স্যামসাং আবারও ওয়্যারেবল টেকনোলজির জগতে বিপ্লব ঘটিয়েছে। সংস্থা তাদের সর্বশেষ Samsung Galaxy Watch8-এ এনেছে একেবারে নতুন এবং ইন্ডাস্ট্রি-ফার্স্ট অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ইন্ডেক্স ট্র্যাকিং ফিচার, যা আগে পর্যন্ত কেবলমাত্র ল্যাবরেটরিতে সম্ভব ছিল। বহু বছরের গবেষণা ও উন্নয়নের (R&D) পর এই প্রযুক্তিকে সাধারণ ব্যবহারকারীর জন্য উপযোগী করে তুলতে সক্ষম হয়েছে কোম্পানি। এটি এমন এক ফিচার যা পুষ্টি-নির্ভর জীববৈজ্ঞানিক প্রভাবকে সরাসরি ট্র্যাক করতে সাহায্য করবে—যা এতদিন পর্যন্ত ফিটনেস ব্যান্ড বা স্মার্টওয়াচে পাওয়া যেত না।
Samsung Galaxy Watch8-এ আসছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ট্র্যাকিং ফিচার
স্যামসাং জানিয়েছে, এই ফিচারটি তৈরি করতে তাদের Samsung Medical Center-এ শতাধিক অংশগ্রহণকারীর উপর পরীক্ষা চালানো হয়েছে এবং CERT-স্টাইল ভ্যালিডেশন ট্রায়াল সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এর ফলে এটি এখন সাধারণ ব্যবহারকারীদের জন্য নির্ভরযোগ্য স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ প্রযুক্তি হিসেবে প্রমাণিত। এই সেন্সরটি মূলত মিনিয়েচারাইজড স্পেকট্রোস্কোপি সেন্সর প্রযুক্তির উপর ভিত্তি করে তৈরি, যা প্রচলিত রামান লেসার-এর পরিবর্তে মাল্টি-ওয়েভলেন্থ এলইডি ও কাস্টম ফোটোডাইড অ্যারে ব্যবহার করে। এর মাধ্যমে ত্বকের নিচে থাকা ক্যারোটিনয়েড ডেন্সিটি মাপা হয়—যা শরীরে ফল ও শাকসবজির গ্রহণের মান নির্দেশ করে এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট স্ট্যাটাসের একটি কার্যকর সূচক হিসেবে কাজ করে।
অন্যান্য স্বাস্থ্য ফিচারের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করে
স্যামসাংয়ের নতুন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ইন্ডেক্স ফিচারটি ব্যবহারকারীর পুষ্টিগত অবস্থা নির্ণয় করে, এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) সুপারিশ অনুযায়ী বিভিন্ন ক্যাটেগরিতে ভাগ করে ফলাফল প্রদর্শন করে। ফলে ব্যবহারকারী এক দিনের পরিবর্তে দীর্ঘমেয়াদি খাদ্যাভ্যাসের প্রভাব সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পান। সেন্সরটি হার্ডওয়্যার ভ্যারিয়েশন, হাতের অবস্থান এবং ত্বকের আলোক বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে মিলিয়ে ক্যালিব্রেশন স্বয়ংক্রিয়ভাবে সম্পন্ন করে। বিশেষভাবে ফিঙ্গারটিপে মাপ নেওয়ার কারণে এটি মেলানিন ইন্টারফেরেন্স ও হিমোগ্লোবিন স্ক্যাটারিং-এর প্রভাবও এড়াতে সক্ষম।
এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ডেটা শুধু পুষ্টি নয়, বরং গ্যালাক্সি ওয়াচ৮-এর অন্যান্য স্বাস্থ্য ফিচারের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করে, যেমন ঘুমের মান, রক্তপ্রবাহের চাপ, এবং দৈনন্দিন শারীরিক কার্যকলাপ। সব মিলিয়ে এটি ব্যবহারকারীর সার্বিক স্বাস্থ্য ও বার্ধক্য ঝুঁকি বিশ্লেষণের একটি পূর্ণাঙ্গ চিত্র তৈরি করে।
Also Read: ১৫ হাজারের কমে সেরা ৫টি বাজেট স্মার্টফোন, রইল খুঁটিনাটি
এই প্রকল্পের সূচনা হয়েছিল ২০১৮ সালে, যখন স্যামসাংয়ের ইঞ্জিনিয়াররা বুঝতে পারেন যে, শুধুমাত্র স্টেপ বা ক্যালরি ট্র্যাকিং নয়, বরং লাইফস্প্যান এক্সটেনশন বা দীর্ঘায়ু পর্যবেক্ষণ আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। পরবর্তী সাত বছরে তারা একাধিক প্রোটোটাইপ ডিভাইস তৈরি করেন—প্রথমে ক্লিনিক্যাল ইউনিট, তারপর কনজিউমার প্রোটোটাইপ এবং অবশেষে স্কিনকেয়ার গ্রেড মডেল, যা আজকের Samsung Galaxy Watch8-এ এসে পূর্ণতা পেয়েছে।
সিউল ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও স্যামসাং মেডিক্যাল সেন্টার-এর বিশেষজ্ঞরা গবেষণায় যুক্ত ছিলেন, যারা জানিয়েছেন যে অক্সিডেশান লোড ক্যানসার, হার্টের অসুখ এবং মেটাবলিক ডিজঅর্ডারের মতো রোগের অন্যতম কারণ। তাই স্যামসাংয়ের এই নতুন ফিচারটি শুধুমাত্র ব্যক্তিগত নয়, বরং জনস্বাস্থ্য পর্যায়ে প্রোঅ্যাকটিভ হেলথ মনিটরিং-এর নতুন অধ্যায় শুরু করতে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে এই প্রযুক্তিকে আরও উন্নত করে প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দিকে সম্প্রসারণ করার পরিকল্পনাও নিয়েছে সংস্থা।


