দাম কমিয়ে এবার দেশেই তৈরী হবে স্যামসাং এর ল্যাপটপ

দক্ষিণ কোরিয়ার ইলেকট্রনিক্স জায়ান্ট স্যামসাং(Samsung)ভারতের গ্রেটার নয়ডায় অবস্থিত তাদের কারখানায় ল্যাপটপ উৎপাদন শুরু করেছে। এই পদক্ষেপ স্যামসাং-এর ভারতে উৎপাদন পোর্টফোলিওর একটি উল্লেখযোগ্য সম্প্রসারণকে চিহ্নিত করেছে।…

Samsung laptop manufacturing

দক্ষিণ কোরিয়ার ইলেকট্রনিক্স জায়ান্ট স্যামসাং(Samsung)ভারতের গ্রেটার নয়ডায় অবস্থিত তাদের কারখানায় ল্যাপটপ উৎপাদন শুরু করেছে। এই পদক্ষেপ স্যামসাং-এর ভারতে উৎপাদন পোর্টফোলিওর একটি উল্লেখযোগ্য সম্প্রসারণকে চিহ্নিত করেছে।

এর আগে এই কারখানায় ফিচার ফোন, স্মার্টফোন, ওয়্যারেবল ডিভাইস এবং ট্যাবলেট উৎপাদন করা হতো। এই নতুন উদ্যোগ ভারতের ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ উদ্যোগের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং দেশের প্রযুক্তি উৎপাদন খাতে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

   

স্যামসাং ইলেকট্রনিক্সের মোবাইল এক্সপেরিয়েন্স (এমএক্স) বিজনেসের প্রেসিডেন্ট টি.এম. রোহ এই বছরের শুরুতে জানিয়েছিলেন যে, স্যামসাং ভারতে ল্যাপটপ উৎপাদনের প্রস্তুতি শুরু করেছে। তিনি বলেছিলেন, “নয়ডা স্যামসাং-এর জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উৎপাদন কেন্দ্র। এটি আমাদের দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎপাদন ঘাঁটি।

আমরা এই কারখানায় ল্যাপটপ উৎপাদন শুরু করতে যাচ্ছি, যা প্রাথমিকভাবে ভারতীয় বাজারের জন্য সরবরাহ করা হবে।” এই ঘোষণার পর থেকে স্যামসাং তাদের নয়ডা কারখানায় প্রায় ১০০-২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে এবং বছরে ৬০,০০০ থেকে ৭০,০০০ ল্যাপটপ উৎপাদনের ক্ষমতা তৈরি করেছে।

কেন্দ্রীয় ইলেকট্রনিক্স ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব স্যামসাং-এর এই উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেছেন, “স্যামসাং ভারতে তাদের উন্নত প্রযুক্তির ডিভাইস উৎপাদন সম্প্রসারণ করছে, যা ভারতের প্রতিভা ও উদ্ভাবনের দ্বারা চালিত। তাদের গবেষণা ইউনিটে ৭,০০০-এর বেশি প্রকৌশলী কাজ করছেন।”

তিনি স্যামসাং সাউথওয়েস্ট এশিয়ার প্রেসিডেন্ট ও সিইও জে.বি. পার্ক এবং কর্পোরেট ভাইস প্রেসিডেন্ট এস.পি. চুন-এর সঙ্গে বৈঠকের পর এই মন্তব্য করেন।

স্যামসাং ১৯৯৬ সালে নয়ডায় তাদের প্রথম ইলেকট্রনিক্স উৎপাদন কারখানা স্থাপন করে, যা ছিল ভারতে প্রথম বিশ্বব্যাপী ইলেকট্রনিক্স উৎপাদন ইউনিটগুলির একটি। বর্তমানে এই কারখানা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মোবাইল ফোন উৎপাদন কেন্দ্র এবং অ্যাপলের পরে ভারত থেকে মোবাইল ফোন রপ্তানিতে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে।

স্যামসাং ভারতে তাদের ফ্ল্যাগশিপ স্মার্টফোন গ্যালাক্সি জেড ফোল্ড৭ এবং জেড ফ্লিপ৭-এর মতো উচ্চমূল্যের ডিভাইস উৎপাদন করছে, যা ভারতীয় বাজারে বিক্রির পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী রপ্তানি করা হচ্ছে।

Advertisements

ভারত সরকারের ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ উদ্যোগ এবং আইটি হার্ডওয়্যারের জন্য প্রোডাকশন লিঙ্কড ইনসেনটিভ (পিএলআই) স্কিম এই উদ্যোগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ২০২৩ সালের আগস্টে ল্যাপটপ আমদানির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর স্যামসাং ভারতে ল্যাপটপ উৎপাদনের সিদ্ধান্ত নেয়।

সরকারের ১৭,০০০ কোটি টাকার পিএলআই স্কিম আইটি হার্ডওয়্যার উৎপাদনকে উৎসাহিত করছে, যার ফলে স্যামসাং-এর মতো বৈশ্বিক কোম্পানিগুলি ভারতে তাদের উৎপাদন ক্ষমতা সম্প্রসারণ করছে।

স্যামসাং-এর ল্যাপটপ উৎপাদন ভারতীয় বাজারে তাদের অবস্থান শক্তিশালী করার একটি কৌশলগত পদক্ষেপ। বর্তমানে স্যামসাং ভারতের স্মার্টফোন বাজারে মূল্য ও পরিমাণের দিক থেকে দ্বিতীয় বৃহত্তম খেলোয়াড়, এবং ট্যাবলেট পিসি সেগমেন্টে ১৫ শতাংশ বাজার শেয়ার নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে।

তবে, ল্যাপটপ সেগমেন্টে স্যামসাং এখনও এইচপি, লেনোভো, ডেল এবং অ্যাসুসের মতো ব্র্যান্ডের তুলনায় পিছিয়ে রয়েছে। স্যামসাং প্রধানত উচ্চমানের গ্যালাক্সি বুক সিরিজের ল্যাপটপ উৎপাদন করে, যা ভারতীয় বাজারে প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে বিক্রি করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এই উদ্যোগ ভারতের প্রযুক্তি খাতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখবে। নয়ডা এবং বেঙ্গালুরুতে স্যামসাং-এর গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্রগুলি গ্যালাক্সি এআই-এর মতো উদ্ভাবনী প্রযুক্তি বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে, যা স্যামসাং-এর সর্বশেষ ফ্ল্যাগশিপ স্মার্টফোন গ্যালাক্সি এস২৪ সিরিজে ব্যবহৃত হয়েছে।

‘একজোট হয়ে চোরেদের তাড়ান’ মঞ্চ থেকে দাবি লালুর

স্যামসাং-এর এই পদক্ষেপ ভারতের প্রযুক্তি উৎপাদন খাতে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। এটি শুধুমাত্র দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণ করবে না, বরং ভারতকে বিশ্বব্যাপী ইলেকট্রনিক্স উৎপাদনের একটি কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সহায়তা করবে।