স্লো ফোন? এই ৫ ট্রিক ব্যবহার করুন, পুরনো ফোন হবে নতুনের মতো দ্রুত!

Android Phone performance: আজকের দ্রুতগতির ডিজিটাল যুগে স্মার্টফোন আমাদের জীবনের অপরিহার্য সঙ্গী। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে অনেক অ্যান্ড্রয়েড ফোন ধীরগতির হয়ে পড়ে। অ্যাপ খুলতে দেরি,…

Android Phone performance:

Android Phone performance: আজকের দ্রুতগতির ডিজিটাল যুগে স্মার্টফোন আমাদের জীবনের অপরিহার্য সঙ্গী। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে অনেক অ্যান্ড্রয়েড ফোন ধীরগতির হয়ে পড়ে। অ্যাপ খুলতে দেরি, স্ক্রিন ফ্রিজ হওয়া, বা ফোন হ্যাং করা—এই সমস্যাগুলো ব্যবহারকারীদের জন্য বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। পুরনো ফোন ধীরগতির হওয়ার পেছনে অপ্রয়োজনীয় অ্যাপ, ক্যাশে মেমোরি, পুরনো সফটওয়্যার এবং স্টোরেজের অভাব প্রধান কারণ। তবে নতুন ফোন কেনার আগে কিছু সহজ ট্রিক ব্যবহার করে আপনার পুরনো ফোনকে নতুনের মতো দ্রুত করা সম্ভব। এই প্রতিবেদনে আমরা ৫টি কার্যকর ট্রিক নিয়ে আলোচনা করব, যা আপনার অ্যান্ড্রয়েড ফোনের গতি বাড়াতে সাহায্য করবে।

১. অপ্রয়োজনীয় অ্যাপ আনইনস্টল করুন এবং ব্লোটওয়্যার নিষ্ক্রিয় করুন
অ্যান্ড্রয়েড ফোনে প্রি-ইনস্টল করা ব্লোটওয়্যার এবং অব্যবহৃত অ্যাপ মেমোরি এবং প্রসেসরের উপর চাপ সৃষ্টি করে, যা ফোনের গতি কমায়। অনেক অ্যাপ পটভূমিতে চলতে থাকে এবং ব্যাটারি ও ডেটা খরচ করে।

   

কী করবেন?
• সেটিংসে ‘অ্যাপস’ অপশনে গিয়ে অব্যবহৃত অ্যাপগুলো আনইনস্টল করুন।
• প্রি-ইনস্টল করা ব্লোটওয়্যার, যেগুলো আনইনস্টল করা যায় না, সেগুলো ‘ডিসেবল’ করুন।
• ‘অ্যাপ ইনফো’-তে গিয়ে অপ্রয়োজনীয় অ্যাপের ‘ডেটা’ এবং ‘ক্যাশে’ মুছে ফেলুন।
• ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামের মতো ভারী অ্যাপের পরিবর্তে তাদের লাইট ভার্সন (যেমন Facebook Lite) ব্যবহার করুন।
এই পদক্ষেপগুলো ফোনের স্টোরেজ এবং প্রসেসিং লোড কমিয়ে গতি বাড়াবে।

২. ক্যাশে এবং জাঙ্ক ফাইল পরিষ্কার করুন
অ্যাপগুলো ব্যবহারের সময় ক্যাশে ফাইল তৈরি করে, যা সময়ের সাথে স্টোরেজ দখল করে এবং ফোনকে ধীর করে। একইভাবে, অস্থায়ী ফাইল, ডাউনলোড করা ছবি বা ভিডিও ফোনের মেমোরি পূর্ণ করে ফেলে।

কী করবেন?
• সেটিংসে ‘স্টোরেজ’ অপশনে গিয়ে ‘ক্যাশড ডেটা’ মুছে ফেলুন।
• ফাইল ম্যানেজার অ্যাপ ব্যবহার করে ডাউনলোড ফোল্ডার, অপ্রয়োজনীয় ছবি বা ভিডিও মুছুন।
• CCleaner বা Files by Google-এর মতো অ্যাপ ব্যবহার করে জাঙ্ক ফাইল পরিষ্কার করুন।
• নিয়মিত (প্রতি সপ্তাহে) ক্যাশে এবং জাঙ্ক ফাইল পরিষ্কার করার অভ্যাস গড়ুন।
এটি ফোনের স্টোরেজ মুক্ত করবে এবং অ্যাপগুলো দ্রুত কাজ করবে।

৩. ফোনের সফটওয়্যার আপডেট করুন
পুরনো সফটওয়্যার ফোনের পারফরম্যান্স কমিয়ে দেয়। নির্মাতারা নতুন সফটওয়্যার আপডেটে বাগ ফিক্স, পারফরম্যান্স উন্নতি এবং ব্যাটারি অপটিমাইজেশন যোগ করে।

কী করবেন?
• সেটিংসে ‘সিস্টেম’ বা ‘অ্যাবাউট ফোন’ অপশনে গিয়ে ‘সফটওয়্যার আপডেট’ চেক করুন।
• উপলব্ধ হলে সর্বশেষ অ্যান্ড্রয়েড ভার্সন বা সিকিউরিটি প্যাচ ইনস্টল করুন।
• অ্যাপগুলোর জন্য Google Play Store-এ গিয়ে ‘মাই অ্যাপস অ্যান্ড গেমস’ থেকে আপডেট করুন।
• আপডেট ইনস্টলের আগে ফোনের স্টোরেজ পর্যাপ্ত কিনা তা নিশ্চিত করুন।
আপডেট করা ফোন দ্রুত এবং নিরাপদভাবে কাজ করে।

Advertisements

৪. অ্যানিমেশন এবং ট্রানজিশন বন্ধ করুন
অ্যান্ড্রয়েড ফোনে অ্যানিমেশন (যেমন অ্যাপ খোলার সময় ট্রানজিশন) এবং ভিজুয়াল ইফেক্ট ফোনের প্রসেসরের উপর চাপ সৃষ্টি করে, বিশেষ করে পুরনো বা কম শক্তিশালী ফোনে। এগুলো বন্ধ করলে ফোনের গতি বাড়ে।

কী করবেন?
• সেটিংসে ‘অ্যাবাউট ফোন’-এ গিয়ে ‘বিল্ড নাম্বার’-এ ৭ বার ট্যাপ করে ‘ডেভেলপার অপশন’ চালু করুন।
• ‘ডেভেলপার অপশন’-এ গিয়ে ‘উইন্ডো অ্যানিমেশন স্কেল’, ‘ট্রানজিশন অ্যানিমেশন স্কেল’ এবং ‘অ্যানিমেটর ডিউরেশন স্কেল’ বন্ধ করুন বা ০.৫x-এ সেট করুন।
• এটি ফোনের ইন্টারফেসকে দ্রুত এবং মসৃণ করবে।
এই পরিবর্তন ফোনের প্রতিক্রিয়া সময় কমিয়ে নতুনের মতো অনুভূতি দেবে।

৫. ফোন রিসেট করুন বা অপটিমাইজেশন অ্যাপ ব্যবহার করুন
যদি উপরের পদক্ষেপগুলো কাজ না করে, তবে ফোনকে ফ্যাক্টরি রিসেট করা একটি কার্যকর সমাধান। এছাড়া, অপটিমাইজেশন অ্যাপ ব্যবহার করে ফোনের পারফরম্যান্স বাড়ানো যায়।

কী করবেন?
• ফ্যাক্টরি রিসেটের আগে গুরুত্বপূর্ণ ডেটা (ছবি, পরিচিতি, ফাইল) গুগল ড্রাইভ বা এসডি কার্ডে ব্যাকআপ করুন।
• সেটিংসে ‘সিস্টেম’ বা ‘ব্যাকআপ অ্যান্ড রিসেট’-এ গিয়ে ‘ফ্যাক্টরি ডেটা রিসেট’ করুন।
• ফোন রিসেটের পর শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় অ্যাপ ইনস্টল করুন।
• বিকল্পভাবে, Greenify বা SD Maid-এর মতো অপটিমাইজেশন অ্যাপ ব্যবহার করে পটভূমির অ্যাপ নিয়ন্ত্রণ করুন।
ফ্যাক্টরি রিসেট ফোনকে প্রায় নতুনের মতো দ্রুত করে, তবে এটি শেষ বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করুন।

অতিরিক্ত টিপস
• লাইটওয়েট লঞ্চার ব্যবহার করুন: ফোনের ডিফল্ট লঞ্চার ভারী হলে Nova Launcher বা Apex Launcher-এর মতো লাইটওয়েট লঞ্চার ইনস্টল করুন।
• স্টোরেজ খালি রাখুন: ফোনের স্টোরেজ ৮০% পূর্ণ হলে পারফরম্যান্স কমে। কমপক্ষে ২০% স্টোরেজ খালি রাখুন।
• অপ্রয়োজনীয় উইজেট বন্ধ করুন: হোম স্ক্রিনের উইজেটগুলো ব্যাটারি এবং প্রসেসর খরচ করে। শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় উইজেট রাখুন।
• ব্যাকগ্রাউন্ড অ্যাপ সীমিত করুন: সেটিংসে ‘ব্যাটারি’ অপশনে গিয়ে অ্যাডাপটিভ ব্যাটারি চালু করুন, যা অপ্রয়োজনীয় অ্যাপের কার্যক্রম বন্ধ করে।

আপনার পুরনো অ্যান্ড্রয়েড ফোন ধীরগতির হয়ে থাকলে নতুন ফোন কেনার আগে উপরের ৫টি ট্রিক ব্যবহার করে দেখুন। অপ্রয়োজনীয় অ্যাপ আনইনস্টল, ক্যাশে পরিষ্কার, সফটওয়্যার আপডেট, অ্যানিমেশন বন্ধ এবং ফ্যাক্টরি রিসেট—এই পদক্ষেপগুলো ফোনের পারফরম্যান্সে বড় পরিবর্তন আনতে পারে। এই ট্রিকগুলো নিয়মিত প্রয়োগ করলে আপনার ফোন শুধু দ্রুতই হবে না, ব্যাটারি লাইফও উন্নত হবে। তাছাড়া, লাইটওয়েট লঞ্চার এবং স্টোরেজ ম্যানেজমেন্টের মতো অতিরিক্ত টিপস ফোনের ব্যবহারকে আরও মসৃণ করবে। তাই, আজই এই ট্রিকগুলো প্রয়োগ করুন এবং আপনার পুরনো ফোনকে নতুনের মতো দ্রুত এবং দক্ষ করে তুলুন!