নিরাপত্তার স্বার্থে বাড়িতে বাড়িতে ডিজিটাল নজরদারির ছক কেন্দ্রের

নয়াদিল্লি: আধার এবং ইউপিআই-এর পর এবার দেশের প্রতিটি বাড়ি ও জায়গার জন্য ডিজিটাল পরিচয় নম্বর (Digital House ID) চালুর পথে কেন্দ্র সরকার। লক্ষ্য, নাগরিক পরিষেবার…

Centre Plans Digital House ID for Every Home to Boost Security and Services

নয়াদিল্লি: আধার এবং ইউপিআই-এর পর এবার দেশের প্রতিটি বাড়ি ও জায়গার জন্য ডিজিটাল পরিচয় নম্বর (Digital House ID) চালুর পথে কেন্দ্র সরকার। লক্ষ্য, নাগরিক পরিষেবার মানোন্নয়ন ও তথ্যের সুরক্ষা নিশ্চিত করা। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই নতুন পরিকল্পনার নেপথ্যে রয়েছে আরও বড় এক উদ্দেশ্য— দেশব্যাপী নিরাপত্তা ও নজরদারির একটি সুসংবদ্ধ ডিজিটাল কাঠামো গড়ে তোলা।

ডিজিটাল ইন্ডিয়া মিশনের অংশ হিসেবে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে। কেন্দ্র বলছে, এর মাধ্যমে যেমন সুবিধা পাবে নাগরিকরা, তেমনই নিরাপত্তা ও নজরদারি ব্যবস্থাও হবে অধিকতর আধুনিক ও কার্যকর।

   

কী এই ডিজিটাল হাউস আইডি?
ডিজিটাল হাউস আইডি (DHI) হচ্ছে একটি ইউনিক নম্বর, যা দেশের প্রতিটি বসতবাড়ি, জমি, দোকান, অফিস বা অন্যান্য স্থাপনার সঙ্গে যুক্ত থাকবে। এই নম্বরের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট স্থানের সবরকম সরকারি ও নাগরিক তথ্য একটি কেন্দ্রীয় ডেটাবেসে সুরক্ষিত থাকবে।

তাতে থাকবে—

  • মালিকের নাম ও আধার নম্বর
  • ঠিকানা ও ভৌগলিক অবস্থান (geo-tag)
  • বিদ্যুৎ, জল, গ্যাস সংযোগের তথ্য
  • কর পরিশোধ ও লাইসেন্স সংক্রান্ত বিবরণ
  • নিরাপত্তার খাতিরে CCTV বা স্মার্ট নজরদারি ব্যবস্থার ডেটা

নাগরিক পরিষেবার উন্নতির পাশাপাশি নজরদারির শক্ত ভিত্তি
সরকারি আধিকারিকরা জানিয়েছেন, এই ডিজিটাল হাউস আইডি শুধু মাত্র সরকারি সুবিধা সহজে পৌঁছে দেওয়ার জন্যই নয়, বরং অপরাধ দমন, সন্ত্রাসবাদ রোধ এবং জরুরি পরিষেবা ব্যবস্থাকে আরও কার্যকর করে তুলতে বড় ভূমিকা নেবে।

বিশেষ করে সীমান্তবর্তী এলাকা, শহরের ঘন বসতিপূর্ণ অঞ্চল, অথবা দুর্বল নিরাপত্তার জায়গাগুলিতে ডিজিটাল নজরদারি চালানো সহজ হবে এই আইডি ব্যবস্থার মাধ্যমে। যে কোনও সন্দেহজনক চলাচল বা অচেনা ব্যক্তির উপস্থিতি দ্রুত শনাক্ত করা সম্ভব হবে।

তথ্য নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন
যদিও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নাগরিকদের গোপনীয়তা রক্ষায় সবরকম ব্যবস্থা নেওয়া হবে, তবু তথ্য সুরক্ষা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের একাংশ উদ্বিগ্ন। তাদের বক্তব্য, যেহেতু এই প্ল্যাটফর্মে বাড়ির মালিকানা থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত তথ্য ও ডিজিটাল ট্র্যাকিং ডেটা থাকবে, তাই কোনওভাবে তা ফাঁস হলে বা অপব্যবহার হলে তার পরিণতি মারাত্মক হতে পারে।

Advertisements

কেন্দ্রের আশ্বাস
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, এই পুরো প্রক্রিয়াটি হবে এনক্রিপ্টেড ও মাল্টি-লেয়ার নিরাপত্তা ব্যবস্থায় আবদ্ধ। শুধুমাত্র অনুমোদিত সরকারি আধিকারিকরাই এই তথ্য অ্যাক্সেস করতে পারবেন। নাগরিকের অনুমতি ছাড়া কোনও ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহার করা হবে না।

কোথা থেকে শুরু হবে এই প্রকল্প?
প্রথম দফায় দিল্লি, বেঙ্গালুরু, পুণে, হায়দরাবাদ-সহ কয়েকটি বড় শহরে এই ডিজিটাল হাউস আইডি চালু করা হবে পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে। পরবর্তীকালে গোটা দেশে পর্যায়ক্রমে এই পরিকল্পনা রোলআউট করা হবে।

স্মার্ট সিটি প্রকল্পের সঙ্গে মিলিয়ে বহু পুরসভায় ইতিমধ্যেই জিও-ট্যাগিং শুরু হয়েছে। সেই তথ্যকেই আরও পূর্ণাঙ্গ রূপ দেওয়ার লক্ষ্যেই ডিজিটাল হাউস আইডি।

বিশেষজ্ঞদের মতামত
সাইবার নিরাপত্তা ও শহর পরিকল্পনার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সঠিক প্রয়োগ ও যথাযথ আইন না থাকলে এই উদ্যোগ ভবিষ্যতে নাগরিক অধিকার ও গোপনীয়তার বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে। একদিকে যেমন এটি উন্নত নাগরিক পরিষেবা ও ডিজিটাল প্রশাসনের দিকনির্দেশ, তেমনই এটি নজরদারির এক অভূতপূর্ব অবকাঠামো তৈরি করতে চলেছে।

আধার ও ইউপিআই-এর সাফল্যের পর ভারত সরকার এবার দেশের প্রতিটি বাড়িকে ডিজিটাল সত্তা দিতে চলেছে। উদ্দেশ্য, পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া সহজ করা, তথ্যের সুরক্ষা নিশ্চিত করা এবং সর্বোপরি, দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তাকে আরও শক্তিশালী করা। তবে এই নয়া পদক্ষেপ নাগরিকের গোপনীয়তা এবং অধিকারকে কতটা সম্মান জানায়, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।