iPhone exports record: আইফোন রফতানিতে ভারতের রেকর্ড

ভারত বর্তমানে বিশ্বে স্মার্টফোন রফতানির ক্ষেত্রে নিজেদের একটি শক্তিশালী অবস্থানে প্রতিষ্ঠিত করেছে। চলতি অর্থবছরের (এপ্রিল-সেপ্টেম্বর) প্রথম ছয় মাসে ভারত ৬ বিলিয়ন ডলার মূল্যের আইফোন (iPhone)…

India has set a remarkable record by exporting of iPhones in the first half of FY25, underscoring the country’s growing role in global tech manufacturing.

ভারত বর্তমানে বিশ্বে স্মার্টফোন রফতানির ক্ষেত্রে নিজেদের একটি শক্তিশালী অবস্থানে প্রতিষ্ঠিত করেছে। চলতি অর্থবছরের (এপ্রিল-সেপ্টেম্বর) প্রথম ছয় মাসে ভারত ৬ বিলিয়ন ডলার মূল্যের আইফোন (iPhone) রফতানি করে একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক স্পর্শ করেছে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের মতো বড় বাজারে একাই ২.৮৮ বিলিয়ন ডলার মূল্যের আইফোন রফতানি হয়েছে। এভাবে ভারতের প্রযুক্তি খাত আন্তর্জাতিক স্তরে দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে, যা ম্যানুফ্যাকচারিং এবং প্রযুক্তির উন্নয়নের ক্ষেত্রে ভারতের অবদানের প্রতিফলন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

প্রযুক্তি খাতে ভারতের উত্থান
বিশ্বজুড়ে ইলেকট্রনিক্স শিল্পে ভারতের অগ্রগতির অন্যতম প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে অ্যাপল সংস্থার উৎপাদন ও রফতানি কার্যক্রমে। অ্যাপল সম্প্রতি চীন থেকে ভারতসহ বেশ কয়েকটি দেশে তাদের উৎপাদন শাখা বিস্তৃত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যার প্রভাব ইতিমধ্যেই দেখা যাচ্ছে। প্রাথমিকভাবে ভারতীয় বাজারেই অ্যাপলের ফোন বিক্রির উদ্দেশ্যে শুরু হয়েছিলো উৎপাদন। তবে চাহিদা এবং উচ্চমানের মাননির্ভরতার কারণে ভারত থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে আইফোনের রফতানি বৃদ্ধির হার বেড়েছে।

   

রফতানির বর্তমান অবস্থা
ভারত থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি ইউরোপ ও এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে আইফোন রফতানি করা হচ্ছে। এর ফলে ভারত তার অভ্যন্তরীণ উৎপাদন সক্ষমতা ও প্রযুক্তিগত দক্ষতাকে আন্তর্জাতিক স্তরে প্রতিষ্ঠা করতে সমর্থ হয়েছে। গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো জানিয়েছে যে ভারত আইফোনের মোট উৎপাদনের প্রায় ১০% রফতানি করছে, এবং এই সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ফলে ভারতের রফতানির পরিমাণ শুধুমাত্র আর্থিকভাবে দেশের মুদ্রার সঞ্চয় বৃদ্ধিতেই সহায়ক নয়, বরং বিশ্ব প্রযুক্তি মানচিত্রে ভারতকে এগিয়ে রাখছে।

স্থানীয় বাজারে প্রভাব ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি
বিভিন্ন বহুজাতিক সংস্থা, বিশেষত অ্যাপল, ভারতে তাদের উৎপাদন বাড়ানোর ফলে ভারতের স্থানীয় বাজারেও প্রচুর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ, তামিলনাড়ু এবং কর্ণাটকের মতো রাজ্যগুলোতে নতুন নতুন কারখানা স্থাপন হচ্ছে, যেখানে আইফোন উৎপাদনের বিভিন্ন অংশ তৈরি করা হচ্ছে। এভাবে ভারতের প্রযুক্তি খাতে আরও বিনিয়োগ বাড়ছে। পাশাপাশি, এই বিনিয়োগ দেশে আধুনিক প্রযুক্তির পরিকাঠামোকে শক্তিশালী করছে এবং অন্যান্য প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোকেও ভারতমুখী হওয়ার অনুপ্রেরণা যোগাচ্ছে।

অর্থনৈতিক অবদান ও সরকারের প্রণোদনা
ভারত সরকারের পি.এল.আই (প্রোডাকশন-লিঙ্কড ইনসেনটিভ) স্কিম স্মার্টফোন উৎপাদনের ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি বড় উদ্দীপক হিসাবে কাজ করেছে। ২০২০ সালে এই স্কিম চালু হওয়ার পর থেকে উৎপাদন এবং রফতানি বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকারী প্রণোদনার ফলে ইলেকট্রনিক্স এবং স্মার্টফোন খাতে উৎপাদন ক্ষমতা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই স্কিমের আওতায় কোম্পানিগুলি কর রেয়াত, আর্থিক প্রণোদনা ও ট্যাক্সে ছাড় পাচ্ছে, যা তাদের উৎসাহিত করেছে ভারত থেকে আরও বেশি রফতানি করতে।

বিশ্ববাজারে ভারতের অবস্থান
চীন-ভারত বাণিজ্য প্রতিযোগিতা এবং বিশ্বে চীনের উপর নির্ভরতা কমাতে অ্যাপলের মতো সংস্থাগুলি ভারতের দিকে এগিয়ে এসেছে। ফলে বিশ্ববাজারে ভারত আরও গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান দখল করতে পারছে। রফতানির এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে, ভারতের ইলেকট্রনিক্স রফতানির পরিমাণ আগামী পাঁচ বছরে দ্বিগুণ হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। এর মাধ্যমে ভারত তার প্রযুক্তি দক্ষতা বিশ্বকে প্রদর্শন করতে পারবে এবং আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের কাছেও একটি নির্ভরযোগ্য রফতানিকারক দেশ হিসেবে পরিচিতি পাবে।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
ভারতের রফতানির এই বৃদ্ধি শুধু মাত্র অ্যাপলের মতো বৃহৎ সংস্থার উপরেই নির্ভর করছে না, বরং অন্যান্য ইলেকট্রনিক্স সংস্থার ভারতমুখী বিনিয়োগেও প্রভাব ফেলছে। প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারত সরকার প্রযুক্তি খাতে নতুন নীতি চালু করলে এবং আর্থিক প্রণোদনা বাড়ালে ভারত ইলেকট্রনিক্স উৎপাদনে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে আরো শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠবে।

অ্যাপল ছাড়াও অন্যান্য গ্লোবাল সংস্থাগুলি যদি ভারতের বাজারে উৎপাদনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করে, তবে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে ভারত চীনের পাশাপাশি বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ইলেকট্রনিক্স রফতানিকারক দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারবে।