মোবাইলের ব্যাটারি দ্রুত শেষ হচ্ছে? এই ৭ সেটিংস বন্ধ করুন এখনই!

Phone Battery saving tips: আজকের ডিজিটাল যুগে স্মার্টফোন আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। যোগাযোগ, কাজ, বিনোদন থেকে শুরু করে দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনা—সবকিছুই এখন আমাদের…

Phone Battery saving tips

Phone Battery saving tips: আজকের ডিজিটাল যুগে স্মার্টফোন আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। যোগাযোগ, কাজ, বিনোদন থেকে শুরু করে দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনা—সবকিছুই এখন আমাদের ফোনের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু এই সুবিধার পাশাপাশি একটি বড় সমস্যা হলো মোবাইলের ব্যাটারি দ্রুত শেষ হয়ে যাওয়া। অনেক সময় দিনের মাঝখানে ফোনের চার্জ শেষ হয়ে যায়, যা আমাদের জন্য বিরক্তিকর এবং অসুবিধাজনক হয়ে ওঠে। আপনার অ্যান্ড্রয়েড ফোনের ব্যাটারি লাইফ বাড়ানোর জন্য কিছু সহজ সেটিংস পরিবর্তন করলেই অনেকাংশে সমস্যার সমাধান সম্ভব। এই প্রতিবেদনে আমরা এমন ৭টি সেটিংস নিয়ে আলোচনা করব, যেগুলো বন্ধ করলে আপনার ফোনের ব্যাটারি দীর্ঘস্থায়ী হবে।

১. স্ক্রিনের উজ্জ্বলতা কমান বা অটো-ব্রাইটনেস বন্ধ করুন
ফোনের স্ক্রিন ব্যাটারির সবচেয়ে বড় খরচকারী উপাদান। অ্যান্ড্রয়েড ফোনের স্ক্রিন যদি অতিরিক্ত উজ্জ্বল থাকে, তবে ব্যাটারি দ্রুত নিঃশেষ হয়। অনেকে অটো-ব্রাইটনেস ফিচার চালু রাখেন, যা পরিবেশের আলোর উপর ভিত্তি করে স্ক্রিনের উজ্জ্বলতা স্বয়ংক্রিয়ভাবে সামঞ্জস্য করে। কিন্তু এই ফিচারটি প্রায়ই প্রয়োজনের চেয়ে বেশি উজ্জ্বলতা সেট করে, যা ব্যাটারি খরচ বাড়ায়।

   

কী করবেন?
• সেটিংসে গিয়ে ‘ডিসপ্লে’ অপশনে অটো-ব্রাইটনেস বন্ধ করুন।
• ম্যানুয়ালি স্ক্রিনের উজ্জ্বলতা ৩০-৪০% এর নিচে রাখুন।
• অন্ধকার পরিবেশে ডার্ক মোড বা নাইট মোড ব্যবহার করুন, যা অ্যামোলেড স্ক্রিনে ব্যাটারি সাশ্রয় করে।

২. অপ্রয়োজনীয় লোকেশন সার্ভিস বন্ধ করুন
জিপিএস বা লোকেশন সার্ভিস ব্যাটারির একটি বড় অংশ খরচ করে। অনেক অ্যাপ, যেমন ম্যাপ, ওয়েদার, বা সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপ, পটভূমিতে লোকেশন ট্র্যাক করে, যা ব্যাটারি দ্রুত শেষ করে দেয়।

কী করবেন?
• সেটিংসে ‘লোকেশন’ অপশনে গিয়ে জিপিএস বন্ধ করুন বা ‘ব্যাটারি সেভিং মোড’-এ সেট করুন।
• অ্যাপ পারমিশন চেক করে শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় অ্যাপকে লোকেশন অ্যাক্সেস দিন।
• অ্যাপ সেটিংসে ‘লোকেশন অ্যাক্সেস’ বন্ধ করুন যখন অ্যাপটি ব্যবহার করছেন না।

৩. ব্লুটুথ এবং ওয়াই-ফাই স্ক্যানিং বন্ধ করুন
ব্লুটুথ এবং ওয়াই-ফাই স্ক্যানিং চালু থাকলে ফোন ক্রমাগত নিকটবর্তী ডিভাইস বা নেটওয়ার্ক খুঁজতে থাকে, যা ব্যাটারি খরচ বাড়ায়। এমনকি আপনি ব্লুটুথ বা ওয়াই-ফাই ব্যবহার না করলেও, পটভূমিতে স্ক্যানিং চলতে থাকে।

কী করবেন?
• প্রয়োজন না হলে সেটিংস থেকে ব্লুটুথ এবং ওয়াই-ফাই বন্ধ করুন।
• ওয়াই-ফাই সেটিংসে ‘স্ক্যান অলওয়েজ অ্যাভেলেবল’ বা ‘ওয়াই-ফাই স্ক্যানিং’ অপশনটি বন্ধ করুন।
• ব্লুটুথ স্ক্যানিং বন্ধ করতে ‘লোকেশন’ সেটিংসে গিয়ে ‘ইমপ্রুভ অ্যাকুরেসি’ অপশনটি নিষ্ক্রিয় করুন।

৪. পটভূমিতে অ্যাপ রিফ্রেশ বন্ধ করুন
অনেক অ্যান্ড্রয়েড ফোনে অ্যাপগুলো পটভূমিতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে রিফ্রেশ হয়, যেমন সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপগুলো নোটিফিকেশন আপডেটের জন্য ডেটা ব্যবহার করে। এই প্রক্রিয়া ব্যাটারি খরচের একটি বড় কারণ।

কী করবেন?
• সেটিংসে ‘অ্যাপস’ বা ‘ডেটা ইউসেজ’ অপশনে গিয়ে ‘ব্যাকগ্রাউন্ড ডেটা’ বন্ধ করুন।
• অপ্রয়োজনীয় অ্যাপের জন্য ‘ব্যাটারি অপটিমাইজেশন’ ফিচার চালু করুন।
• ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামের মতো অ্যাপের নোটিফিকেশন বন্ধ করে দিন।

Advertisements

৫. অলওয়েজ-অন ডিসপ্লে বা লাইভ ওয়ালপেপার বন্ধ করুন
অলওয়েজ-অন ডিসপ্লে (AOD) ফিচার ফোনের স্ক্রিন বন্ধ থাকলেও সময়, নোটিফিকেশন বা অন্যান্য তথ্য প্রদর্শন করে। এছাড়া, লাইভ ওয়ালপেপার বা অ্যানিমেটেড লক স্ক্রিন ব্যাটারি খরচ বাড়ায়।

কী করবেন?
• সেটিংসে ‘ডিসপ্লে’ বা ‘লক স্ক্রিন’ অপশনে গিয়ে অলওয়েজ-অন ডিসপ্লে বন্ধ করুন।
• স্ট্যাটিক ওয়ালপেপার ব্যবহার করুন এবং লাইভ ওয়ালপেপার এড়িয়ে চলুন।
• লক স্ক্রিন নোটিফিকেশন বন্ধ করে ব্যাটারি সাশ্রয় করুন।

৬. অপ্রয়োজনীয় নোটিফিকেশন এবং ভাইব্রেশন বন্ধ করুন
প্রতিটি নোটিফিকেশনের জন্য ফোনের স্ক্রিন জ্বলে ওঠে এবং ভাইব্রেশন হয়, যা ব্যাটারি খরচ করে। বিশেষ করে গ্রুপ চ্যাট বা সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপ থেকে আসা ঘন ঘন নোটিফিকেশন ব্যাটারির জন্য ক্ষতিকর।

কী করবেন?
• সেটিংসে ‘নোটিফিকেশন’ অপশনে গিয়ে অপ্রয়োজনীয় অ্যাপের নোটিফিকেশন বন্ধ করুন।
• ফোনের ভাইব্রেশন ফিচার নিষ্ক্রিয় করুন বা শুধুমাত্র কলের জন্য চালু রাখুন।
• ‘ডু নট ডিস্টার্ব’ মোড ব্যবহার করে নির্দিষ্ট সময়ে নোটিফিকেশন সীমিত করুন।

৭. অপ্রয়োজনীয় অ্যাপ আনইনস্টল করুন এবং পাওয়ার সেভিং মোড চালু করুন
অনেক অ্যান্ড্রয়েড ফোনে প্রি-ইনস্টল করা ব্লোটওয়্যার বা অপ্রয়োজনীয় অ্যাপ থাকে, যা পটভূমিতে চলতে থাকে এবং ব্যাটারি খরচ করে। এছাড়া, পাওয়ার সেভিং মোড ব্যবহার না করলে ফোনের পারফরম্যান্স অপ্রয়োজনীয়ভাবে ব্যাটারি খরচ করে।LINDA

কী করবেন?
• সেটিংসে ‘অ্যাপস’ অপশনে গিয়ে অব্যবহৃত বা প্রি-ইনস্টল করা অ্যাপ আনইনস্টল বা নিষ্ক্রিয় করুন।
• ‘ব্যাটারি’ সেটিংসে গিয়ে ‘পাওয়ার সেভিং মোড’ বা ‘আল্ট্রা পাওয়ার সেভিং মোড’ চালু করুন।
• অ্যাপ ক্যাশে নিয়মিত পরিষ্কার করুন এবং অপ্রয়োজনীয় ডেটা মুছে ফেলুন।

অতিরিক্ত টিপস
• অ্যাডাপটিভ ব্যাটারি চালু করুন: অ্যান্ড্রয়েডের অ্যাডাপটিভ ব্যাটারি ফিচার আপনার ব্যবহারের ধরণ বিশ্লেষণ করে অপ্রয়োজনীয় অ্যাপের পটভূমি কার্যক্রম সীমিত করে। সেটিংসে ‘ব্যাটারি’ অপশনে এটি চালু করুন।
• অ্যানিমেশন বন্ধ করুন: সেটিংসে ‘ডেভেলপার অপশন’ চালু করে উইন্ডো অ্যানিমেশন, ট্রানজিশন অ্যানিমেশন এবং অ্যানিমেটর ডিউরেশন স্কেল বন্ধ করুন। এটি ফোনের প্রসেসিং লোড কমায় এবং ব্যাটারি সাশ্রয় করে।
• ফোন আপডেট রাখুন: সর্বশেষ সফটওয়্যার আপডেটে ব্যাটারি অপটিমাইজেশনের উন্নতি থাকে। নিয়মিত ফোনের সফটওয়্যার আপডেট করুন।

আপনার অ্যান্ড্রয়েড ফোনের ব্যাটারি লাইফ বাড়ানোর জন্য উপরে উল্লিখিত ৭টি সেটিংস বন্ধ করা একটি কার্যকর উপায়। স্ক্রিনের উজ্জ্বলতা কমানো, লোকেশন সার্ভিস সীমিত করা, ব্লুটুথ-ওয়াই-ফাই স্ক্যানিং বন্ধ করা, পটভূমির অ্যাপ রিফ্রেশ নিয়ন্ত্রণ, অলওয়েজ-অন ডিসপ্লে বন্ধ করা, নোটিফিকেশন সীমিত করা এবং অপ্রয়োজনীয় অ্যাপ আনইনস্টল করা—এই ছোট ছোট পদক্ষেপগুলো আপনার ফোনের ব্যাটারি লাইফ উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়াতে পারে। এছাড়াও, অ্যাডাপটিভ ব্যাটারি এবং পাওয়ার সেভিং মোডের মতো ফিচার ব্যবহার করে আপনি আরও ভালো ফল পাবেন। এই টিপসগুলো নিয়মিত প্রয়োগ করলে আপনার ফোনের ব্যাটারি দিনের শেষে শূন্য হয়ে যাওয়ার সমস্যা অনেকাংশে কমে যাবে। তাই, আজই এই সেটিংস পরীক্ষা করে আপনার ফোনকে আরও দক্ষ এবং দীর্ঘস্থায়ী করুন!