বর্তমান যুগে ইন্টারনেট (Internet) মানুষের জীবনের একটি অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছে। কাজ, শিক্ষা, বিনোদন থেকে শুরু করে দৈনন্দিন জীবনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই ইন্টারনেটের ভূমিকা অপরিসীম। তবে ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য খরচের বিষয়টি অনেক দেশের মানুষের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য বিষয়। এই দিক থেকে ভারত বিশ্বের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় দেশ যেখানে ইন্টারনেট ব্যবহার করা সবচেয়ে সস্তা।
বিশ্বে ইন্টারনেট খরচের তুলনা
বিশ্বজুড়ে ইন্টারনেট পরিষেবার খরচ তুলনামূলকভাবে অনেক দেশে বেশি। উদাহরণস্বরূপ, আমেরিকায় ১ জিবি মোবাইল ডেটা ব্যবহারের গড় খরচ ৬ ডলার, যা ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৫০০ টাকার সমান। জাপানে একই পরিমাণ ডেটার জন্য গড় খরচ হয় ৩.৪৮ ডলার (প্রায় ২৯০ টাকা)।
এদিকে, ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাজ্যে ডেটা খরচ কিছুটা কম। সেখানে ১ জিবি ডেটার জন্য খরচ হয় গড়ে ০.৬২ ডলার (প্রায় ৫২ টাকা)। চীনে এই খরচ আরও কম—গড়ে ০.৩৮ ডলার (প্রায় ৩১ টাকা)। তবে সবার চেয়ে এগিয়ে রয়েছে ভারত, যেখানে ১ জিবি ডেটার খরচ মাত্র ০.১৬ ডলার (প্রায় ১৩ টাকা)।
কেন ভারতে ইন্টারনেট এত সস্তা?
ভারতে ইন্টারনেটের খরচ কম থাকার পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে:
1. তীব্র প্রতিযোগিতা:
ভারতীয় টেলিকম সেক্টরে প্রতিযোগিতা অত্যন্ত তীব্র। বিশেষত জিও-র মতো কোম্পানির আবির্ভাব এই প্রতিযোগিতাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। জিও তাদের সাশ্রয়ী ডেটা প্ল্যানের মাধ্যমে বাজারে একটি বড় ধরনের পরিবর্তন নিয়ে আসে। এর ফলে অন্যান্য টেলিকম কোম্পানিগুলোকেও তাদের মূল্য হ্রাস করতে বাধ্য হতে হয়।
2. বৃহৎ গ্রাহক সংখ্যা:
ভারতের মতো বিশাল জনসংখ্যার দেশে ইন্টারনেট পরিষেবার ব্যবহারকারী সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই বৃহৎ গ্রাহকভিত্তি টেলিকম অপারেটরদের জন্য কম মূল্যে পরিষেবা প্রদানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে।
3. প্রযুক্তিগত অগ্রগতি:
ভারতে ৪জি নেটওয়ার্কের দ্রুত বিস্তার এবং প্রযুক্তিগত অগ্রগতি সাশ্রয়ী মূল্যে ইন্টারনেট পরিষেবা নিশ্চিত করতে সাহায্য করেছে। টাওয়ার নির্মাণ থেকে শুরু করে নেটওয়ার্ক ব্যবস্থাপনায় খরচ কমে আসায় অপারেটররা গ্রাহকদের জন্য সস্তায় পরিষেবা দিতে সক্ষম হচ্ছে।
4. সরকারি নীতিমালা:
ভারত সরকার ডিজিটাল ইন্ডিয়া প্রকল্পের মাধ্যমে ইন্টারনেট সেবাকে প্রত্যেকের কাছে সহজলভ্য করতে উদ্যোগ নিয়েছে। পাশাপাশি, বাজারে প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ বজায় রাখতে সরকার নীতিমালায় সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।
সস্তা ইন্টারনেটের প্রভাব
ভারতে সস্তা ইন্টারনেটের কারণে দেশটির ডিজিটাল খাতে অভূতপূর্ব পরিবর্তন ঘটেছে। সাশ্রয়ী ডেটার ফলে শহর থেকে গ্রাম, সর্বত্র ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।
1. শিক্ষা ও কর্মসংস্থান:
সস্তা ইন্টারনেটের কারণে শিক্ষার্থীরা সহজেই অনলাইন শিক্ষা গ্রহণ করতে পারছে। পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিং ও স্টার্টআপ খাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে।
2. ই-কমার্স ও ডিজিটাল পেমেন্ট:
ই-কমার্স কোম্পানি এবং ডিজিটাল পেমেন্ট প্ল্যাটফর্মের ব্যবহার সস্তা ইন্টারনেটের ফলে ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। গ্রামীণ এলাকাতেও এখন অনলাইনে কেনাকাটা এবং ডিজিটাল লেনদেনের প্রচলন হচ্ছে।
3. বিনোদন ও যোগাযোগ:
ভারতীয়রা এখন বিনামূল্যে বা কম খরচে অনলাইন স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মে সিনেমা, সিরিজ ও খেলার আসর দেখতে পারছে। সস্তা ইন্টারনেট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহারও বহুলাংশে বাড়িয়ে তুলেছে।
যদিও সস্তা ইন্টারনেট ভারতের জন্য আশীর্বাদ, তবে এর কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। টেলিকম কোম্পানিগুলোর জন্য লাভজনকভাবে ব্যবসা পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। অনেক কোম্পানি প্রতিযোগিতার চাপ সামলাতে না পেরে বাজার ছেড়ে দিয়েছে।
ভারতে সস্তা ইন্টারনেটের কারণে ডিজিটাল বিপ্লব আরও এগিয়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। ৫জি নেটওয়ার্কের সম্প্রসারণ এবং নতুন প্রযুক্তির আগমন এ খাতে আরও উন্নয়ন ঘটাবে। তবে টেলিকম কোম্পানিগুলোর টিকে থাকার জন্য খরচ ও লাভের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ।
বিশ্বজুড়ে ইন্টারনেটের চাহিদা যেভাবে বাড়ছে, তাতে ভারত তার সাশ্রয়ী মডেলের মাধ্যমে অন্য দেশগুলোর জন্য একটি উদাহরণ হয়ে থাকবে।