হুগলি, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫: পশ্চিমবঙ্গের শিল্পাঙ্গনে নতুন এক ইতিহাস রচিত হল হুগলির সুগন্ধায় (Bengali Industrialist)। বাঙালি শিল্পপতি শান্তনু ঘোষের নেতৃত্বে এবং তাঁর সহযোগী দুই মহিলা কর্ণধার সম্রাজ্ঞী ঘোষ ও সম্পূর্ণা ঘোষের হাত ধরে সুগন্ধায় গড়ে উঠেছে এক আধুনিক শিল্প কারখানা। ১২ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত এই কারখানা শুধুমাত্র শিল্প উৎপাদনই নয়, বাংলার অর্থনীতি ও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রেও নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে।
শনিবার এই কারখানায় আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন হল ‘টিফোজ ইলেকট্রিক থ্রি হুইলার’-এর। এই উপলক্ষে উপস্থিত ছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ, রাজ্যের মন্ত্রী জাভেদ খান, উজ্জ্বল বিশ্বাস-সহ আরও বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।
এই অনুষ্ঠানে কুণাল ঘোষের প্রস্তাবে শান্তনু ঘোষ ঘোষণা করেন, আগামী দিনে এই কারখানা থেকে উৎপাদিত হবে এক লাখ টাকার ইলেকট্রিক চার চাকার গাড়ি, যা বাংলার শিল্প ইতিহাসে এক নতুন মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হবে।
টিফোজের শিল্পযাত্রা বাঙালির গর্ব
সুগন্ধার এই কারখানা পরিচালিত হচ্ছে শান্তনু ঘোষের প্রতিষ্ঠান ‘সাইনোসোর কোম্পানি’র অধীনে। ইতিমধ্যেই এই সংস্থা তাদের উচ্চমানের বিএলডিসি ফ্যান উৎপাদনের মাধ্যমে বাজারে সাড়া ফেলেছে। গত দুই মৌসুমে এই ফ্যানের বিক্রি দুই লাখ ছাড়িয়েছে, যা বাঙালি শিল্পপতির উদ্যোগের সাফল্যের প্রমাণ।
শনিবার উদ্বোধিত ইলেকট্রিক থ্রি হুইলার বা টোটোও বাজারে এক নতুন বিপ্লব সৃষ্টি করতে প্রস্তুত। সম্রাজ্ঞী ঘোষ জানান, এই ইলেকট্রিক থ্রি হুইলার বাজারে প্রচলিত অন্যান্য গাড়ির তুলনায় অনেক কম দামে পাওয়া যাবে।
আধুনিক ডিজাইন, উন্নত প্রযুক্তি এবং সাশ্রয়ী মূল্যের সমন্বয়ে এই গাড়ি মধ্যবিত্তের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে বলে তিনি আশাবাদী।মধ্যবিত্তের কথা মাথায় রেখে উৎপাদনকারখানার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল এর সাশ্রয়ী উৎপাদন প্রক্রিয়া।
সাইনোসোর কোম্পানি তাদের পণ্যের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ বাইরে থেকে আমদানি না করে স্থানীয়ভাবে উৎপাদন করছে। এর ফলে উৎপাদন খরচ কমছে, যা পণ্যের দাম কম রাখতে সহায়তা করছে। সম্রাজ্ঞী ঘোষ জানান, এই ইলেকট্রিক থ্রি হুইলারের দাম মধ্যবিত্তের সাধ্যের মধ্যে রাখা হয়েছে। এছাড়া, গাড়ির চার্জিং প্রযুক্তি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যে, একবার চার্জে অন্তত ১৮ ঘণ্টা চলবে।
গুণগত মানের উপরও বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে। কারখানা থেকে প্রতিটি গাড়ি সরকারি মানের সার্টিফিকেট প্রাপ্তির পরই বাজারে ছাড়া হবে। এই কারখানা শুধু শিল্প উৎপাদনেই সীমাবদ্ধ নয়, এটি স্থানীয় অর্থনীতি ও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। কুণাল ঘোষ জানান, এই কারখানায় বর্তমানে ২০ জনের বেশি ইঞ্জিনিয়ার এবং দক্ষ ও অদক্ষ মিলিয়ে ২০০ জন কর্মী কাজ করছেন।
গ্রীষ্মকালে চাহিদা বৃদ্ধির সময় সাময়িক চুক্তিভিত্তিক কর্মী নিয়োগও করা হয়। ফলে এই কারখানা ধারাবাহিকভাবে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করছে। আগামী দিনে ইলেকট্রিক চার চাকার গাড়ির উৎপাদন শুরু হলে এই কর্মসংস্থানের পরিধি আরও বৃদ্ধি পাবে।
মহিলা ক্ষমতায়নের উজ্জ্বল উদাহরণ
কুণাল ঘোষ এই অনুষ্ঠানে মহিলা কর্ণধার সম্রাজ্ঞী ও সম্পূর্ণা ঘোষের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সবসময় মহিলা ক্ষমতায়নের উপর জোর দিয়েছেন। সুগন্ধার এই কারখানায় দুই মহিলা কর্ণধারের নেতৃত্বে শিল্প গড়ে ওঠা মহিলা ক্ষমতায়নের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তিনি বলেন, “একজন মহিলা কর্ণধার মঞ্চে দাঁড়িয়ে ইলেকট্রিক থ্রি হুইলারের প্রযুক্তি ও উৎপাদন প্রক্রিয়া বোঝাচ্ছেন—এর থেকে ভালো উদাহরণ আর কী হতে পারে!”
এক লাখ টাকার গাড়ি: নতুন স্বপ্ন
কুণাল ঘোষ এই অনুষ্ঠানে এক লাখ টাকার ইলেকট্রিক চার চাকার গাড়ি উৎপাদনের প্রস্তাব দেন, যা শান্তনু ঘোষ গ্রহণ করেন। তিনি জানান, ২০২৬ সালের জানুয়ারি থেকে এই গাড়ির উৎপাদন শুরু হবে। এই উদ্যোগ বাংলার অর্থনৈতিক মানচিত্রে আমূল পরিবর্তন আনবে এবং বহু বেকার যুবক-যুবতীর জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে।
কুণাল আরও বলেন, “সিঙ্গুরে ন্যানো কারখানা না হওয়ার আক্ষেপ এই উদ্যোগের মাধ্যমে মিটবে। রাজ্য সরকার এই কারখানা গড়তে সর্বতোভাবে সহায়তা করবে।”সিঙ্গুরের পটভূমি ও নতুন আশাসিঙ্গুরের ন্যানো কারখানা বিতর্কের কথা উল্লেখ করে কুণাল ঘোষ বলেন, “সিঙ্গুরের ঘটনা ছিল জমি নিয়ে বিতর্ক, শিল্প নিয়ে নয়।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কখনও শিল্পের বিরোধী ছিলেন না। তিনি শুধু তিন ফসলি কৃষি জমি জোর করে অধিগ্রহণের বিরোধিতা করেছিলেন।” তিনি জানান, সুগন্ধার এই কারখানা বাংলার শিল্পের ইতিবাচক দিক তুলে ধরছে। এই উদ্যোগ বাঙালির শিল্প-স্বপ্নকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে।
সুগন্ধার এই কারখানা বাংলার শিল্প, কর্মসংস্থান ও মহিলা ক্ষমতায়নের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। শান্তনু, সম্রাজ্ঞী ও সম্পূর্ণা ঘোষের নেতৃত্বে এই উদ্যোগ বাঙালির শিল্পপ্রতিভাকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরবে। আগামী দিনে এক লাখ টাকার ইলেকট্রিক চার চাকার গাড়ির উৎপাদনের মাধ্যমে বাংলা শিল্পের ক্ষেত্রে আরও একটি মাইলফলক স্থাপন করবে।