।

২০২৬ সালের শুরুতেই হতে পারে আনুষ্ঠানিক লঞ্চ

ভারতের টেলিকম মন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন, সরকারের লক্ষ্য নাগরিকদের জন্য স্থল, ফাইবার ও স্যাটেলাইট ভিত্তিক যোগাযোগের বিকল্প একসঙ্গে তৈরি করা। তাই স্পেসএক্সের মতো গ্লোবাল প্রোভাইডারদের জন্য এখন ভারত এক উন্মুক্ত ক্ষেত্র। সবকিছু ঠিক থাকলে, ২০২৬ সালের শুরুতেই স্টারলিংক (Starlink) ভারতে আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হবে, এবং সেই সঙ্গে মাস্কের বিশ্বব্যাপী স্যাটেলাইট ইন্টারনেট কাভারেজের স্বপ্ন আরও এক ধাপ বাস্তবায়নের দিকে এগোবে। এবার হয়তো সত্যিই বলা যাবে—ইন্টারনেট শুধু দ্রুতই নয়, দুর্দান্তও হবে।